সোমবার গভীর রাতে প্যারিসের ঐতিহাসিক এবং বিশ্বখ্যাত নোতর দাম ক্যাথিড্রালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের জেরে দেশ জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ দেশবাসীকে জানিয়েছেন, ক্যাথিড্রালের পুনর্নির্মাণ করবে তাঁর সরকার, এবং এই কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহে ইতিমধ্যেই নেমে পড়েছে ফ্রান্স। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, আগুন আপাতত সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণাধীন। এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন সারা বিশ্বের মানুষ, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ এবং একাধিক রাষ্ট্রনেতা।
দ্বাদশ শতাব্দীর এই ক্যাথিড্রালের ছাদ এবং চূড়ো প্রায় পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেছে, যদিও দমকল বাহিনীর কঠিন পরিশ্রমের ফলে দুটি ঘন্টা ঘর এবং গির্জার মূল পাথরের স্থাপত্যের কাঠামোটি রক্ষা পেয়েছে। আপাতত এই আগুনকে দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছে পুলিশ। মঙ্গলবার, অর্থাৎ আজ ভোর রাত পর্যন্ত দেখা যায়, ঘন হলদেটে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন গির্জা এবং সংলগ্ন এলাকা। খবরে প্রকাশ, মেরামতির কাজ চলছিল ক্যাথিড্রালের বেশ কিছু অংশে, যার ফলে লোহার ভারা বাঁধা আছে কয়েক জায়গায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাড়ে আটশো বছরেরও বেশি প্রাচীন এই ক্যাথিড্রালের কাঠের ভাস্কর্য এবং প্রশস্ত খোলা জায়গা, সঙ্গে আধুনিক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার অভাব, এই দুইয়ের ফলে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সোমবারের আগুন। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে গির্জার ছাদের দুই তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, যার ফলে নোতর দামে সংরিক্ষত বিপুল পরিমাণ প্রাচীন খ্রিস্টীয় শিল্পকর্মের ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা। ক্যাথিড্রালের রেক্টর মঁসিয়ো প্যাট্রিক শভে জানিয়েছেন, গির্জার সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ, ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সময় যিশুখ্রিস্ট যে কাঁটার মুকুট পরেছিলেন তার কথিত অবশিষ্টাংশ, আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে ঘটেছিল, তা এখনও জানা যায়নি, কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কি আর কিছু করা যেত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না। "বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের পরিস্থিতিতে কিছু করার থাকে না," বলেন জন জে কলেজের অগ্নি বিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্লেন করবেট।
সোমবার রাতে দেখা যায়, দমকল বাহিনীর সমস্ত হোসপাইপ তুচ্ছ করে দিয়ে কমলা রঙের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নিচ্ছে ক্যাথিড্রালের কাঠের ছাদ, জ্বলছে ঘন্টার পর ঘন্টা। গির্জার তিনশো ফুট উঁচু চূড়া খসে পড়ে আগুনের দাপটে, হাওয়ায় ভাসতে থাকে ক্রিকেট বলের আয়তনের স্ফুলিঙ্গ। মার্কিন অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জি কিথ ব্রায়ান্ট বলছেন, যে যে কারণে সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় নোতর দাম, ঠিক সেই সেই কারণেই এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। গির্জাটির বয়স, বিশাল আয়তন, ফরাসি গথিক ডিজাইনের পাথরের দেওয়াল এবং গাছের গুঁড়ির আকারের কড়িকাঠ - এসবই আগুনকে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে।
এই জাতীয় বিল্ডিংয়ে ভেতর থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা বৃথা। দমকল কর্মীদের অনেক বেশি রক্ষণাত্মক হতে হয়, "আগুনকে বাইরে থেকে আক্রমণ করতে হয়", বলেন ব্রায়ান্ট। আরও একজন বিশেষজ্ঞের মতে, বিশ্বের বহু ধর্মস্থানে অগ্নি নির্বাপণের কোনো পরিকল্পনাই নেই, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান না হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এইসব বাড়িকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হতো।
So horrible to watch the massive fire at Notre Dame Cathedral in Paris. Perhaps flying water tankers could be used to put it out. Must act quickly!
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) April 15, 2019
পরিশেষে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা কতটা কার্যকরী? টুইটারে ট্রাম্প লেখেন, ট্যাঙ্কার জেট দিয়ে জ্বলন্ত গির্জার উপরে জল ঢালা হোক। উত্তরে ফরাসি প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ টুইট করেন যে তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি, কারণ আগুনে পুড়ে এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়া কাঠামো জলের ভার বইতে না পেরে পুরোপুরি ধ্বসে পড়তে পারত।