খাবার বা জলের অভাবে ট্রেনে কেউ মারা যায়নি- একান্ত সাক্ষাৎকারে পীযূষ গোয়েল

ট্রেন হারিয়ে যাওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোনও ট্রেন পথ হারায়নি।

ট্রেন হারিয়ে যাওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোনও ট্রেন পথ হারায়নি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

দ্বিতীয় দফার মোদি সরকারের এক বছর পূর্তির সময়ে দেশ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে লড়ছে, সমস্যায় পড়েছে পরিযায়ী সংকট নিয়েও। এই পরিস্থিতিতে, রেল এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল সরকার কী করেছে এবং কী করতে চায়, সে নিয়ে কথা বললেন রবীশ তিওয়ারি ও অভিষেক জি দস্তিদারের সঙ্গে।

Advertisment

 অর্থনীতি ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়, এবং অতিমারী ও পরিযায়ী সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় কী করণীয়?

আমার ধারণা গত এক বছরে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ প্রাপ্তি ঘটেছে, যেমন সংবিধানের ৩৫ এ... ৩৭ নং অনুচ্ছেদ বাতিল হয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ, যাঁরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান আফগানিস্তানের মত প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়েও ভারতের নাগরিকত্বের সুবিধা পাচ্ছিলেন না... তাঁরা এবার সম্মান পাবেন এবং তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে... তারপর রয়েছে তিন তালাক বিলের ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে যেসব মহিলাকে কোনও রকম প্রক্রিয়ার মধ্যে না গিয়ে এবং সুবিধা নাদিয়ে ডিভোর্স দেওয়া হয় তাঁদের সম্মানের প্রশ্ন বা ধরা যাক দিল্লির বেআইনি কলোনি।

ঘটনাক্রমে এই সময়ের মধ্যেই মাননীয় শীর্ষ আদালত দীর্ঘদিনের দূর্ঘদিনের বকেয়া রামজন্মভূমি নিয়ে রায় দিয়েছে। ফলে সত্যি বলতে কী, সেই সর্দার প্যাটেলের সময় থেকে এক দেশ এক সংবিধান, এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের স্লোগান স্বাধীনতার ৭২ বছর পর বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisment

সত্যি বলতে কী, মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ন ছিল এ দেশ এক হবে এবং তিনি বিশ্বাস করতেন পাকিস্তানের যেসব হিন্দু ও শিখরা সে দেশে থাকতে চান না, তাঁদের এদেশে স্বাভাবিক জীবনের সুনিশ্চয়তা দিতে হবে। এই তিন দেশের, যাদের সঙ্গে আমাদের ভূমিসীমান্ত রয়েছে, সেখানকার সমস্ত সংখ্যালঘুদের আমরা পুনর্বাসন দিতে চাই। কারণ তাঁরা ধর্মীয় কারণে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, ফলে যে কোনও ধর্মের সংখ্যালঘুদের তা প্রাপ্য।

ফলে কিছু ক্ষেত্রে, যেসব সমস্যা দেশকে দীর্ঘদিন ধরে ভোগাচ্ছিল, তা এই এক বছরে সমাধিত হয়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতিপ্রবল চাপের মুখে থাকলেও, বিশ্ব জুড়ে মূল্য শৃঙ্খলে চাপ থাকলেও, দেশ ও মহাদেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চললেও ভারত একটা কার্যকর পথ খুঁজে নিতে পেরেছিল, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক পর্যটন চাপের মুখে, ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গা বন্ধ হতে শুরু করে এবং লকডাউনের প্রথম ধাক্কা লাগে মার্চে। এ বছর টানাপোড়েন চললেও আমার বিশ্বাস রয়েছে ১৩০ কোটি ভারতীয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা আত্মনির্ভর দেশ হয়ে উঠব, এমন এক স্বাধীন দেশ যারা নিজেদের প্রয়োজন নিজেরাই মেটাতে পারে, সে খাদ্য শস্য হোক কি যে কোনও ধরনের পণ্য, এমন একটা দেশ যারা পৃথিবীর অন্য সব দেশের সঙ্গে সমানে সমানে প্রতিযোগিতা করতে পারে, এক দেশ যেখানে দেশ ভরা দক্ষ শ্রমিক রয়েছে, আমরা এথানে উঁচু মানের পণ্য তৈরি করতে পারি যা সারা বিশ্বের প্রয়োজন মেটাতে পারে।

আমার বিশ্বাস আমরা কোভিড-উত্তর পৃথিবীতে আরও শক্তিশালী হিসেবে উদয় হব, এই সময়ের সমস্যা আমরা অতিক্রম করব এবং কোনওভাবেই আমরা ভারতের মানুষের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে দেব না। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে আমরা ভারতকে অনন্য প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাব, এবং প্রতিটি ভারতীয় এ কাজে শামিল হবেন।

আমরা এখনও বিশ্বাস করি ভারত ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে, তার জন্য হয়ত আরও কিছুদিন দেরি করতে হবে, কিন্তু কোভিডকে আমরা শক্তিশালী রাষ্ট্রের পথে বাধা হতে গেব না। ভারতের কোভিড সংক্রমণ আটকাতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভূমিকা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। মাত্র ৫০০ জনের যখন সংক্রমণ সেই সময়ে সংক্রমণ শৃ্ঙ্খল ভাঙতে এবং দেশের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরিকাঠামো প্রস্তুত করতে আমরা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।

 আপনি যেসব সাফল্যের কথা বললেন, সবই রাজনৈতিক। কিন্তু আপনারা ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে অর্থনীতির গতি মন্দ হয়েছে, অর্থনীতিই যেখানে প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেখানে আপনার কথা শুনে মনে হল না তাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

একেবারেই নয়। অর্থনীতিতে বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা নতুন উৎপাদকদের জন্য ১৭ শতাংশ আয়কর কমিয়েছি, যা বর্তমান করের অর্ধেক। আমরা এই বার্তা দিতে চেয়েছি, যেখানে নতুন উৎপাদন হচ্ছে, তাঁদের সকলের কাছেই যে আমরা সর্বনিম্ন করের দেশগুলির অন্যতম। আমরা ব্যাঙ্ক সংযুক্তি ও ব্যাঙ্কের পুনর্গঠন এমনভাবে করেছি যা আগে কখনও হয়নি। সর্বোচ্চ পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ।

করোনাভাইরাস সত্ত্বেও সারা পৃথিবী জানে ১৩০ কোটির ভারতের বাজার ব্যবসার জন্য কতটা জরুরি। আমাদের জল জীবন মিশন এসে গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি সমস্ত কৃষকদের জন্য উপলব্ধ, আমরা কৃষিক্ষেত্রে পরিকাঠামো বাবদ এক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি, ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে ক্ষুদ্র খাদ্য উদ্যোগে, ২০ হাজার কোটি টাকা জেলেদের জন্য প্রকল্পে, পশুপালনে বরাদ্দ ১৫ হাজার কোটি টাকা। আত্মনির্ভর ভারতের অংশ হিসেবে আমাদের কৃষি সংস্কার সম্পর্কে যে ঘোষণা করা হয়েছে, তা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

এমএসএমই-দের সহায়তার জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি, রাস্তার হকার, কৃষকদের জন্য ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, পরিযায়ীদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্যশস্য, মনরেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি ও তার সঙ্গে থাকছে ব্যবসা সহজ করার পদ্ধতি। আমাদের আনা মোটর ভেহিকেল সংশোধনী আইনের ফলে রাস্তায় দুর্ঘটনা কমবে।

আমরা BS-VI গাড়ি এনেছি যাতে দূষণ কমে, আমরা ফাস্ট্যাগের বন্দোবস্ত করেছিস আমরা শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধে কঠোর আইন এনেছি, চিফ অফ ডিফেন্স পদে নিয়োদ এ বছরেই হবে, উত্তরপূর্বের ব্রু, তাং ও বোড়োদের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে... আমাদের সাফল্যের তালিকা দিতে পারি আমি।

৫৪ লক্ষ পরিযায়ী বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ট্রেনে করে। যাত্রীদের ট্রেন লেটের জন্য বিক্ষোভ, প্ল্যাটফর্মের উপর পরিযায়ীর মৃতদেহ, ভাড়া নিয়ে বিতর্ক, এসবের পর আপনার কি মনে হয় বিষয়টা অন্যভাবে, আরেকটু ভালভাবে ঘটানো যেতে পারত?

ট্রেন ঠিক সময়ে চালানোর ব্যাপারে রেলওয়ে সেরা। পুরো যাত্রী বহনই ছিল... খাদ্যশস্য সরবরাহ, সারস কয়লা, সবই চলেছে। আমরা গত দু মাসে ১৫৯.৮৫ মিলিয়ন টন পণ্য আনা-নেওয়া করেছি... প্রায় ৭০ শতাংশ মাল পরিবহণ হয়েছে স্বাভাবিকভাবে। কোথাও কোনও খাদ্যশস্যের বা সারের সংকট দেখা যায়নি। ভাবুন, যদি কয়লা না পৌঁছত, আমাদের বিদ্যুৎ থাকত না, জল থাকত না। কিন্তু রেল এই রোগের প্রকোপ সত্ত্বেও ২৪ ঘণ্টা ধরে কাজ করে গিয়েছে, কেউ একবারও আপত্তি করেনি।

এবং আমরা দেখলাম পরিযায়ীরা শিবিরে থাকতে ইচ্ছুক নন - তাঁদের থাকা উচিত ছিল কারণ কনটেনমেন্ট এবং লকডাউন বিষয়টিই হচ্ছে যে যেখানে আছেন, সেখানে থাকবেন - কিন্তু আমরা দেখলাম মানুষ শিবির ছেড়ে যাচ্ছেন এবং সমস্যায় পড়ছেন। ১ মে থেকে আমরা শ্রমিক ট্রেন চালানো শুরু করি এবং ১৯ তারিখ পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। এরপর ট্রেন এক স্টেশন থেকে অন্যদিকে যেতে শুরু করে।

যেখান থেকে ট্রেন ছাড়ছে, সেই রাজ্যের শুরুতে খাবার ও জল দেওয়ার কথা, মাঝে এক জায়গায় রেলের জল ও খাবার দেওয়ার কথা, গন্তব্যে পৌঁছলে সেখানে সরকারের খাবার থেকে মেডিক্যাল চেকিং ও নিজেদের এলাকায় পৌঁছে কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থা করার কতা। ১৯ দিন সব সুষ্ঠুভাবে চলেছে। এবং মাথায় রাখতে হবে, সব ট্রেন উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পূর্বদিকে যাচ্ছে। খাদ্যশস্য, সার ও কয়লাও সেদিকেই যাচ্ছে। যদি ভারেতর সব দিকে ট্রেন যা তাহলে ক্ষমতা অবশ্যই বড়বে। কিন্তু একদিকে গেলে সমস্যা হবে। এবং আমাদের একইসঙ্গে একই দিকে মালগাড়ি ও অন্য ট্রেনের বন্দোবস্ত করতে হচ্ছিল।

এর মধ্যে গন্তব্য রাজ্যগুলি বেশি পরিমাণ স্টপেজ চাইতে লাগল। তাদের একটি স্টপে গোটাটার সমাধান করার ক্ষমতা ছিল না। যে রাজ্য থেকে ট্রেন ছাড়ছে, তারা সবাইকে একটি স্টেশনে আনবে না। ২০ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত আমরা গন্তব্য রাজ্যের মতামত নেওয়া বন্ধ করে দিই। এটা সমস্যা তৈরি করছিল।

পরিযায়ীরা স্টেশনে এসে পৌঁছলে পরিবহণ পাচ্ছিলেন না কারণ গন্তব্য রাজ্য অনুমতি দিচ্ছিল না। আমি পূর্ব ভারতের তিন চারটি রাজ্য পরিযায়ীদের গ্রহণ করছে না বলে ফোন পেয়েছি। উত্তর প্রদেশ ও বিহার কিন্তু সকলকে গ্রহণ করছিল। কিছু রাজ্য আগ্রহ না দেখানোয় আমরা বাধ্য হই জোর করতে।

সম্মতি না নেওয়া ও স্টপেজ বাড়ানোর ফলে ২০ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে ২৫৬টি ট্রেন প্রতিদিন চলেছে।

১ থেকে ১৯ পর্যন্ত প্রতিদিন ৯৩টি ট্রেন চলেছে, ২০ থেকে ২৪ পর্যন্ত দিনে ২৫৬টি ট্রেন চলেছে, ২৫ থেকে ২৮ পর্যন্ত ১৯৬টি ট্রেন চলেছে, ২৯ ও ৩০-এ ১০১ টি ট্রেন চলেছে, আজ ৭০-৭৪টি ট্রেন চলবে। আর চাহিদা নেই। ২৪ তারিখে আমরা রাজ্যগুলিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কতট্রেন প্রয়োদন হবে, ওঁরা বলেছিলেন ৯২৩টি। ২৮ মে মোট চাহিদা মাত্র ৪৪৯টি। আমরা কোনও রাজ্যকে ট্রেন দিতে পারব না বলিনি। এরকম যদি কেউ দাবি করে, তাহলে তা ভিত্তিহীন।

ট্রেন হারিয়ে যাওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোনও ট্রেন পথ হারায়নি। কোনও রুটে ভিড় হয়ে গেলে আমরা মাত্র ৭১টি ট্রেনের যাত্রাপথ বদলেছি। আমরা মোট ৪০৪০টি ট্রেন চালিয়েছি। আমি দিনে তিনবার দেখভাল করেছি। দুর্ভাগ্যজনক হল ২৫০ টি ট্রেন কেউ ব্যবহার করেনি, মহারাষ্ট্র একাই ব্যবহার করেনি ১০০র বেশি ট্রেন। আমরা সে নিয়ে কোনও অভিযোগ করিনি। অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে, রেলের উপর মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। ৭১টি ট্রেনের যাত্রাপথ বদলানো হয়েছে যাত্রীদের কথা ভেবে, কারণ রুটে ভিড় থাকায় যাত্রী ওঠানামায় দেরি হচ্ছিল।

সরকার লকডাউনের মধ্যে গরিব কল্যাণ যোজনায় বিপুল অঙ্কের ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে থেকে কি শ্রমিকদের ভাড়া দেওয়া যেত না? এবং ট্রেনে মৃতদের এককালীন অর্থ সাহায্যের বিষয়ে আপনারা কি কিছু ভাবছেন?

শ্রমিক ট্রেন খালি ফিরছে। প্রতিবার ট্রেন চালালে আমাদের ক্ষতি হয় ৪৩ শতাংশ। আরপিএফ পোস্টিং ও প্রতি ট্রেনে খাবার দেওয়ার খরচ রয়েছে, যা আমাদের সাধারণত করতে হয় না। সব মিলিয়ে প্রতি ১০০ টাকা ব্যয়ে ভাড়া বাবদ পাওয়া যায় ১৫ টাকা। কিন্তু এটা সে প্রশ্নও নয়। আপনি যদি ঘোষণা করেন কাল থেকে ফ্রিতে ট্রেন চলবে। তাহলে আপনি ব্যবস্থা রাখতে পারতেন! সবাই স্টেশনে চলে এসে সেদিনই বাড়ি ফিরতে চাইত।

ভিত্তিহীন বিতর্ক তৈরি করা খুব সহজ। সকলেই উত্তেজক খবর লিখতে আর পড়তে চায়। কিন্তু যদি কেউ বিষয়টা ভেবে দেখত তাহলে বুঝতে পারত গোটাটাই খুব চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পনা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ট্রেন নিতে চাইছিল না, তারপর আমপান এল, ফলে ওড়িশা ও বাংলায় ট্রেন যাচ্ছিল না। ৭১টা ট্রেনের যাত্রাপথ বদল হয়েছে, তবে তাদের যাত্রীদের খাবার ও জল দেওয়া হয়েছে। সর্বত্র লকডাউন, ট্রেনের রুটে ভিড় ইত্যাদি কারণে খাবারের ব্যবস্থা করতে দেরি হয়েছে। দেরি হয়েছে, কিন্তু খাবার বা জলের অভাবে কেউ মারা যায়নি। আমরা অত্যন্ত দুঃখিত ও উদ্বিগ্ন। ক্ষতিপূরণের কথায় বলি, বিষয়টি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। সাত দিন বা ৯ দিন দেরিতে ট্রেন পৌঁছনোর খবর মিথ্যা, ভিত্তিহীন।

যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজের কথা বলা হচ্ছে তা এখনই দরকার, আপনারা বলছেন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের কথা।

২০ লক্ষটাকার প্যাকেজ দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। কিন্তু এর অধিকাংশই তৎকালীন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লিকুইডিটি পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সব শিল্প সংস্থার যোগাযোগ রেখে চলেছি। ১৩০ কোটির দেশে চাহিদা বাড়বেই। আত্মনির্ভর ভারত কোনও বদ্ধ অর্থনীতির প্রকল্প নয়, খোলা অর্থনীতির প্রকল্প। মেক ইন ইন্ডিয়ার মাধ্যমো ভারত অর্থনীতিতে এবং মানের দিক থেকেও সেরা হবে। আমরা অকারণ আমদানি বন্ধ করতে পারব।

গরিব কল্যাণ যোজনা, মহিলাদের ৫০০ টাকা, মনরেগায় ৪০ হাজার কোটি ও প্রধানমন্ত্রী কিসান যোজনা ছাড়া ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজে সবটাই দেওয়া হচ্ছে শিল্পে জোগানের দিকে। স্বল্পকালীন সময়ে চাহিদা বৃ্দ্ধির উদ্দেশ্যে কী করা হচ্ছে যাতে সরবরাহকারীরা তাঁদের উৎপাদন শুরু করার আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন?

প্যাকেজ শিল্প কেন্দ্রিক, এটা আপনাদের ভুল ধারণা। বরং শিল্পকে আরও বেশি দেওয়া উচিত। আমি আপনাদের কাগজ প্রতিদিন পড়ি। আপনারা বলেছেন এই প্যাকেজ গরিব ও এমএসএমই কেন্দ্রিক, শিল্পে আরও দেওয়া উচিত ছিল। এরকম কিছু আপনাদের কাগজে আমি পড়েছি। যাই হোক, এই প্যাকেজ ১৩০ কোটি ভারতীয়ের জন্য, অর্থনীতি সচল হলে সবার ক্রয়ক্ষমতা আসবে।

সবাই যখন অন্ধকারে তির ছুড়ছে আপনি অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন নিয়ে এত আশাবাদী হচ্ছেন কী করে?

কেউ অন্ধকারে তির ছুড়ছে না। মালগাড়ি থেকে শ্রমিক ট্রেন, সব বিষয়ে আমরা দিনে তিনবার দেখভাল করি। আমরা মাল পরিবহণের ৭০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছি। খাদ্যশস্যে আমরা ১৮৫ শতাংশ করেছি। ইস্পাত পরিবহণ ফিরছে। সিমেন্ট কারখানা শুরু হবে। অনিশ্চয়তা অবশ্যই আছে। কিন্তু সকলেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছেন।

Lockdown