Advertisment

মামলার রায় যাই হোক, উদযাপনে নেই অযোধ্যা

অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্ক নিয়ে যখন তোলপাড় দেশ তখন চোখ আটকাল অযোধ্যারই একটি পাড়ায়। দুই পড়শি, নাসিফা এবং কমলেশ দেবী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অযোধ্যা মামলার রায়দান ঘিরে মোতায়েন করা হল পুলিশ। ছবি- আসাদ রহমান

ভারতের সর্বকালের অন্যতম বিতর্কিত ও আলোচিত মামলা রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্ক। আজ এই মামলায় রায় শোনাতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। রায়দানকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ উত্তরপ্রদেশ পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ, হনুমান মন্দির, বাস, গাড়ি, শহরের প্রতিটি কোণায় কোণায় মোতায়েন করা হয়েছে উর্দিধারী পুলিশ এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‍্যাফ)।

Advertisment

অযোধ্যার বিতর্কিত জমির রাস্তায় নিজের দোকানের সামনে বসে দোকানদার অরুণ কুমার গুপ্ত (৬২) বললেন, "অযোধ্যার মানুষ পুলিশের উপস্থিতিতে এখন অভ্যস্ত। বাবরি মসজিদ ইস্যুতে অযোধ্যা যে এমন একটি সংকটপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে তা এবারই প্রথম নয়। সেই কারণে এখন আর পুলিশের উপস্থিতি নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। ঝামেলা তখনই শুরু হয়েছিল যখন রাজনীতিকরা বাইরে থেকে শহরে লোক আনিয়েছিল।" একা অরুণ কুমার গুপ্ত নন, অযোধ্যার মন্দিরের রাস্তায় প্রতিটি ব্যক্তিই দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে 'বাইরের অনুপ্রবেশকারী' নিয়ে যা বললেন তা যেন অরুণবাবুর মন্তব্যেরই অনুরণন। মন্দিরগামী রাস্তার তুলসী উদ্যান পার্কের পান-সিগারেট বিক্রেতা ধর্মেন্দ্র কুমার সোনকার বলেন, "পুলিশ আমাদের কোনও রকম বিরক্ত করছে না। তাঁরা তাঁদের কাজ করছে। ১৯৯২ সালে ঝামেলা শুরু হয়েছিল যখন বাইরে থেকে করসেবকরা অযোধ্যায় আসতে শুরু করেছিলেন।"

আরও পড়ুন- কী বলছেন বাবরি ধ্বংসের সময়কার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব?

তবে আসন্ন 'সুপ্রিম রায়' প্রসঙ্গে ধর্মেন্দ্র কুমার সোনকার বলেন, "মন্দির তো তৈরি হওয়াই উচিত। বাকিটা কী হবে রামজি জানেন।" অন্যদিকে, বিতর্কিত জমি থেকে অনতিদূরে রোদ পোহাচ্ছিলেন তিন সাধু। তাঁদেরই একজন, শিব শঙ্কর পাণ্ডে বলেন, "যদি এখন মন্দির তৈরি না হয়, তাহলে আর কবে হবে?" আরেক সাধু গোপাল দাস বলেন, "মোদীজি আছেন, দেখো না কী হয়।" তবে রায় ঘোষণার পর অযোধ্যায় উত্তেজনার সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছেন তাঁরা। বরং তাঁদের দাবি, "কিচ্ছু হবে না।" তবে জানা গেল, 'সোর্স' হিসেবে স্থানীয় দোকানদারদের উপরই ভরসা রাখছেন পুলিশ কর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্তা বলেন, "আমরা বেশ কিছু দোকানদারকে দায়িত্ব দিয়েছি। তাঁরা কোনও রকম সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলেই আমাদের তা জানাবে। গণ্ডগোল হলে তাঁদেরকে সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমে এনে সন্দেহজনক ব্যক্তিকে চিহ্নিতকরণের কাজটিও করা হবে।"

publive-image অযোধ্যায় মোতায়েন করা হল প্রচুর পুলিশ। ছবি- আসাদ রহমান

আরও পড়ুন- ‘কোমরে তলোয়ার রাখুন’, হুঁশিয়ারি অভিনেত্রী-রাজনীতিক কাঞ্চনার

অন্যদিকে, নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে রাখা হয়েছে বাবরি মসজিদ মামলাকারী হাজি মহম্মদ হাসিম আনসারির (যাঁকে তাঁবুর মধ্যে বাঁশে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল) বাড়ি। হাজি মহম্মদের পুত্র ইকবাল বলেন, "কিচ্ছু হবে না অযোধ্যার। চিন্তার কিচ্ছু নেই। প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে এবং আমি তাঁদের ভরসা করছি। যদি কিছু হয় তবে তা পড়শি জেলায় হতে পারে, এখানে নয়।" ইকবাল এও বলেন, "আমি অযোধ্যার সব মুসলিমদের বলছি, মামলার রায় যাই হোক না কেন, নিজেরা নিজেদের ঘরে বসে থাকুন।" উল্লেখ্য, অযোধ্যায় হিন্দুদের সংখ্যা ৯০ শতাংশ এবং মুসলিমদের সংখ্যা ৬.১৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন- কর্তারপুর যেতে পাসপোর্ট লাগবে, জানাল পাক সেনা

অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্ক নিয়ে যখন তোলপাড় দেশ, তখন চোখ আটকাল অযোধ্যারই একটি পাড়ায়। দুই পড়শি, নাসিফা এবং কমলেশদেবী। নাসিফার বাড়িতে রান্নার গ্যাসের খোঁজ নিতে আসা কমলেশদেবীর চেহারায় নেই বিতর্কের ছিটেফোঁটা রেশ। নাসিফা বললেন, "এঁরা আমাদের কাছে আত্মীয়তুল্য। আমরা একে ওপরের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই, এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়াও করি। ভয়ের যদি কোনও কারণ থাকে তবে তা বাইরে থেকে যারা আসবে তাঁরাই তৈরি করবে।"

Read the full story in English

Ayodhya
Advertisment