আশঙ্কার মেঘ ছিলই, তবে আসামের নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ পেতে সেই মেঘ যেন আরও গাঢ় হল। নাগরিকপঞ্জি অর্থাৎ এনআরসির তালিকা থেকে বাদ পড়ল প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম। কোথায় যাবেন তাঁরা? এই প্রশ্ন সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। যদিও নয়া দিল্লির তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে আসামের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া একান্তই 'অভ্যন্তরীণ ব্যাপার'। সূত্রের খবর, বাংলাদেশ সফরের সময় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই বলেই আশ্বস্ত করেছিলেন পড়শি দেশকে। কিন্তু তবুও এনআরসি নিয়ে 'সর্তক' বাংলাদেশ, এমনটাই খবর।
আরও পড়ুন: নাগরিকপঞ্জি: হিন্দু না ওরা মুসলিম…
জানা যাচ্ছে, অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে কথাবার্তার পরই এই মন্তব্য করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। তবে বাংলাদেশের 'বাড়তি নজর'-এর কারণ হিসেবে রয়েছে অমিত শাহের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশের আলোচনার (এইচএমএলটি) সপ্তম বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সামনে অবৈধ অভিবাসনের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন অমিত শাহ। বৈঠক শেষে সরকারী প্রতিবেদনে বলা হয়, "মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত দিয়ে অবৈধ চলাচল নিয়ে সমস্যার সমাধানের বিষয়টি উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।"
আরও পড়ুন: বিজেপি খুশি নয়, আসাম এনআরসি থেকে কেন এত কম মানুষ বাদ পড়লেন, প্রশ্ন বিশ্বশর্মার
যদিও বাংলাদেশের সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ভারতের এহেন অবস্থান নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন, বরং তাঁরা উন্নয়নের দিকেই 'নজর' রাখছেন। তবে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চলতি বছরের জুলাই মাসেই এনআরসির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ১৩ জুলাই বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোমেন বলেছিলেন, "আমরা নিজেরাই প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কঠিন সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের পক্ষে আর কাউকে (উদ্বাস্তু) নেওয়া সম্ভব নয়। এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনবহুল দেশ বাংলাদেশ।"
আরও পড়ুন: ‘মুসলিমদের নিশানা করার বৃহত্তর নীতির অঙ্গ’, এনআরসি নিয়ে টুইট ইমরানের
তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে, আসামের এনআরসি প্রক্রিয়া অনুসারে বাদ পড়া অভিবাসীদের বাংলাদেশি নাগরিক বলতে অস্বীকার করেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, "যাঁরা ৭৫ বছর ধরে সেখানে আছেন, তাঁরা ভারতেরই নাগরিক, আমাদের নন।" উল্লেখ্য, এই প্রথমবার আসামের এনআরসি নিয়ে মুখ খোলে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে যখন ৪০ লক্ষ অভিবাসীর নাম নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ে, সেই সময় বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন, "আমরা এই বিষয়টিকে ভারতের আসাম রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবেই দেখছি"।