scorecardresearch

এলো না কালো টাকা, কমল না নগদের ব্যবহার; নোট বাতিলের খতিয়ান

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট মিলিয়ে মোট ১৫.৩১ লাখ কোটি টাকা এসেছে, যা কিনা বিমুদ্রাকরণের সময় বাজারে চলতি নোটের ৯৯.৩ শতাংশ। এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে গতকাল প্রকাশিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্টে।

এলো না কালো টাকা, কমল না নগদের ব্যবহার; নোট বাতিলের খতিয়ান

বিমুদ্রাকরণের সপক্ষে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সবচেয়ে জোরালো যুক্তি ছিল এই যে তার ফলে ভারতের অর্থনীতিতে ক্যাশ অর্থাৎ নগদ টাকার ব্যবহার কমবে। ভারতে চালু হবে ‘লেস ক্যাশ’ অর্থনীতি। কিন্তু গতকাল প্রকাশিত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০২৭-১৮ সালের মোট আর্থিক সঞ্চয় সংক্রান্ত অস্থায়ী তথ্য অনুযায়ী, বিমুদ্রাকরণের এক বছর পরে দেখা যাচ্ছে, নগদ সঞ্চয়ের পরিমাণ এক লাফে মোট জাতীয় উদ্বৃত্ত আয় (GNDI)-এর ২.৮ শতাংশয় এসে দাঁড়িয়েছে, যা গত সাত বছরের সর্বোচ্চ মাত্রা।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে নগদ সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল GNDI এর এক শতাংশ, যা ২০১৬ সালে হয় ১.৫ শতাংশ। যে বছর বিমুদ্রাকরণ ঘোষিত হয়, অর্থাৎ ২০১৭, নগদ সঞ্চয় কমে গিয়ে GNDI এর -২ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। তার কারণ সম্ভবত এই যে অনেক বেশি হারে টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়তে থাকে। কিন্তু বিমুদ্রাকরণের ঘোষণা হওয়ার পরের বছরেই সেই হার বেড়ে হয়ে গিয়েছে ২.৮ শতাংশ।

Read more in English here 

এদিকে পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিল হওয়ার প্রায় ২১ মাস পর গতকাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও জানায়, প্রায় সব টাকাই ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ফেরত চলে এসেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট মিলিয়ে মোট ১৫.৩১ লাখ কোটি টাকা এসেছে, যা কিনা বিমুদ্রাকরণের সময় বাজারে চলতি নোটের ৯৯.৩ শতাংশ। এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে গতকাল প্রকাশিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্টে। এর অর্থ হলো, পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোটে স্রেফ ১০,৭২০ কোটি টাকা ফেরত আসে নি, যেখানে না আসার কথা ছিল তিন লক্ষ কোটির ওপর কালো টাকা।

বিমুদ্রাকরণের খতিয়ান

৮ নভেম্বর, ২০১৬-র বিমুদ্রাকরণের অকস্মাৎ ঘোষণার পর দেশে নগদ টাকার ঘোর আকাল দেখা দেয়। সাধারণ মানুষের হয়রানি ছাড়া অর্থনীতিতেও দুর্যোগ নেমে আসে। মূলত চাহিদা কমার ফলে বহু ব্যবসার ক্ষতি হয়, এবং মোট দেশীয় উৎপাদনের (GDP) হার কমে যায় ১.৫ শতাংশ। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েন, বিমুদ্রাকরণের ঘোষণা হওয়ার ন’মাস পরেও।

বাতিল হওয়া নোটের পরিবর্তে নতুন পাঁচশো এবং দুহাজার টাকার নোট চালু করা হয়, কিন্তু এই পুনর্মুদ্রাকরণের গতি ছিল বেশ ঢিমে।

বিমুদ্রাকরণের কড়া সমালোচনা করে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেছেন, “বিমুদ্রাকরণের সময় বাজারে চলতি ১৫.৪২ লাখ কোটি টাকার প্রায় প্রতিটা পয়সা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ফেরৎ এসেছে। মনে পড়ে কে বলেছিলেন যে তিন লক্ষ কোটি টাকা ফেরৎ আসবে না, এবং সে টাকাটা সরকারের লাভের খাতায় ঢুকবে? আমার ধারণা উদ্বৃত্ত ১০,৭২০ কোটি টাকা, যেটা ফেরৎ আসে নি, নেপাল বা ভুটানে পাচার হয়ে যায়, এবং তার কিছুটা হারিয়ে যায় বা নষ্ট করে ফেলা হয়।”

চিদাম্বরম আরও বলেন, বিমুদ্রাকরণের ফলে দেশকে প্রচুর মূল্য দিতে হয়েছে। তাঁর কথায়, “একশোর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ১৫ কোটি দিনমজুর রোজগার বিহীন হয়েছেন। লক্ষ লক্ষ চাকরি খোয়া গিয়েছে। ভারতের অর্থনীতি ১.৫ শতাংশ GDP খুইয়েছে। এই সবের মূল্যই তো বছরে প্রায় ২.২৫ লক্ষ কোটি টাকা।”

Stay updated with the latest news headlines and all the latest General news download Indian Express Bengali App.

Web Title: No black money no less cash economy after demonetisation