কেরলে ঘুরতে বা কাজের সূত্রে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে তা বাতিল করুন আজই। নিপা ভাইরাসের প্রকোপে কেরলে মৃত্যু হল আরেক জনের, সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১। শুধু কেরলে নয়, নিপা ভাইরাসের কোপ পড়েছে কর্নাটক এবং হিমাচল প্রদেশেও। তবে এখনই ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এরাজ্যে নিপা ভাইরাসের সংক্রমন না হলেও রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর ইতিমধ্যেই নিয়েছে আগাম পদক্ষেপ। শুরু হয়েছে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর। কেরল থেকে ফিরবেন বা ফিরেছেন এমন ব্যক্তিদের নাম ও বিশদ বিবরণ তালিকাভুক্ত করে যত শীঘ্রই সম্ভব স্বাস্থ্য দপ্তরকে জমা দিতে হবে। অন্যদিকে, এঁদের মধ্যে জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পেলে নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে।
নিপা ভাইরাস নিয়ে ইতিপূর্বে আতঙ্ক ছড়িয়েছে রাজ্যে। সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ জেলার এক যুবক জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বর না কমায় নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। প্রাথমিক চিকিৎসা অনুযায়ী সন্দেহ করা হয়েছিল তিনি আক্রান্ত হয়েছেন নিপা ভাইরাসে। তবে এখন অবধি সেভাবে কিছু প্রকাশ্যে আসেনি। তবে এতেই শেষ নয়, ফের অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলার আরও এক যুবক নাম আশিক মন্ডল। কেরলে গিয়েছিল রাজমিস্ত্রীর কাজ নিয়ে। সেখান থেকে জ্বর নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। বর্তমানে বেলেঘাটা আই .ডি হাসপাতালে চিকিত্্সাধীন রয়েছেন এই যুবক। তবে এখনও অবধি জানা যায়নি নিপা ভাইরাস নাকি অন্যকোনো রোগে আক্রান্ত রয়েছেন বছর কুড়ির আশিক মন্ডল।
নিপা ভাইরাস এড়াতে যা করবেন :
১) হূ বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই নতুন ভাইরাস মানুষ ও পশুদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সুতরাং গৃহপালিত পশুকে সাবধানে রাখুন, এবং আপনি নিজে পশুদের থেকে দূরে থাকার চেষ্ট করুন ।
২) নিকটবর্তী গাছে বা কোনো অন্ধকার স্থানে বাদুড়ের আনাগোনা থাকলে সেখান থেকে দুরত্ব বজায় রাখুন। বাদুড় যেখানে ঝুলে থাকে সেখানে তাদের লালা পড়তেই পারে। বাদুড়ের এই লালায় নিপা ভাইরাসের জীবাণু থাকে। ফলে বাদুড়ের থেকে খুব সহজেই সংক্রমন ছড়াতে পারে।
৩) গরমকালে ফলের রাজা আম। কিন্ত বিশেষজ্ঞদের মতে এই সময় আম না খাওয়াই ভালো। শুধু আম নয়, কলা, খেজুর, অ্যাভোকাডো, সবেদা থেকেও দশ হাত দূরে থাকুন। কারণ যে ফলের খোসা পাতলা, সেই ফল সহজেই খেতে পারে বাদুড়। এছাড়া মাটিতে পড়ে যাওয়া আধ খাওয়া ফল খাবেন না, এমন কি ধরবেনও না। অন্যান্য় ফল খাওয়ার সময় ধুয়ে খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।
নিপা ভাইরাসের সম্ভাব্য উপসর্গ :
১) জ্বর, মাথা ব্যাথা, ঘুম বেড়ে যাওয়া
২) আক্রান্ত হওয়ার পরই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেবে। এছাড়া, আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে শ্বাস কষ্ট হতে পারে।
ড: অমিতাভ নন্দী জানিয়েছেন নিপা ভাইরাসের উপসর্গ অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের মতই। তাই এই মুহুর্তে জ্বর হওয়া মানেই তা নিপা ভাইরাস হবে এমন আশঙ্কা করার কোন কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, খেজুরের গাছে রসের হাঁড়িতে বাদুড়ের আনাগোনা দেখা যায়। তাই আপাতত খেজুরের রস না খাওয়াই ভালো। গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ফল দেখলে তা রাতারাতি সরিয়ে ফেলা উচিত। তবে তা যথাযথ সুরক্ষা অবলম্বন করে তবেই করবেন। ওই পড়ে থাকা ফলে জীবজন্তু মুখ দিলে তাদের থেকে ছড়াতে পারে নিপা ভাইরাস।
নিপা ভাইরাসের মত স্বাভাবিক উপসর্গ দেখা যায় অনেক রোগেই। ড: সুমনা কাঞ্জিলালের মতে ভাইরাস চেনা যায় না সহজে। সেই কারণে সবরকমভাবে সতর্ক থাকা উচিত।