অলোক ভার্মাকে নিয়ে ‘নাটক’-এর যবনিকা পতন যেন ঘটছেই না। গতকালই একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে অপসারণ নিয়ে মুখ খোলার পরই দমকলের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে নাটকের নয়া মোড় ঘুরিয়েছিলেন ভার্মা। সেই রেশ কাটতে না কাটকেই এ ‘নাটক’ এবার আরেক মোড় নিল, সৌজন্যে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক। যিনি আবার ভার্মার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের নজরদারিতে রয়েছেন। সেই তিনিই এবার বললেন, ‘‘ভার্মার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও প্রমাণ নেই। সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন(সিভিসি) যা বলেছে, সেটা শেষ কথা হতে পারে না।’’ এতেই শেষ নয়, সিবিআই ডিরেক্টরের পদ থেকে যেভাবে ভার্মাকে সরিয়েছে সিলেক্ট কমিটি, সে সিদ্ধান্ত ‘খুবই হঠকারী’ বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি পট্টনায়ক।
এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বিচারপতি পট্টনায়ক বলেন, ‘‘দুর্নীতি নিয়ে ভার্মার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ ছিল না। গোটা তদন্তটাই চালানো হচ্ছিল সিবিআই স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার অভিযোগের প্রেক্ষিতে। আমার রিপোর্টে উল্লেখ করেছি যে, সিভিসির রিপোর্টে যা বলা হয়েছে তা আমার নয়।’’ উল্লেখ্য, সিবিআই অধিকর্তার পদ থেকে ভার্মাকে সরানোর পিছনে সিভিসির রিপোর্টকেই হাতিয়ার করেছে সিলেক্ট কমিটি। প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি বিচারপতি এ কে সিক্রি ও বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের ওই তিন সদস্যের কমিটিতে ২-১ ভোটাভুটিতে ভার্মাকে ফের অপসারিত করা হয়।
আরও পড়ুন, আমি অবসর নিলাম, বললেন অলোক ভার্মা
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে যে ২ পাতার রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তাতে বিচারপতি পট্টনায়ক উল্লখ করেছেন, ‘‘রাকেশ আস্থানার সই করা একটি বিবৃতি ৯ জানুয়ারি আমায় পাঠিয়েছিল সিভিসি। আমি স্পষ্ট করে বলতে পারি, রাকেশ আস্থানার সই করা এই বিবৃতি আমার সামনে করা হয়নি।’’ এ প্রসঙ্গে ওই বিচারপতি বলেছেন, ‘‘এমনকি সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, উচ্চপর্যায়ের কমিটিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাহলে বলতেই হয়, খুবই হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা এখানে একটা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ডিল করছি। এজন্য ওঁদের মাথা খাটানো উচিত ছিল। বিশেষত সেখানে যখন একজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। সিভিসি যা বলেছে, তা চূড়ান্ত হতে পারে না।’’
বিচারপতি পট্টনায়ক আরও বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে নজরদারির ভার দিয়েছিল। তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে, আইনানুগ বিচারপ্রক্রিয়া করা হবে। সেইমতো সবটাই করা হয়েছে। গোটা তদন্ত শেষ করা হয়েছে ১৪ দিনে। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টের। ৫০ পাতার রিপোর্ট ছিল কিন্তু তা পরে হাজার পাতার হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮জানুয়ারি ভার্মাকে সিবিআই অধিকর্তার পদ থেকে অপসারণের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে ভার্মাকে সিবিআই ডিরেক্টর পদে পুনর্বহাল করে আদালত। পাশাপাশি পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে এ নিয়ে সিলেক্ট কমিটিকে সিদ্ধান্ত নিতে দ্রুত বৈঠকে বসার নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেই সিলেক্ট কমিটিতেই ২-১ ভোটাভুটিতে সিবিআই অধিকর্তার পদ থেকে ফের অপসারিত হন ভার্মা। তাঁকে দমকলের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও সেই দায়িত্ব নিতে গতকাল অস্বীকার করেন সিবিআইয়ের প্রাক্তন অধিকর্তা।
Read the full story in English