জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের (ডব্লিউএফআই) সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির প্রতিবাদে দিল্লির রাজপথে নেমে প্রতিবাদে সামিল দেশের তাবড় কুস্তিগীররা। একাধিক রাজনৈতিক দল ক্রিড়াবিদদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। ভারতের রেসলিং ফেডারেশনের প্রধান বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষস্থানীয় কুস্তিগীরদের তোলা যৌন হয়রানির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে বিশেষ পরিদর্শক কমিটি যাঁর মাথায় কিংবদন্তি মহিলা বক্সার মেরি কম।
জানা গিয়েছে ২০১৩ সালের প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট (PoSH) আইন অনুসারে সেখানে নেই কোন অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (Internal Complaints Committee (ICC)। জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনই শুধু নয়, (ডব্লিউএফআই) ৩০টি জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনের মধ্যে ১৬টিতেই নেই কোন অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
যখন খেলাধুলায় মহিলাদের অংশগ্রহণের রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। খেলো ইন্ডিয়া গেমসে মহিলাদের অংশগ্রহণ ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আইন অনুসারে জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশগুলিতে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি থাকাটা বাধ্যতামূলক। ন্যূনতম চারজন সদস্য থাকতে হবে সেই কমিটিতে। তাদের মধ্যে অন্তত অর্ধেক মহিলা সদস্য হতে হবে। থাকবেন এক এনজিও বা মহিলার ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে এমন কোন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কোন ব্যক্তি। পাশাপাশি কমিটিতে থাকবেন একজন আইনজীবীও।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ৩০টি জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে কুস্তি সহ পাঁচটি ফেডারেশনের কোন অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিই নেই। ছয়টি ফেডারেশনে নেই আইন অনুসারে এনজিও বা মহিলার ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে এমন কোন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কোন ব্যক্তি। একটি ফেডারেশনের দুটি প্যানেল থাকলেও কোনটিরই আলাদা সদস্য ছিল না।
জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া
বর্তমান অবস্থা- আইসিসি নেই; একটি "তদন্ত কমিটি" আছে যার ছয় সদস্যের প্যানেলে দুজন মহিলা রয়েছেন, তবে আইন অনুসারে নেই কোন এক্সটারন্যাল মেম্বার।
এবিষয়ে সভাপতি সুধীর মিত্তাল বলেন, “সব বিষয়ের জন্য আমাদের একটি তদন্ত কমিটি আছে। আমরা আইন অনুসারে যে নির্দেশ রয়েছে তা মেনে চলছি, এক মাস আগে পর্যন্ত, কোন কমিটি ছিল না কিন্তু এখন আমাদের একটি কমিটি রয়েছে,”।
ভারতের টেবিল টেনিস ফেডারেশন
বর্তমান অবস্থা- আইসিসি নেই।
এবিষয়ে সংস্থার মহাসচিব কমলেশ মেহতা বলেন, যেহেতু নতুন প্রশাসন মাত্র কয়েক মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছে, আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এবং এক মাসের মধ্যে একটি আইসিসি গঠি হবে,"।
হ্যান্ডবল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া
বর্তমান অবস্থা- আইসিসি নেই।
রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া
বর্তমান অবস্থা- আইসিসি নেই।
ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়েছে বর্তমান ঘটনার পরে, সরকার গত সপ্তাহে আইওএ-নিযুক্ত অ্যাড-হক কমিটির কাছে ফেডারেশনের প্রতিদিনের বিষয়গুলি হস্তান্তর করেছে।
ভলিবল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়াতেও নেই কোন অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি। এবিষয়ে মহাসচিব অনিল চৌধুরী বলেন, “যদি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে তবে তা ফেডারেশনের সাধারণ সভায় ওঠে তারপরে সকল সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন কী করতে হবে। আলাদা করে কোন কমিটি নেই”।
ভারতের জুডো ফেডারেশনে আইসিসি সদস্য মাত্র তিনজন। ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়েছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই চতুর্থ সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
বিলিয়ার্ডস ও স্নুকার ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়াতেও আইসিসির সদস্য মাত্র তিনজন। এবিষয়ে সভাপতি এস বালাসুব্রমানিয়াম বলেছেন, "আমরা এটি খতিয়ে দেখব এবং অবিলম্বে যা করণীয় তাই করা হবে”।
স্কোয়াশ র্যাকেটস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া- সেখানেও আইসিসি সদস্য সংখ্যা মাত্র তিন।
ভারতের ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন
আইসিসির কোন এক্সটারন্যাল মেম্বার নেই।
তীরন্দাজ অ্যাসোসিয়েশনেও আইসিসির কোন এক্সটারন্যাল মেম্বার নেই।
ভারতের বাস্কেটবল ফেডারেশনেও আইসিসির কোন এক্সটারন্যাল মেম্বার নেই।
ভারোত্তোলন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়াতে দুটি কমিটি রয়েছে। একটি তিন সদস্যের আইসিসি এবং একটি চার সদস্যের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি কিন্তু নেই কোন এক্সটারন্যাল মেম্বার, পাশাপাশি নেই কোন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য।
ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পিটি ঊষা বুধবার দিল্লির যন্তর মন্তরে পৌঁছেন। সেখানে তিনি গত ১১ দিন ধরে বিক্ষোভকারী ভারতীয় মহিলা কুস্তিগিরদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের (ডব্লিউএফআই) সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন মহিলা কুস্তিগিররা। তাঁদের অভিযোগ, জাতীয় শিবিরে দেশের মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হয়রানি করা হয়েছে।
বিক্ষোভস্থলে ঊষাকে কুস্তিগির সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগত এবং বজরং পুনিয়ার সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। সপ্তাহখানেক আগেই ঊষা অবশ্য অন্য কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ক্রীড়াবিদদের ‘রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা’ শৃঙ্খলাহীনতার পরিচয়। আর, তা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। ঊষা আরও জানিয়েছিলেন যে, ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এবং ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির সরকার সবসময় খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়িয়েছে’। আর, ‘খেলাধুলা এবং ক্রীড়াবিদদের অগ্রাধিকার’ দিয়েছে। সেসব বলার ঠিক একসপ্তাহ বাদে ঊষা কিন্তু, বুধবার বিক্ষোভকারী কুস্তিগিরদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন।
কুস্তিগির বজরং পুনিয়াও ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির সঙ্গে কথা বলার পর জানিয়েছেন, ‘তিনি (পিটি ঊষা) বলেছেন যে আমাদের পাশে আছেন। আমরা ন্যায়বিচার পাব। তিনি প্রথমে একজন ক্রীড়াবিদ এবং তারপরে অন্য কিছু। তিনি আরও জানিয়েছেন যে আমাদের সমস্যাটি দেখবেন। আর, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন। ব্রিজভূষণ শরণ সিং জেলে না-যাওয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব।’