ভারতের বিদেশনীতি জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে তৈরি। আন্তর্জাতিক দুনিয়া আঞ্চলিক ঐক্য এবং দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে মেনে চলে। এই বিশ্বাস থেকেই ভারত তার বিদেশনীতি গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এমনটাই জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। তিনি জানান, ভারত অবিলম্বে সংঘর্ষবিরতির ডাক দিয়েছে। হিংসা এবং হানাহানি বন্ধের আবেদন রেখেছে। পাশাপাশি, শান্তির চেষ্টার পাশে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এমনটাই জানান জয়শংকর। তিনি বলেন, 'আমরা নীতিগত ক্ষেত্রে একদম পরিষ্কার।'
জয়শংকর জানান, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে কী হচ্ছে, তার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের কোনও সম্পর্ক নেই। যুদ্ধ থামার পক্ষে ভারত সওয়াল করছে। রাষ্ট্রসংঘে রাশিয়ার আনা প্রস্তাবে ভারত ভোট দেয়নি। মানে, সমর্থন করেনি। কিন্তু, তারপরও রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি বন্ধ করতে ভারত নারাজ। লিখিত জবাবে বিদেশমন্ত্রী জানান, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর ভারত ইউক্রেন থেকে সাড়ে ২২ হাজার নাগরিককে ফিরিয়ে এনেছে। শুধু তাই না। বিশ্বের ১৮টি দেশের ১৪৭ জন নাগরিককেও ভারত এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উদ্ধার করেছে।
আরও পড়ুন- ‘কাশ্মীর ফাইলস’-এর প্রভাব, দিল্লির হোটেল ফেরাল কাশ্মীরের বাসিন্দাকে
রাজ্যসভায় কেরলের সাংসদ জোশ কে মনি অভিযোগ করেন, ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থান যেন নিশ্চল হয়ে গিয়েছে। ইউক্রেনের পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভারত কেবল অবিলম্বে হিংসা বন্ধের আর্জি জানিয়েছে। যা দেখে আমেরিকা তীব্র সমালোচনা করেছে। ভারত অবস্থানকে 'নড়বড়ে'ও বলেছে। চতুর্দেশীয় জোটের সদস্য ভারত এই ব্যাপারে আরও সোচ্চার হবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। এমনটাই আশা করেছিল আমেরিকা। কিন্তু, তা না-হওয়ায় ভারত-আমেরিকার বাণিজ্যে প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। সেসব নিয়ে বৃহস্পতিবার লিখিত জবাব দেন জয়শংকর।
জবাবে বিদেশমন্ত্রী জানান, ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের অবস্থান ছ'টি নীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে প্রথম হল, অবিলম্বে হিংসা বন্ধের আবেদন। কারণ, ভারত শান্তির পক্ষে। দ্বিতীয় হল, ভারত মনে করে কূটনীতি এবং বৈঠক ছাড়া ইউক্রেনে শান্তি ফিরবে না। তিন, ভারত বিশ্বাস করে যে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলে। আর এক্ষেত্রে, রাষ্ট্রসংঘের সনদ অনুযায়ী আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সব দেশের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। পাঁচ, ভারত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছে। ৯০ টনের বেশি সাহায্য ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে। আরও পাঠানো হবে, যার বেশিটাই ওষুধপত্র। ছয়, ভারত এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রশাসন, উভয়পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে।
Read story in English