শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসের জেরেই দেশে কয়েক মাসে বদলেছে চিত্র। তা সে অর্থনীতি হোক কিংবা দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। এরই মধ্যে নতুন শিক্ষানীতি, কৃষি বিল এনেছে মোদী সরকার। যা নিয়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে মুখর হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিরোধীরাও। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়েই দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকার দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
ছ'মাস আগে থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে, কতটা বদল দেখলেন?
আমরা প্রত্যেকে এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি যা কোনওদিন কখনও দেখা যায়নি। তাই প্রথমেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে। একদম নিচু স্তরে কী সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে তা শুনতে হয়েছে। এখন পরিবর্তনগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছি। এই ছ'মাসে চ্যালেঞ্জ কিন্তু এতটুকু কমেনি, কেবলমাত্র চ্যালেঞ্জের প্রকৃতি বদলেছে মাত্র। মন্ত্রকগুলি এখন অনেক দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। কারণ ছ'মাসে অনেকটাই বুঝতে পেরেছি কী পরিস্থিতি, কী করণীয়। সেই মতোই কাজ হচ্ছে।
এখনও দেশে করোনার বিস্তার রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে উদ্বেগ কিছুটা হলেও কমেছে বলে আপনার মনে হয়?
না এখনই এ বিষয়ে পুরোটা বলা সম্ভব নয়। করোনা রুখতে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আরও অনেকদিন চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি এখন এই প্রেক্ষিত থেকেই দেখছি ব্যাপারটা যে আরও কতদিন চলবে। সকলে কিন্তু আমরা নিজের থেকেই মাস্ক পরছি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি, হাত ধুয়ে ফেলছি। কারণ আমরা জানি না কবে ভ্যাকসিন পাব। এর মধ্যে পুন:সংক্রমণের খবরও আসছে। ফলে যেটা হয়েছে ছোট এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের মনে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কর্মীদের স্বাস্থ্য, কীভাবে আগের মতো কাজের পরিবেশ তৈরি করা যাবে তা নিয়ে তাঁরাও চিন্তিত। একটাই ভাল খবর তা হল গ্রামাঞ্চলে করোনা এতটা ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। তাই কাজের পরিবেশ ফিরে এসেছে সেখানে যা অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক।
কর্পোরেট সেক্টরের তরফে কী জানান হয়েছে আপনাকে?
২৬ সেপ্টেম্বর তিনটের সময় ইন্ডাস্ট্রির একজন শীর্ষ নেতা আমায় ফোন করেছিলেন। তিনি ভারতে না থাকলেও তাঁর ইউনিট এখানে রয়েছে। আমি এখানকার ইন্ডাস্ট্রি থেকে যা জানতে পেরেছি সেটা যখন ওনাকে বললাম উনি জানালেন যে কথা মিলে গিয়েছে। সেটাই উনি ওঁর ইউনিটকে জানাবেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। শ্রমিকরা কাজে যোগদান করছে। ইন্ডাস্ট্রিও বিনিয়োগ করা শুরু করছে। কয়েকটি কোর ইন্ডাস্ট্রি থেকে খবর পেলাম যে চিনে আমাদের দেশের স্টিলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও টেক্সাইল শিল্পও ধীরে ধীরে সর্বাধিক কর্মক্ষমতা নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্র তো খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে!
তা ঠিক। হসপিটালিটি, হোটেল, টুরিস্টস স্পট এই ক্ষেত্রটি খুব খারাপভাবে ক্ষতির মুখ দেখেছে। তবে এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়া শুরু করেছে। আশা করি উৎসবের মরসুমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় উইকেন্ড ডেস্টিনেশনগুলিতে এখন অনেকেই এক দু'দিনের জন্য ঘুরে আসছে। মিলিয়ে মিশিয়ে সকলেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন এমন উচ্চপদস্ত আধিকারিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। লকডাউনে যে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছিল তার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার কিছু ব্যয় করতে রাজি নয়, কেন?
হ্যাঁ, আপনারা ঠিকই শুনেছেন। আমি নিজেও তেমন কয়েকটি মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা সেখানে ছিলেন। ক্রস সেকশন হয়েছে। অনেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত বিবৃতিও জমা দিয়েছেন যা পরবর্তীতে আমার কাছে পাঠানো হয়েছিল। আত্মনির্ভর প্যাকেজটিতে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য অনেকগুলি পৃথক জিনিস রয়েছে ... এটি এমন নয় যে আমরা যা ঘোষণা করেছি তা ২৪ ঘন্টার মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনও চালু রয়েছে। আমরা এমএসএমই সেক্টরে এর থেকে সুযোগ নিয়ে তা দিয়েছি। এনবিএফসির ফান্ডিং বাড়ানো হয়েছে, যাতে ব্যাঙ্কের সুবিধা হয়। কৃষকদের সাহায্য করতে পেরেছি। এই অর্থ দিয়ে কীভাবে পুরো কাঠামোকে নতুন করে তৈরি করা যায় সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তবে সরকারের ব্যয় নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠছে তা হল জন ধন অ্যাকাউন্টের বিষয়ে। ওখানে কোনও ব্যয় হচ্ছে না?
