Advertisment

নিজামুদ্দিনের বাসিন্দাদের সুরক্ষায় মাস্ক বানাচ্ছেন সেখানকার মহিলারা

২০০৮ সালে নিজামুদ্দিনের মহিলাদের দক্ষতা প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তৈরি হয় ইনশা-এ-নূর। পরবর্তী বছর গুলিতে ২০০র বেশি মহিলা এমব্রয়ডারি ও সেলাইয়ে প্রশিক্ষিত হয়েছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Nizamuddin Mask

এখন মাস্কের ডিজাইন আর মোটিফ নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে

"হুমায়ূনের সমাধির চূড়ার ইন্টিরিয়র দেখেছেন?" ফোনে উত্তেজিত শোনায় মেহনাজ বানোর গলা। ৪০ বছরের মেহনাজ বলতে থাকেন কীভাবে তিনি তার রং আর নকশা থেকে নিজামুদ্দিন বস্তির জন্য মাস্ক সেলাই করার ডিজাইনের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। "এইটা ফিরোজি, এই হল হালকা গোলাপি, সূর্যমুখীর রং, গোলাপি। আমরা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে চাই, চাই আরও মানুষ এ সম্পর্কে জানুক।"

Advertisment

দিল্লির কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক নিজামুদ্দিন বস্তি ভারতের সুফি সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। হুমায়ূনের সমাধির বিশালতার ছায়ায়, গলি আর তস্য গলি বয়ে গিয়েছে। সেথানেই বাস করেন সুফি নিজামুদ্দিন আউলিয়ার শিষ্য ও তাঁর বংশধররা।

আরও পড়ুন, ‘ওরাও তো আমারই মত’, ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে ক্ষুধার্ত মুখে ভাত তুলে দিলেন সবজি বিক্রেতা

মেহনাজ থাকেন এমনই এক গলিতে, যার নাম বেকারি ওয়ালি গলি। মেহনাজ আর তাঁর স্বামীর এক কামরার বাসস্থান। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি ইনশা-ই নূরের সঙ্গে যুক্ত। এটি একটি মহিলাদের জন্য যোজনা, যার শুরু হয়েছে আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচারের হাত ধরে। এই সংস্থা বস্তি তথা হুমায়ুনের সমাধি ও সুন্দর নার্সারির উন্নয়নের কাজে নিযুক্ত।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে মেহনাজ বনো তাঁর এলাকার সুগভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে শিখেওছেন, এবং তার গর্বিত অংশীদারও হয়ে উঠেছেন। কিন্তু মার্চে লকডাউন ঘোষণার পর তিনি আর এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি ও আরও ২০-২৫ জন ইনশা এ নূরের সঙ্গে যুক্ত মহিলা মাস্ক তৈরিতে মন দেন, যে মাস্ক শুধু বস্তিতে নয়, এলাকার অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাদায়ীদের বিনামূল্যে বিলি করা হয়।

এ উদ্যোগের আরেকটি অনন্য দিক রয়েছে। এই মাস্কের রংয়ে রয়েছে হুমায়ুনের সমাধির রং, যা ৫০০ বছরের পুরনো ইতিহাসের গল্প বলে।

আরও পড়ুন, ভালোবাসা, ভ্রাতৃ্ত্ববোধ এবং এক আলফা জঙ্গির পরিবর্তন

ইনশা ই নূরের সঙ্গে গত এক দশক ধরে যুক্ত ৪৮ বছরের জাইদা বাঈ। তাঁর কথায় "এখন এমন অবস্থা যে মাস্ক সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে। কিন্তু অনেকেরই তা কেনার পয়সা নেই। আমরা চেষ্টা করছি অর্থ না থাকর ফলে যেন কেউ মাস্ক থেকে বঞ্চিত না হন।"

এই মহিলাদের তৈরি করা মাস্ক কমিউনিটি টয়লেট, স্কুল, এবং কমিউনিটি সেন্টারে রাখা হয়েছে যাতে যে কেউ সংগ্রহ করতে পারেন। জুন মাসে ওঁরা প্রায় ১৫ হাজার মাস্ক বানান। এখন মাস্কের ডিজাইন আর মোটিফ নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে।

২০০৮ সালে নিজামুদ্দিনের মহিলাদের দক্ষতা প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তৈরি হয় ইনশা-এ-নূর। পরবর্তী বছর গুলিতে ২০০র বেশি মহিলা এমব্রয়ডারি ও সেলাইয়ে প্রশিক্ষিত হয়েছেন এবং তাঁরা যেসব জিনিস তৈরি করেছেন তাতে নিজামুদ্দিনের নিকটস্থ মুঘল সৌধের মোটিফ ব্যবহৃত হয়েছে, বিশেষ করে হুমায়ুনের সমাধির। ঐতিহ্য রক্ষার মাধ্যমেও যে স্থানীয় গোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক উন্নতি ঘটানো যায়, তা প্রমাণ করাই ছিল এই উদ্যোগের লক্ষ্য।

আরও পড়ুন, কোভিড-১৯ প্রশ্নের উত্তর দিতে ২৪ ঘণ্টা খোলা আসামের হেল্পলাইন

আগা খানের নামাঙ্কৃত সংস্থার সিইও রতীশ নন্দ বললেন, "৭০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যের মধ্যে বসবাসকারী মহিলাদের মাত্র ৯ শতাংশের মধ্যে কোনওরকম আর্থিক সুবিধা ছিল। ইনশা এ নূরের মাধ্যমে ১০০-র বেশি মহিলা ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে আয়ের সুযোগ পান।"

ইনশা এ নূরের ডিরেক্টর অফ প্রোগ্রামস জ্যোৎস্না লালের কথায়, "মার্চের মাঝামাঝি যখন দিল্লি সরকার সকলকে সক্রিয়তা কমাতে বলল, তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিই মাস্ক তৈরির। তার কারণ মাস্কের সরবরাহে ঘাটতি ছিল, আর আমাদের মেয়েদের রয়েছে দক্ষতা। প্রথমে মাস্ক দেওয়া হয়েছিল সুরক্ষা কর্মী, মালী এবং এলাকার অন্যান্য কর্মীদের।"

এর পরেই তাবলিগি জামাতের ঘটনা সামনে আসে। নিজামুদ্দিনে জামাতের সদর দফতরে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তা ভাইরাসের সুপার স্প্রেডার হিসেবে জানানো হয়, কয়েকশ সম্ভাব্য করোনাভাইরাস রোগীকে সরানো হয় সেখান থেকে।

জ্যোৎস্না বললেন, "যে মুহূর্তে তাবলিগি জামাতের ঘটনা ঘটে ও বস্তি সিল করে দেওয়া হয়, আমরা সিদ্ধান্ত নিই বেশি পরিমাণ মাস্ক তৈরি করা হবে, যাতে কমিউনিটির সকলে মাস্ক পান। তিনি একইসঙ্গে জানান এ ঘটনার পর এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়। এমনকী এলাকার যেসব বাসিন্দারা ওই সম্মেলনে যাননি, তাঁদের সম্পর্কেও লোকে সন্দেহ করতে থাকে।"

জাইদা বলেন, "আমরা টেলিভিশনে শুনি আমাদের এলাকা সম্পর্কে কত কিছু বলা হচ্ছে। খুবই খারাপ লেগেছিল। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা সচেতনও হয়ে যাই যে আমাদের অতিরিক্ত সুরক্ষা নিতে হবে এবং সবাই যাতে নিরাপদে থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।"

লকডাউন চালু হবার পর মহিলারা নিজেদের বাড়ি বসে মাস্ক সেলাই করেন, এবং সেন্টারে এসে ফিনিশিং টাচ দেন। মেহনাজ ফের সেন্টারে কাজ শুরু করেছেন। তিনি জানালেন দিনে একএকজন ৮০-১০০ মাস্ক বানাচ্ছেন।

"আমি দেখেছি নিজামুদ্দিন বস্তির বাইরে যারা পা রাখছে, তাদের সবাই আমাদের মাস্ক পরেছে। মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছি ভেবেই গর্ব হচ্ছে", বললেন মেহনাজ।

ইনশা-এ-নূরের অর্থ বোঝাচ্ছিলেন মেহনাজ। "এর মানে আলো তৈরি। আমি নিশ্চিত আমাদের তৈরি মাস্ক নিজামুদ্দিন বস্তির সব বাসিন্দাদের জীবনে আলো নিয়ে আসবে।"

Tablighi Jamat COVID-19
Advertisment