খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী গুরপতবন্ত সিং পান্নুর বিরুদ্ধে আমেরিকার দাবি নিয়ে বড় বিবৃতি দিল ভারত। ভারতের শত্রু ও খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী গুরপতবন্ত সিং পান্নুকে নিয়ে বড় দাবি করেছে আমেরিকা। আমেরিকা দাবি করেছে আমেরিকার মাটিতে ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে আমেরিকার মাটিতে খুনের ছক কষা হয়েছিল। যদিও আমেরিকা সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। পান্নুনকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবির পরিপ্রেক্ষিপ্তে ভারত বলেছে যে তারা আমেরিকার দেওয়া তথ্যকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে। আমেরিকা এমন সময়ে ভারতকে এই তথ্য দিয়েছে যখন গুরপতবন্ত সিং পান্নুকে হত্যার চেষ্টা সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে একটি ব্রিটিশ পত্রিকায়।
খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী গুরপতবন্ত সিং পান্নুর বিষয়ে আমেরিকার দেওয়া তথ্যকে ভারত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ নিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছে ভারত। ভারত বুধবার বলেছে যে এটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনপুটগুলিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। ব্রিটিশ মিডিয়া রিপোর্টের প্রশ্নের জবাবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, 'ওয়াশিংটন কিছু তথ্য শেয়ার করেছে। ভারতের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো খতিয়ে দেখছে'। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা গুরুত্বসহকারে দেখছে ভারত, কারণ এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেও প্রভাব ফেলছে।
অরিন্দম বাগচি বলেছেন, “ ভারত এই ধরনের তথ্যকে গুরুত্ব সহকারে নেয় কারণ এটি আমাদের নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকেও প্রভাবিত করে"। ব্রিটিশ মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে আমেরিকা দেশের মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিয়েছে। কর্মকর্তার মতে, আমেরিকান কর্মকর্তারা এই বিষয়ে নয়াদিল্লির কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে সম্ভবত ভারত সরকার এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে।মার্কিন কর্মকর্তার মতে, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফবিআই) বিষয়টি তদন্ত করছে। এফবিআই এবং বিচার বিভাগের মুখপাত্র বুধবার মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
আমেরিকা ভারতের সঙ্গে কথা বলেছে
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সঙ্গে কথা বলা এই কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তারা ভারত সরকারের কাছে ইতিমধ্যেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এবং এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি এবং মার্কিন সরকার ভারত সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছে। আমাদের ভারতীয় প্রতিপক্ষরা এ নিয়ে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ভারত সরকার ২০২০ সালে পান্নুকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করেছিল এবং বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (UAPA) এর অধীনে তার কৃষি জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়। খালিস্তানি জঙ্গি পান্নুর বিরুদ্ধে ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সহ ২০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। SFJ হল শিখদের জন্য আলাদা দেশ-খালিস্তান দাবি করা একটি সংগঠন এবং সন্ত্রাসী পান্নু ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
এর আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কানাডা-ভিত্তিক খালিস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার সাথে ভারতীয় এজেন্টদের সম্ভাব্য যোগসূত্র সম্পর্কে যে দাবি করেছিলেন, দিল্লির প্রতিক্রিয়া ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেপ্টেম্বরে ট্রুডোর মন্তব্যর পরিপ্রেক্ষিপ্তে বিদেশ মন্ত্রক এই অভিযোগগুলিকে "অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত" বলে অভিহিত করেছে। অটোয়াতে অবস্থানরত ভারতীয় কূটনীতিককে কানাডা বহিষ্কার করার পর, দিল্লি নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত কানাডিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। ভারত তারপরে কানাডায় ভ্রমণকারী ভারতীয় নাগরিকদের জন্য একটি ভ্রমণ পরামর্শ জারি করেছে এবং ছাত্র, পেশাদার এবং পর্যটকদের সতর্ক করে। পাশাপাশি কানাডার নাগরিকদের ই-ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে বুধবার ই-ভিসা বুধবার পুনরায় শুরু করা হয়।
কানাডাও নয়াদিল্লিতে তার হাই কমিশন থেকে ৪১ জন কূটনীতিককে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রক কানাডাকে "সন্ত্রাসবাদী, চরমপন্থী এবং সংগঠিত অপরাধের" জন্য "নিরাপদ আশ্রয়স্থল" হিসাবে বর্ণনা করেছে। অন্যদিকে মার্কিন দাবির প্রেক্ষিপ্তে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে , “ভারত তার এই ধরনের ইনপুটগুলিকে গুরুত্ব সহকারে নেয় কারণ এটি আমাদের নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকেও প্রভাবিত করে। মার্কিন ইনপুটগুলির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি ইতিমধ্যেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছে, "। কানাডার ক্ষেত্রে, ট্রুডো ভারত সরকারের দিকে সরাসরি আঙুল তুলেছিলেন। যখন মার্কিন ক্ষেত্রে, ভারত সরকারকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়নি। সেই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান একেবারেই ভিন্ন।