‘বিয়েতে গান্ধীজির উপহার দেওয়া রুমাল দেখিয়েছিলেন’! শোকবার্তায় এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চলে গেলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এমনটাই জানানো হয়েছে বাকিংহোম প্যালেসের তরফে। আর এহেন ঘোষণার পরেই শোকের ছায়া বিশ্বজুড়ে। ৭০ বছর ধরে ব্রিটেনের রানি হিসাবে ছিলেন তিনি। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রয়াণে শেষ হল ব্রিটিশ রাজ পরিবারের একটা অধ্যায়। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লিখলেন, রানির ‘উষ্ণতা এবং উদারতা’ কখনও ভুলব না।
বৃহস্পতিবার টুইটারে প্রধানমন্ত্রী লিখলেন, ‘২০১৫ এবং ২০১৮ সালে যখন ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য সফরে গিয়েছিলাম, তখন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে স্মরণীয় সাক্ষাৎ হয়েছিল। আমি কখনও তাঁর উষ্ণতা এবং উদরতার কথা ভুলব না। একটি সাক্ষাতে তিনি বিয়েতে মহাত্মা গান্ধীর দেওয়া রুমাল আমায় দেখিয়েছিলেন। সারা জীবন সেই কথা মনে রাখব।’
উদ্বেগটা সকাল থেকেই ছিল। বিকেল গড়াতেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে ফোন করলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যক্তিগত সচিব। ফোনের ওপার থেকে বললেন, ‘দ্য লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন।’ যে প্রথাগত বক্তব্যের অর্থ প্রয়াত হয়েছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আগেই বাকিংহাম প্যালেসের তরফে এই কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রানি ছিলেন স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্যালেসে। চিকিৎসকদের পরামর্শে বৃহস্পতিবার সেখানেই চলে যান প্রিন্স চার্লস, প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা। পরে রাজবাড়ির তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানো হয়, ‘রানি বিকেলে মারা গিয়েছেন।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শোকবার্তা আসতে শুরু করেছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং বিট্রেনের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তিনবার ভারত সফরে আসেন । তিনি ১৯৬১ , ১৯৮৩ এবং ১৯৯৭ সালে ভারত সফর করেন । তার ভারতীয় সফরের অংশ হিসেবে, রানী এলিজাবেথ দিল্লি, আগ্রা, চেন্নাই এবং মুম্বাই শহর পরিদর্শন করেন। ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে তাজমহলের অপার সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করেন। জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার জন্য তিনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
নিজাম নবাব মীর উসমান আলি খান রানি এলিজাবেথকে বিবাহের উপহার হিসেবে দামি হিরের একটি নেকলেস উপহার দেন। ১৯৪৭ সালে রাণী যখন তিনি বিয়ে করেন, তখন নিজাম নবাব, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাণীকে ব্যয়বহুল উপহার দেওয়ার কথা বিবেচনা করেন । রাজপরিবারের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয় হীরেয় মোড়ানো প্ল্যাটিনাম নেকলেসটি রানির খুবই পছন্দের ছিল। নিজাম নবাবের উপহার হিসাবে দেওয়া নেকলেসটিতে প্রায় ৩০০ হীরে বসানো ছিল। এটির মূল্য ছিল ৬৬ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি। রা্নি দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রায়ই এই নেকলেসটি পরতেন। দুর্লভ এই নেকলেসটি 'দ্য কুইনস অ্যাকসেশন' প্রদর্শনীতেও দেখানো হয়।
শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এক শোকবার্তায় লেখেন, "ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে বিশ্ব একজন মহান ব্যক্তিত্বকে হারাল। তিনি সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের দায়িত্ব সামলেছেন যুক্তরাজ্যের জনগণ ও পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি"।
ব্রিটেনের জনগণ এবং রাজপরিবারের প্রতি সমবেদনা: রাহুল গান্ধী
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি টুইট করেছেন, "রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে ব্রিটেনের জনগণ এবং রাজপরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। তার একটি দীর্ঘ এবং গৌরবময় রাজত্ব ছিল, তিনি অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে দেশের সেবা করেছিলেন"।