তাওয়াং সীমান্তে ভারতীয় জওয়ানদের উপর রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে হামলা ৩০০ চিনা সেনার। সংঘর্ষে গুরুতর আহত দুই জওয়ান ভর্তি গুয়াহাটির হাসপাতালে। খবর প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে শোরগোল। দুবছর আগের গালওয়ানের বিভীষিকা ফিরল অরুণাচলে। যার জেরে মঙ্গলবার সংসদে কেন্দ্রের তরফে সাফাই দিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। সাফ জানালেন, বিষয়টি চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করবে নয়াদিল্লি।
এদিন রাজনাথ স্পষ্ট করেছেন, তাওয়াং সংঘর্ষে কোনও ভারতীয় সেনা নিহত হয়নি। ভারতের এরিয়া কম্যান্ডার চিনা কম্যান্ডারের সঙ্গে বৈঠকে বসে আলোচনা করেছেন। ১১ ডিসেম্বর বৈঠকে চিনা পক্ষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এমনটা আর না হয়। এলাকায় যেন শান্তি-স্থিতাবস্থা বজায় থাকে। এই বিষয়টি কূটনৈতিক স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
লোকসভায় মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, যে ভারতীয় সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত। বলেন, "আমি সদনকে আশ্বস্ত করছি, যে আমাদের সেনা সীমান্ত রক্ষার জন্য দায়বদ্ধ। আর যে কোনও শক্তির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। কেউ আঘাত করলে প্রত্যাঘাত হবেই।" সেনার সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়ে তিনি বলেছেন, "ভারতীয় সেনার তৎপরতার কারণে চিনা লালফৌজ এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।"
এদিকে, তাওয়াং সেক্টরে ভারত-চিন সেনার মুখোমুখি সংঘর্ষে সংসদে এদিন ঝড় ওঠে। কংগ্রেস সাংসদরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বয়ানে র দাবি জানান। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য চাপ দেয় বিরোধীরা। যার ফলে এক ঘণ্টার জন্য শোরগোলের কারণে অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়।
আরও পড়ুন গালওয়ানের বিভীষিকা ফিরল তাওয়াংয়ে, ভারতীয় জওয়ানদের উপর হামলা ৩০০ চিনা সেনার
লাদাখের গালওয়ানের পর এবার অরুণাচলের তাওয়াং। ফের মুখোমুখি সংঘর্ষ ভারতীয় ও চিনা জওয়ানদের। গত ৯ ডিসেম্বর ভোর রাতে দুই পক্ষ একে অপরের সঙ্গে হাতাহাতি, লাঠি-সোটা দিয়ে মারধর করে বলে খবর। ২০২০ সালের জুন মাসের পর ফের ভারত-চিন সেনার সংঘাতের ঘটনা সামনে আসায় অস্বস্তি বাড়ল নয়াদিল্লির। ঘটনায় দুজন ভারতীয় জওয়ান গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের তড়িঘড়ি গুয়াহাটির হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এক সেনা আধিকারিক জানিয়েছেন, দুপক্ষের সংঘর্ষে সামান্য আঘাত পেয়েছেন জওয়ানরা। দুই পক্ষের জওয়ানরা এর পর এলাকা থেকে সরে যান। ঘটনার পর পরই আমাদের একজন কম্যান্ডার চিনা পক্ষের কম্যান্ডারের সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং করেন। এলাকায় শান্তি-স্থিতবস্থা বজায় রাখার জন্য দুজনেই আবেদন জানান বৈঠকে।
গত নভেম্বরেই ইন্দোনেশিয়ার বালিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জি-২০ বৈঠকেই সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু তাতে কোনওরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করেননি। অরুণাচলের এই সংঘর্ষ গত শুক্রবার ভোর রাত তিনটের সময় হয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর তাওয়াংয়ের ইয়াংসি পয়েন্টে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার এই অংশটা অন্যতম বিতর্কিত এলাকা বলে পরিচিত। দুপক্ষই এলাকায় টহলদারি করে। সেদিন রাতে প্রায় ৩০০ চিনা সেনা হামলা করে ভারতীয়দের উপর।
উল্টোদিকে, ভারতীয় জওয়ানরা ছিলেন মাত্র ৭০-৮০ জন। কিন্তু অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে তাঁরা অনুপ্রবেশকারীদের হঠিয়ে দেন। ভয়ঙ্কর হাতাহাতি, লাঠি চালাচালি হয় দুপক্ষের মধ্যে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে এই মারামারি।