আপনি যদি জুন মাসের হিসেব দেন তাহলে আপনার কথার সঙ্গে আমি সহমত পোষণ করছি। কিন্তু এখনের সঙ্গে নয়। কৃষকদের কিন্তু অতিরিক্ত ২০০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তা না হলে গ্রামাঞ্চলে অর্থনীতি শক্ত হত না। তাঁরা শস্যদানা, বীজ, ওষুধ এগুলি কিনতে পারত না টাকা ছাড়া। মানুষ তো বলছে গ্রামাঞ্চলে তাঁদের ব্যবসা ভাল চলছে।
আপনি কোন ক্ষেত্রটি নিয়ে এই মুহুর্তে ভাবছেন? কোন জায়গায় আপনি হস্তক্ষেপ করতে চান?
আমি ব্যাঙ্ক এবং তাঁদের রিপোর্টের দিকে লক্ষ্য রেখে চলেছি। এটা জানা খুব প্রয়োজন ঋণ ঠিক কারা নিচ্ছেন? কৃষক, শিক্ষার্থী, বাড়ির ঋণ? যখনই সেই ছবি সামনে আসবে একটা সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। সেই বিশ্লেষণ এখন চলছে।
কৃষি বিল নিয়ে যে এত বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে আপনি অবাক হননি?
না, আমি অবাক হয়নি। বরং আশাগত হয়েছি এটা দেখে যে কীভাবে ভুল ব্যাখ্যা চলছে। শুধুমাত্র স্টেকহোল্ডারদের থেকেই নয়, সাংসদদেরও মতামত নেওয়া হয়েছিল। আমি কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরকে সাধুবাদ জানাবো কারণ তিনি সকলের সঙ্গে কথা বলে, মতামত নিয়ে মন্ত্রীসভায় এই বিলটি নিয়ে আসেন।
সম্প্রতি একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট হ'ল নতুন সিবিআই। সুশান্ত সিং রাজপুত মামলায় সেটা আমরা কিন্তু দেখতে পাচ্ছি।
আমি কোন একটি বিশেষ মামলার প্রেক্ষিতে মন্তব্য করছি না। তবে এটি এমন একটি সময় যেখানে আমাদের এটিও বুঝতে হবে, অর্থ পাচারের বিষয়টি নিয়ে খুব গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। এখন মূলত, ইডি কী নিয়ে কাজ করে? এটি পিএমএলএ-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, যা স্পষ্টতই অর্থ পাচারের মামলা। মনে রাখতে হবে ইডি নিজে কিন্তু কোনও মামলা দায়ের করতে পারে না। এটি এমন একটি মামলা হতে হবে যা সিবিআই পরিচালনা করছে। সেখানে যদি কোনও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে থাকে সেক্ষেত্রে তা ইডির কাছে আসে। হ্যাঁ আমি মানছি সম্প্রতি ইডির কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
সুশান্ত সিং মামলায় আসছি। ইডির কাছে কিন্তু প্রথম ফোনটি যায়। কিন্তু অভিনেতার বাবার অভিযোগ করা টাকা সরানোর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই মামলায় যুক্ত হয় এনসিবি। কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে... (প্রশ্ন থামিয়ে)
এই বিষয়টি নিয়ে আমি বিশেষ কিছুই জানি না। কোনও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কতটা মনোযোগ দেওয়া উচিত তা পুরোপুরি এজেন্সিগুলির হাতে। আপনি এখানে কেন অতিরিক্ত কাজ করছেন তা আমি তাঁদেরকে বলতে পারি না? আপনি এখানে বাড়াবাড়ি করছেন কেন? আমি এটাও বলতে পারি না। আমি সেই মন্ত্রী নই যে নিজের চেয়ারে বসে কেবল নির্দেশ দিয়ে যাব। একেবারেই না। পেশাগতভাবে কাজ করার স্বাধীনতা থাকা উচিত।
কিন্তু দিল্লি দাঙ্গার কথাই ধরা যাক এজেন্সিগুলি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে? আদর্শের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা চার্জশিট করেছে। এটি সম্ভবত প্রথম দাঙ্গার ঘটনা যেখানে বিতর্ক, বিক্ষোভকে সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। যখন নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদদের প্রশ্ন করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে আশঙ্কা রয়েছে যে বিজেপি-বিরোধী হলেই নাম অভিযোগ পত্রে যোগ করা হবে। আপনি এটা কিভাবে দেখছেন?
