করোনা অতিমারিতে বন্ধ স্কুল। বন্ধ মিড ডে মিলও। তার জেরেই শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি বেড়েছে। বিহারের ভাগলপুরের বিভিন্ন এলাকায় করা সমীক্ষায় এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রশাসন শিশুদের খাবারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। তবে সরাসরি সেই টাকা ব্যাংকে পাঠানো হচ্ছে। ফলে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য বরাদ্দ টাকা অভিভাবকরা অন্য খাতে খরচ করে ফেলছেন। যাতে সমস্যা আরও গভীরে পৌঁছেছে।
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ২০১৫-১৬ অনুসারে, বিহারের ৪৮.৩ শতাংশ শিশু (৫ বছেরর নীচে) শারীরিকভাবে দুর্বল। ৪৩.৯ শতাংশের ওজন কম। এই পরিসংখ্যান জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেকটাই বেশি। ২০০৫-০৬ সালে বিহারের এই সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৫৫.৬ ও ৫৫.৯ শতাংশ। মিড ডে মিলের ফলে গত ১০ বছরের অবশ্য বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে, গত তিন মাসে অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়ার মূল হাতিয়ার মিড ডে মিল বন্ধ রয়েছে।
পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। স্কুল থেকে খাবার না মেলায় আপাতত বই খাতার পাট মিটিয়েছে ভাগলপুরের মুশাহারিটোলার মহাদলিত বস্তির শিশুরা। আবর্জনা কুড়িয়ে বা ভিক্ষা করেই আপাতত দিন গুজরান করছে তারা। এটা শুধু এই বস্তির ছবি নয়। বিহারের বেশিরভাগ দরিদ্র মহল্লায় এটাই দস্তুর।
মহাদলিত বস্তির বাসিন্দা হীরা মাঝি দিনে ৩০০ টাকা রোজগার করতেন। করোনার কারণে এখন সপ্তাহে দু'দিন কাঝে যান। ফলে আয় কমেছে। আগে দিনে এক বেলা মিড মিলের আসায় তার বাচ্চারা স্কুলে যেত। কিন্তু, এখন স্কুল বন্ধ। তাই এখন পেট ভরে না সন্তানদের। শালটনগঞ্জের বাসিন্দা মিনা দেবীর কথায়, 'এক মাস আগে রেশন থেকে কার্ড পিছু ৫ কেজি করে চাল ও ১ কেজি ডাল দিয়েছিল। তারপর আর কোনও খোঁজ নেই। মিড মিল ছাড়া ওই চাল কতদিন চলবে? আমরা প্রশাসনকে খাবার দিতে বলেছি।'
জেলা শাসক প্রবীন কুমারের কথা অনুযায়ী, স্কুল বন্ধ অবস্থায় শিশুদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। ১৪ মার্চ বিহার সরকারের জারি করা নির্দেশিকা অনুসারে, ১৫ দিনের জন্য প্রথ থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ হয় ১১৪.২১ টাকা ও ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান ১৭১.১৭ টাকা। প্রতিদিনের হিসাবে মাথাপিছু বারদ্দ যথাক্রমে ৭.৬১ টাকা ও ১১.৪১ টাকা। প্রশ্ন হল এতে কী পেট ভরে?
শান্তিদেবী কন্যা বিদ্য়ালয়েক প্রধান শিক্ষক সুনীল গুপ্তার কথায়, 'লকডাউন ২ পর্যন্ত কিছু টাকা এসেছিল। তারপর থেকে টাকা আসেনি। ২৬৫ জন পড়ুয়া এই স্কুলে পড়ে। প্রথমত, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোয় তা অভিভাবকরা অন্য কাজে খরচ করেছেন। দ্বিতীয়ত, ওই পরিমান টাকায় কিছুই হয় না।'
জেলার মিড ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক জানাচ্ছেন, 'কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে মে পর্যন্ত খাবারের টারা ব্যাংকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভাগলপুরে প্রায় ৫.২৫ লক্ষ ুড়ুয়ার কাছে এই টাকা পৌঁছেছে।'
কীভাবে শিশুদের বাড়িতে চাল-ডাল পৌঁছনো যায় তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। মনে করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব কেশব দেশীরাজু।
নানা কথা উটে আসছে। কিন্তু বাস্তব হল যে, ভাগলপুরের দরিদ্রতম মুশাহারিটোলার শিশুরা আপাতত বই পেন্সিল ছেড়ে আবর্জনা কুড়িয়ে বা ভিক্ষা করেই দিন গুজরানে বাধ্য হচ্ছে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন