/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/07/cow-shelter-759.jpg)
মিলিন্দ ঘাটোয়াই
সম্প্রতি রাজস্থান সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে সে রাজ্যে একটি গো অভয়ারণ্য খোলা হবে। ভালো কথা, কিন্তু এদিকে মধ্য প্রদেশে ঘটা করে গত বছর খোলা কামধেনু গো অভয়ারণ্য অর্থাভাবে বন্ধ হওয়ার জোগাড়। চালু হওয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই অভয়ারণ্য জানিয়ে দেয়, তাদের কাছে না আছে অর্থ, না আছে কর্মী, অতএব তারা আর নতুন 'অতিথি' রাখতে অক্ষম।
মধ্য প্রদেশের আগর জেলার সালারিয়া গ্রামে ৪৭২ হেক্টর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই অভয়ারণ্য চালু করা হয় ২০১৭ সালের সেপটেম্বরে। তখন বলা হয়েছিল এটিই দেশের প্রথম গো অভয়ারণ্য, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঘরছাড়া গরুদের আশ্রয় প্রদান করা। কিন্তু পাশাপাশি আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল গোবর এবং গোমূত্র থেকে উৎপন্ন হওয়া পেস্টিসাইড এবং ঔষধাদির প্রচার। ভাবা হয়েছিল ৬,০০০ গরু থাকবে ২৪ টি বৃহৎ গোয়ালে। আপাতত রয়েছে ৪,১২০ টি গরু, কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। পশুপালন দপ্তরের কাছ থেকে যা অনুদান আসছে, তা গরুদের জাব কিনতেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। কাজেই নতুনরা খাবে কী?
আরও পড়ুন: অনাহারে মৃত্যু ৫০০ গোরুর! ঘটনাস্থল রাজস্থান
"বর্তমানে ওই অভয়ারণ্যের নিয়মিত খরচ দশ কোটি টাকারও বেশি, যেখানে বরাদ্দ করা হয়েছে তার অর্দ্ধেকেরও কম। এর মধ্যে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয় করা হয় গরুর খাবার কিনতে। যারা আছে তাদেরই দেখাশোনা করা যাচ্ছে না, নতুন করে আর গরু ঢুকতে দেওয়ার প্রশ্ন নেই," বলছেন পশুপালন দপ্তরের এক আধিকারিক। তিনি আরও জানাচ্ছেন, রাজ্যের অর্থ দপ্তরের এক অফিসার গো মাতার কল্যাণার্থে তৈরি মধ্য প্রদেশ গো সম্বর্ধন বোর্ডকে উপদেশ দিয়েছেন, তারা যেন চাঁদা তুলে খরচ চালিয়ে নেন।
ডেপুটি ডিরেক্টর ডাঃ ভি এস কোসরওয়াল, যাঁর কাঁধে অভয়ারণ্যের দায়িত্ব, স্বীকার করেছেন অর্থাভাবের কথা। বলছেন, "আমরা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আর গরু রাখছি না। এই অঞ্চলের সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটরা আর গরু নিয়ে আসার অনুমতিও দিচ্ছেন না।"
অভয়ারণ্য উদ্বোধন হওয়ার পর বর্তমান এবং ভবিষ্যত চাহিদার কথা বিবেচনা করে গো সুরক্ষা বোর্ড প্রাথমিকভাবে ২২ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল অর্থ দপ্তরের কাছে, কিন্তু তা নাকচ হয়ে যায়। এরপর ১৪ কোটি টাকার আরেকটি প্রস্তাব পাঠানো হয়, কিন্তু এতেও চিড়ে ভেজে নি।
আরও পড়ুন: গরু খাওয়া বন্ধ হলেই গণপিটুনি বন্ধ হবে: আর এস এস নেতা
মুশকিল হলো, অভয়ারণ্যের নিজস্ব কোনো আয়ের উপায় নেই, কারণ এখানকার গো মাতারা আর কেউ উপার্জনক্ষম নন। সবাই বয়স্থা, অসুস্থ। আশেপাশের চারটি বায়ো গ্যাস প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়, এবং গোমূত্র থেকে এসেন্স নিংড়ে নেওয়ার কয়েকটি মেশিনও এসে পৌঁছেছে। জবলপুরের নানাজি দেশমুখ ভেটিরানারি সায়েন্স ইউনিভার্সিটি থেকে কিছু বিশেষজ্ঞও মাঝে মাঝে এসে দেখে যান।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/08/cattle-in-haryana-759.jpg)
পশুপালন মন্ত্রী অন্তর সিং আর্য বলছেন তিনি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে অর্থ সংকটের কথা জানিয়েছেন, এবং প্রয়োজনীয় টাকা শিগগিরই পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেছেন, সরকার গোটা অভয়ারণ্যের দায়ভার কোনো এনজিও-র হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু এখানেও সমস্যা। মধ্য প্রদেশ গো সম্বর্ধন এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সহ সভাপতি সন্তোষ যোশী বলছেন, স্রেফ সেইসব এনজিও-ই বিবেচিত হবে যারা "নিঃস্বার্থভাবে সেবাব্রতে উদ্বুদ্ধ"। দুঃখের বিষয়, এখন পর্যন্ত যেসব এনজিও এগিয়ে এসেছে, তারা সবাই "ব্যবসায়িক দিকটা মাথায় রেখেই আসছে"।
অভয়ারণ্যের ভিত্তি প্রস্তর প্রথমবার স্থাপনা করা হয় ২০১২ সালে, যখন চৌহান দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু কাজ আর এগোয় নি সেযাত্রা। পরবর্তীকালে অভয়ারণ্য তৈরি হয় বটে, কিন্তু চৌহান অপেক্ষা করে রইলেন কবে আরএসএস কর্তা মোহন ভাগওয়াত, যিনি প্রথমবার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, এসে উদ্বোধন করবেন। এই করে করে সেপ্টেম্বর ২০১৭ এসে গেল।
তাতেও কী সুষ্ঠুভাবে সব হওয়ার জো আছে? শেষমেশ চৌহান উদ্বোধনে এলেনই না, কারণ ততদিনে তাঁর আধিকারিকদের বুক ধুকপুক শুরু হয়েছে, যে সমস্ত রাজ্যের গরুর মালিকরা, এবং প্রতিবেশী রাজ্য রাজস্থানের গো পালকরাও, দলে দলে এসে তাঁদের অবাঞ্ছিত গরুগুলি এখানে জমা করে উধাও হয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন: রাজস্থানের বাজারে দুধের সঙ্গে জোর টক্কর গো-মূত্রের
ডেপুটি ডিরেক্টর ছাড়াও অভয়ারণ্যে রয়েছেন দুজন পশু চিকিৎসক, এবং ছজন ভেটেরিনারি ফিল্ড অফিসার। অস্থায়ী শ্রমিকও নিয়োগ করার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু সেখানেও প্রয়োজনীয় পরিমাণে শ্রমিক পাওয়া যায় না, বলছেন আধিকারিকরা।
এক সরকারি পশু চিকিৎসকের কথায়, "এখানে অনেকগুলি গরুর মৃত্যু হয়েছে বটে, কিন্তু সেটা খুব একটা ভয়ের কিছু নয়, কারণ সাধারণভাবে ১০ শতাংশ অবধি মৃত্যু হওয়াটাই নিয়ম। সবচেয়ে উন্নতমানের ডেয়ারি ফার্মেও তিন শতাংশ অবধি পশুর মৃত্যু হয়।"