যুব সমাজের স্বাধীনতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। আমি নিজেও জেএনইউ-এর অংশ ছিলাম। নির্দিষ্ট কোনও বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। ছাত্র বিক্ষোভ, বড় আকারের প্রতিবাদ এর আগেও হয়েছে। নাগরিক সমাজ তা নিয়ে মুখরিতও হয়েছে। এবার আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করছি। এখন যখন প্রতিবাদ হয় তখন সরকার বিরোধী একটা পরিমণ্ডল তৈরি করা হয়। এখনের প্রতিবাদ অনেকটা গিল্টি করা প্রতিবাদ। অনেক আন্তজার্তিক মানুষদের সেখানে যোগদান করানো হয় সেই পরিমন্ডলটিকে আরও বৃহত্তর করার উদ্দেশ্যে।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হলেও আমরা কিন্তু আদালতে বিশ্বাস করি। সেই কারণে ২৬/১১-এর মুম্বাই হামলার চক্রী হাতে নাতে ধরা পড়ার পরও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা থেকে শেষ পর্যায় পর্যন্ত যথাযথ প্রক্রিয়াটিকে নিশ্চিত করা হয়েছিল। কারণ আমরা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিশ্বাস করি।
এই যে বলা হচ্ছে যে বিজেপি-বিরোধী হলেই আক্রমণ করা হচ্ছে এটা মানতে অসুবিধা। সরকারের বিরুদ্ধে দেশের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনেকেই সোচ্চার হচ্ছেন। আপনি আমাকে বলুন তো সে সাংবাদিক হোক কিংবা লেখক, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে, কিংবা বিজেপি অথবা কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখার জন্য তাঁকে আটক হতে হয়েছে বাঁ চার্জশিট পেশ হয়েছে এমন উদাহরণ দিন? আমি আপনাকে অ-বিজেপি রাজ্যগুলির নাম দিচ্ছি, যেখানে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, এমন অনেকজন প্রতিবাদকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভিতরে আটকেও রাখা হয়েছে।
মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কেরল কম ঘটনা হচ্ছে না। তখন মোদীকে নিয়ে শুরু হচ্ছে। আর এই যে সারা দেশে ৮৩ কোটি মানুষ বিনামূল্যে খাবার পাচ্ছে, এটির জন্য মোদীর ধন্যবাদ প্রাপ্য নয়। লকডাউনের সময় দরিদ্ররা সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে ১৫০০ টাকা পেয়েছে, কোনও মধ্যস্থতাকারী নেই। তার জন্য মোদীকে ধন্যবাদের দরকার নেই।
কিন্তু সমালোচকদের দেশদ্রোহী বলা?
একটু বুঝে নিন বিষয়টা। কেন কেউ কারওকে দেশদ্রোহী বলবে? এখনও পর্যন্ত আমরা এটা করছি? না। বলা উচিতও নয়। কিন্তু সমস্যা হল আমরা আমাদের সিস্টেমকেই বিশ্বাস করি না। বেশ কিছু মানুষ যারা যুব সম্প্রদায়ের নেতা তাঁরা এমন বেশ কিছু কাজ করে চলেছেন। কিন্তু তাঁরা কখনই বলছে না যে ওমুকে যদি নির্বাচিত হন তাহলে আমি দেশ ছেড়ে চলে যাব। কিংবা আমার এই দেশে থাকতে ভয় করছে অথবা এই দেশে আমি আর থাকব না। আমার বউ-বাচ্চা নিয়ে আমি চলে যাব ওমুক লোক নির্বাচিত হলে। আমি তাঁদের বলব দেখুন এখন ওমুকে তো নির্বাচিত হয়েছেন তাহলে কেন দেশ ছাড়ছেন না? আসলে আমরা এই দেশের চুপ করে থাকার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এখন সবাই রাজা। সবাই সব বিষয়ে মন্তব্য রাখেন। কারণ এই দেশ সবটাই মেনে নেয়।
আপনার দল ছ'বছর ক্ষমতায় রয়েছে। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী। সমালোচক থাকবে, প্রতিবাদ থাকবে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা মানে তো এই নয় যে আপনি সবাইকে একই রঙে রাঙিয়ে দেবেন?
