কেন্দ্রের ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরের নোট বাতিলের বিজ্ঞপ্তিটিকে "বেআইনি" বলে অভিহিত করেছেন বিচারপতি বি ভি নাগারথনা এবং বিজ্ঞপ্তিটিকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদনকারীদের সঙ্গেও তিনি একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমার বিবেচনা অনুযায়ী, ৮ নভেম্বরের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নোটবন্দীকরণের পদক্ষেপটি ছিল একটি বেআইনি পদক্ষেপ'। তিনি বলেন, 'সেদিনের নোটবন্দীকরণ "ক্ষমতার অপব্যবহার, আইনের পরিপন্থী এবং তাই এটি বেআইনি' । বিচারপতি নাগারথনা বলেন, 'আমার মতে, নোটবন্দি আইনের পরিপন্থী, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ'।
উল্লেখ্য সুপ্রিম কোর্ট আজ কেন্দ্রের ২০১৬ সালের কেন্দ্রের নোট বাতিলকে সমর্থন করেছে। নোটবন্দি মামলায় ৫৮টি আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। সোমবার এই মামলার রায় ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিল, সুপ্রিম কোর্ট মনে করে যে আরবিআই আইনের ধারা ২৬(২)-এর অধীনে দেওয়া ক্ষমতা ব্যবহার করে সম্পূর্ণ সিরিজের ব্যাঙ্ক নোট বাতিল করা যেতে পারে। তবে কোনো নির্দিষ্ট সিরিজের জন্য তা প্রযোজ্য নয়।
২০১৬ সালে দেশে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটবন্দি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই বছরের ৮ নভেম্বর, রাত ৮টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, সাধারণের কাছে ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকা থাকলে তা যেন ব্যাঙ্কে জমা করে দেওয়া হয়। আচমকা সেই নির্দেশে দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় হট্টগোল। প্রতিটি ব্যাঙ্কের সামনেই দেখা যায় লম্বা লাইন। বেশ কিছু অঘটনও ঘটে। এইসবের পরিপ্রেক্ষিতে পালটা সুপ্রিম কোর্টেও বেশ কিছু মামলাও দায়ের করা হয়। আর সেই সব মামলারই দীর্ঘ শুনানি চলার পর আজ রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রের নোটবন্দি প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে সুপ্রিম কোর্ট এ দিন বলে,সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ নয়। কারণ, যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েই কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিল।
আরও পড়ুন: < রাজৌরিতে ‘টার্গেট কিলিং’য়ের বলি শিশু, উত্তাল উপত্যকায় বনধ >
নোটবন্দি নিয়ে সুপ্রিম রায়ে বিরাট স্বস্তি মোদী সরকারের। ২০১৬-এর ৮ নভেম্বর ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে কোনও ভুল ছিল না হলেই মনে করে দেশের শীর্ষ আদালত। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন বিজেপি সরকার। তবে কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। সোমবার সেই মামলার রায়েই মোদী সরকারকে বড়সড় স্বস্তি দিল শীর্ষ আদালত।
কেন্দ্রীয় সরকারের নোটবন্দির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদে সরব হয় বিরোধীরা। বিভিন্ন মহল থেকে ওঠে প্রতিবাদ। কেন্দ্রের তৎকালীন মোদী সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ৫৮টি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। পিটিশন দাখিল করে আবেদনকারীরা যুক্তি দিয়ে দাবি করেন যে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে মোদী সরকার নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিলেরও আবেদন জানানো হয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতে। যদিও সেই সময়েই কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীও পাল্টা সওয়ালে যুক্তি দিয়ে দাবি করেছিলেন যে সরকারে সিদ্ধান্ত বদল করা সম্ভবপর হবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত ৮টায় আচমকা পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করে দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার বদলে নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট আনার ঘোষণা করেন মোদী। এদিকে আকস্মিকভাবে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের এই ঘোষণায় উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয় দেশজুড়ে। পুরনো নোট বদলে নতুন নোট নেওয়ার লম্বা লাইন পড়ে যায় ব্যাঙ্কগুলিতে। দেশবাসীকে তরম সমস্যা ফেলেছে মোদী সরকার, বিজেপিকে আক্রণ করে সোচ্চার হতে থাকে বিরোধীরা।
সুপ্রিম কোর্টেও মামলার পর মামলা দায়ের হতে থাকে। তবে সেই মামলার রায়েই এবার বিরাট স্বস্তি মোদী সরকারের। কালো টাকার কারবারিদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাই ২০১৬ সালে নোট বাতিলের মূল লক্ষ্য ছিল বলে দাবি করেছিল মোদী সরকার। তবে বাস্তবে তৎকালীন নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সিদ্ধান্তের সুফল মেলেনি বলেই দাবি ওয়াকিবহাল মহলের একটি বড় অংশের।