সংসদে যৌথ বাজেট অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে শুক্রবার এনআরসি প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সিএএ ও এনআরসি নিয়ে দেশজোড়া প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে তাঁর এই কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর ২০ জুন সপ্তদশ লোকসভার প্রথম ভাষণে রামনাথ কোবিন্দ তাঁর ভাষণে দেশ জোড়া এনআরসি প্রক্রিয়াকে লাগু করতে অগ্রাধিকারের কথা বলেছিলেন। সেদিক থেকে দেখলে এবার তাঁর এ প্রসঙ্গে নীরবতা অতীব তাৎপর্যপূর্ণ।
গত ২০ জুন নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্দেশ্যের কথা ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, "বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি। এর ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, আমাদের সীমিত জীবনধারণের উপাদানের উপর চাপ পড়ছে। আমার সরকার স্থির করেছে, এনআরসি যেসব জায়গা অনুপ্রবেশ অধ্যুষিত, সেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এনআরসি করা হবে। অনুপ্রবেশ আটকাতে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।"
রাষ্ট্রপতি আরও বলেছিলেন, "একদিকে যখন সরকার অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার সমস্তরকম চেষ্টা করছে, অন্যদিকে নিজেদের বিশ্বাসের জেরে যাঁরা নিপীড়িত, তাঁদের সুরক্ষা দিতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ ব্যাপারে, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে এবং ভাষিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচিতি রক্ষা করতে সবরকম প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।"
গত ডিসেম্বরে শীতকালীন অধিবেশনের সময়েই নাগরিকত্ব আইন পাশ হয় সংসদে। নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী নিয়ে বিতর্কের সময়ে দেশ জোড়া এনআরসি লাগু করতে অমিত শাহ জোর দেবার পরেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
আজ রাষ্ট্রপতি ক্যা নিয়ে বললেও, তাঁর ভাষণে এনআরসি সম্পর্কে কোনও বক্তব্য ছিল না।
"ভারত সর্বদাই সমস্ত বিশ্বাসেরর সমমর্যাদা দিয়ে এসেছে। তবে দেশভাগের সময়ে ভারত ও তার মানুষ মারাত্মক আক্রমণের মুখে পড়েছেন। দেশভাগের পর যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তার জেরে, জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বলেন, পাকিস্তানের হিন্দু ও শিখেরা , যাঁরা সেখানে থাকতে চান না, এ দেশে আসতে পারেন। সরকারের কর্তব্য হল তাঁদের জন্য স্বাভাবিক জীবনযাত্রার বন্দোবস্ত করা। অনেক জাতীয় নেতা ও রাজনৈতিক দল পূজনীয় বাপুর এ কথা সমর্থন করেছে এবং আরও বেশি প্রচার করেছে। আমাদের দেশের পিতাদের এ ভাবনাকে আমাদের সম্মান দেওয়া উচিত। সংসদের দুই কক্ষ ক্যা-এর মাধ্যমে এই ইচ্ছাপূরণ করায় আমি খুশি। আমরা যে সময়ে গান্ধীজির ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী পালন করছিস সে সময়ে এই ভাবনাকে আপনারা মর্যাদা দিয়েছেন। আমি সংসদের দুই কক্ষকে এবং সাসংদদের এ জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।"
"আমার সরকার এই পদ্ধতি ফের স্পষ্ট করতে চায়। যে কোনও বিশ্বাসের মানুষ, তাঁরা যদি ভারতে বিশ্বাস করেন ও ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে চান তাঁদের কোনও বদল হবে না। যে কোনও বিশ্বাসের মানুষ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ভারতের নাগরিক হতে পারেন। সরকার ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া সকলকে, যদি তাঁরা কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের, বিশেষ করে উত্তর পূর্বের সংস্কৃতিতে কুপ্রভাব না ফেলেন, নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ বন্দোবস্ত করেছে।"