আমি প্রথমেই দেখব কে এই রাঙিয়ে তোলার কাজ করছে। যদি আমাদের মধ্যে থেকেই কেউ রিমোটলি এই কাজ করে তাহলে তাঁকে সামনে আনা হবে। সেক্ষেত্রে আমি সকলের সামনে দাঁড়িয়ে বলব, হ্যাঁ দু:খিত একটা ভুল হয়েছিল। কেউ বলুন যে আমি এই কাজ করেছি কি না? আমি এটাও জানতে চাইব কখন করেছি। সিএএ তো একদম ক্লাসিক উদাহরণ। বাইরে বলা হচ্ছে যারা সংখ্যালঘু তাঁদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে মোদী সরকার। আমাকে দেখান এখনও পর্যন্ত অ-হিন্দু একজনেরও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে কি না?
কিন্তু একটা ভয় তো ছিল।
আপনিই বলুন সিএএ-এর কোনও দিক আদৌ ভীতিপ্রদর্শক ছিল কি না? আপনি আপনার কল্পনাকে কেবল আমার দিকে নিক্ষেপ করছেন। এক্ষেত্রে আমি কী উত্তর দেব? আমি সংসদের মধ্যে এবং সংসদের বাইরেও বলেছি যে আমাকে দেখান সিএএ-এর কোন দিকটি ভীতি তৈরি করছে?
যারা মুসলিম তাঁরা জানেন যে শাসক দলের অন্দরে তাঁদের কোনও প্রতিনিধি নেই, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের নিয়েই কথা বলছেন, যে সময় তাঁরা ভারতে এসেছেন তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিলটিতে, এরই মধ্যে একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এল যেখানে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হচ্ছে। ভয় তৈরি হবে না?
এটাই আমি বলতে চাইছি। পাঁচ বছর, দশ বছর, পঁচিশ বছর আগে যাই হোক না কেন মোদী সরকার চাইছে তার নিষ্পত্তি ঘটাতে। কিন্তু বিরোধীরা গোপনে ক্ষতিসাধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারকে তো মানুষই নির্বাচিত করেছে। একদম সলিড ভোট। সংখ্যাগরিষ্ট সরকার। বিরোধীরা কী চাইছে যে এই দেশের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করার জন্য যা কিছু হোক করব। আসলে ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয় থেকে অন্য আরেক ভীতি তৈরির চেষ্টা করছে। লড়াই করতে হলে সংসদে লড়াই করুন। যেখানে মনে হচ্ছে মানুষ ভয় নিয়ে রয়েছে সেই জায়গাগুলি নিয়ে সোচ্চার হোন সংসদে, জিজ্ঞাসা করুন। কিন্তু এভাবে চেপে দেওয়া ঠিক নয়। বিরোধী পক্ষকেও তো সমান ভূমিকা পালন করতে হবে। বিজেপি যখন বিরোধী শিবির ছিল তখন তো তাঁরা প্রশ্ন তুলেছে মানুষের জন্য কারণ তাঁরা দায়িত্বশীল ছিল। আর কংগ্রেস এবং তাঁদের নেতৃত্বের কারণে বিরোধী দলের ভূমিকাটি নিতে পারল না। বরং আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ছে।
সংখ্যার বিচারে কিন্তু আপনাদের বিরোধী শিবির অনেক দুর্বল।
হতে পারে কংগ্রেসের সংখ্যা কম কিন্তু অন্যান্য দলও তো রয়েছে। একটা সময় সুষমাজি (স্বরাজ) , অরুণ জেটলিজি-রা রাজ্যসভায় চুম্বকের মতো কাজ করতেন। তখন কিন্তু বিরোধী শিবিরে বিজেপি। কিন্তু ছোট ছোট দলেরাও এসে বলত চলুন একসঙ্গে আজ প্রশ্ন করব। কিন্তু কংগ্রেসের সেই ব্যাপারটাই নেই। এরপর সরকারের নামে দোষারোপ করে বলবে আমরা প্রশ্নোত্তর পর্বে যোগদান করতে বাঁধা দিচ্ছি। এটা অনুচিত। গণতন্ত্রে বিরোধীদেরও তো সমান ভূমিকা নিতে হবে।
আমার মনে হয় কংগ্রেস এই মুহুর্তে সুবর্ণ সুযোগ হারাচ্ছে। কয়েক দশক ধরে যে দল ক্ষমতায় ছিল তা সংসদে কতটা ক্ষমতাশীল সেটা দেখানোর সুযোগ হারাচ্ছে। জনগণের জন্য তো ভাবতে হবে। বিরোধী দল এখন ভাবছে জনগণ জানে যে দায়িত্বশীল দল রয়েছে যে জানে কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে হয়। তাই আমরা বিরোধী দলে বসে সরকারকে সবরকমভাবে হেনস্তা করতে চেষ্টা করব। এটা তো ঠিক নয়।
অনুবাদক: পল্লবী দে
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন