প্রবেশিকা বন্ধের সিদ্ধান্ত যাদবপুরে, বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা, মান নিয়ে আশঙ্কা শিক্ষামহলে

''বহিরাগতদের প্রবেশ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় এই ভর্তি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে। এখানে কখনও কোনও সোর্স বা টাকা দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোনও জায়গা ছিল না। তবে এবার হয়ত সেই দিনও দেখতে হবে।''

''বহিরাগতদের প্রবেশ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় এই ভর্তি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে। এখানে কখনও কোনও সোর্স বা টাকা দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোনও জায়গা ছিল না। তবে এবার হয়ত সেই দিনও দেখতে হবে।''

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
jadavpur university

তুলে দেওয়া হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা।

কলা বিভাগের প্রবেশিকা পরীক্ষার দিন ঘোষণা করেও সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পড়ুয়াদের দাবিকে গ্রাহ্য় না করে চলতি বছর থেকেই উঠে গেল প্রবেশিকা পরীক্ষা। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসমিতির বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়েছে, উচ্চমাধ্যমিক বা তার সমতুল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই স্নাতকস্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Advertisment

প্রবেশিকা বাতিলের সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা। সিদ্ধান্ত জানার পরেই উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও করে রাখা হয়। অবস্থান শুরু করে দেন তাঁরা। ছাত্রছাত্রীদের দাবি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পুরনো নিয়মই বহাল রাখতে হবে।

ছাত্রছাত্রীদের দাবির ব্যাপারে কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। তাঁরাও জানিয়ে দিয়েছেন, ভর্তির ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তে সরকারের দিকেই আঙুল তুলছেন অধ্যক্ষসহ, পড়ুয়াদের একাংশ। সরকারি হস্তক্ষেপের কারণেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের করুণ পরিণতি হতে চলেছে একথাও জানিয়েছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রথম থেকেই বলেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি নিয়ম অর্থাৎ মেধা তালিকার ভিত্তিতে এবং প্রবেশিকার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি চলতে পারে না। শুধু মেধা তালিকার ভিত্তিতেই ভর্তি চাইছেন মন্ত্রী।

Advertisment

শিক্ষাবিদদের অনেকের মতে, যেহেতু দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা পুরোটাই পাঠ্যপুস্তক ভিত্তিক, সে ক্ষেত্রে অনেক নম্বর পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এই প্রবেশিকা পরীক্ষাই সেরা ছাত্র-ছাত্রীদের তুলে আনতে সক্ষম হত বলে তাঁদের মত। প্রবেশিকা পরীক্ষা বন্ধ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন, কলেজে তোলাবাজির জের, সরতে হচ্ছে টিএমসিপি সভানেত্রী জয়া দত্ত কে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন অধ্যাপিকা জানান, এতদিন শিক্ষক সংগঠন বা ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোনও হস্তক্ষেপ করত না সরকার। বিশ্ববিদ্য়ালয় চত্বরে বহিরাগতরা ঢুকতে পারতেন না। তিনি বলেন, ''বহিরাগতদের প্রবেশ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় এই ভর্তি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে। এখানে কখনও কোনও সোর্স বা টাকা দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোনও জায়গা ছিল না। তবে এবার হয়ত সেই দিনও দেখতে হবে।'' এক্ষেত্রে কটাক্ষের তির মনোজিৎ মণ্ডলের দিকেই। সূত্রের খবর, নম্বরের ভিত্তিতেও যে ভর্তি হোক এমনটা চাইছেন না কর্ম সমিতির সম্পাদক মনোজিৎ মণ্ডল। অভিযোগ, তিনি চাইছেন কোনও একটি এক্সাটার্নাল এজেন্সির হাতে পুরো বিষয়টি তুলে দিতে। যেখানে পছন্দের প্রার্থীদের বসিয়ে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন তাঁরা। এতে সাম্প্রতিক তোলাবাজির প্রেক্ষাপট যে আরও দৃঢ় হবে এবং টাকার খেলা শুরু হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না বলেই মনে করছে শিক্ষামহলের বড় অংশ।

বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আর এক প্রাক্তন অধ্যাপিকা সুপ্রিয়া চৌধুরী। প্রবেশিকা পরীক্ষা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দাও করেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার দেখা এমন অনেক ভাল ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন যাঁরা বর্তমানে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁরা স্কুলের পরীক্ষায় প্রচুর নম্বর না পেলেও মেধার দিক দিয়ে তাঁরা যথেষ্টই তুখোড়। এই প্রবেশিকাই তাঁদের বেছে নিতে প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করেছিল। বর্তমান সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে গভীর হতাশাজনক।

এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা রাত অবধি অবস্থান বিক্ষোভের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের তরফে এই ইস্যুতে নতুন করে জিবি তৈরির বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, পড়ুয়াদের দাবি নিয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তা করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে আগামিকাল ফের বৈঠকে বসতে পারে ইসি।

Education