Advertisment

ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে অবিলম্বে অমুসলমান বন্দিদের মুক্তির দাবি নেলেকের

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দাবি জানাল আরএসএস সমর্থিত নর্থইস্ট লিঙ্গুইস্টিক এন্ড এথনিক কোঅর্ডিনেশন কমিটি বা নেলেক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে অবিলম্বে অমুসলমানদের বন্দিদের মুক্তির দাবি নেলেকের।

দেশজুড়ে ২০১৫ সালের জোড়া নোটিফিকেশনের উপর ভিত্তি করেই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া। ব্যাতিক্রম আসাম। উত্তর পূর্বের এরাজ্যেও ওই জোড়া নোটিফিকেশনের ভিত্তিতে প্রত্যেকটি ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে অমুসলমানদের বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। এই মর্মেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দাবি জানাল আরএসএস সমর্থিত নর্থইস্ট লিঙ্গুইস্টিক এন্ড এথনিক কোঅর্ডিনেশন কমিটি বা নেলেক।

Advertisment

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে স্মারকপত্র পাঠিয়ে তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন নেলেকের সদস্যরা। আসামের বরাক উপত্যকার তিনটি জেলার জেলাশাসক এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে স্মারকপত্র পাঠানো হয়।

নর্থইস্ট লিঙ্গুইস্টিক এন্ড এথনিক কোঅর্ডিনেশন কমিটি সদস্যরা এব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেদের কথাগুলো তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ''ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকার যন্ত্রণা ভোগ করতে না পেরে দুলাল পালের মৃত্যু এবং তার পরিবারের দুরবস্থায় আবারও প্রমাণ হয়েছে রাজ্যের হিন্দুরা কতটুকা অসুরক্ষিত রয়েছেন। একজন ব্যক্তি যার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ভারতীয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ডিটেনশন ক্যাম্পের যন্তরণা ভোগ করতে বাধ্য করা হয়। তারপর তার সন্তানরা যখন দাবি করলেন তাদের বাবাকে ভারতীয় বলে স্বীকৃতি দিলে মৃতদেহ গ্রহণ করবেন, তাতেও প্রায় ১০ দিন পার করে দেওয়া হয়। শেষে পরিবারের কাছে মাথা নত করল সরকার এবং মৃত্যুর পর দুলাল পাল ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন। মানবিকতার দিক দিয়ে এটি একটি চরম হেনস্থা। এধরনের ঘটনা আরও অনেক ঘটছে যেখানে প্রকৃত হিন্দু ভারতীয়রা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। একই ধারা বজায় থেকেছে এনআরসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও।''

publive-image নেলেকের সমাবেশ।

''সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রতীক হাজেলাকে এনআরসি প্রক্রিয়ার সমন্বয়ক নিযুক্ত করা হয় এবং তিনি তার নিজস্ব স্বার্থে লক্ষ লক্ষ হিন্দুদের বঞ্চিত করেন। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা নিজে স্বীকার করছেন এনআরসি প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশকারীরা স্থান পেয়েছে এবং প্রকৃত ভারতীয় হিন্দুরা বঞ্চিত হয়েছেন। এরপর শুধু প্রতীক হাজেলাকে প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনও বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ত্রিপুরার মত রাজ্যের নথি প্রদান করে অসমে বাঙালিরা নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আমরা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে জানতে চাই ত্রিপুরা কি ভারতের অঙ্গ নয়? সেই রাজ্যের নথি অসমে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের কেন অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে? রাজ্যের প্রতীক্ষা জেলা নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে হিন্দুদের বঞ্চিত করেছেন, এটা প্রায় প্রমাণিত। তাহলে তার ভুলগুলো শুধরে নিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের যোগ্য সম্মান কেন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না?''

আরও পড়ুন: ‘ভারত আমাদের গ্রহণ না করলে গুলি করে দিক’, বললেন আসামের সাবিত্রী দাস

সংগঠনের তরফে আরও বলা হয় যে ''রাজ্যের হিন্দু নাগরিকরা বিজেপির উপর আস্থা দেখিয়ে উজাড় করে ভোট দিয়েছেন। ২০১৪ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক উপনির্বাচন পর্যন্ত বিজেপি প্রত্যেক ক্ষেত্রে হিন্দুদের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় রয়েছে। অথচ সরকারের তরফেও আসাম রাজ্যে হিন্দুদের সুরক্ষার ব্যাপারে একপ্রকার উদাসীন মনোভাব দেখাচ্ছে বিজেপি। ‌তাদের কাছে ধীরে ধীরে হিন্দুদের সুরক্ষার দাবিগুলো ক্ষীণ হয়ে আসছে। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দিকগুলোকে অবিলম্বে তাঁর নজরদারিতে নিয়ে আসুন। ''

আরও পড়ুন: বাংলায় এনআরসি দরকার নেই, আসাম নিয়েও আপত্তি আছে, শাহকে জানালেন মমতা

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকপত্র পাঠিয়ে ছয়টি দাবি জানিয়েছি নেলেক। দাবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, অবিলম্বে রাজ্যে ২০১৫ সালের জোড়া নোটিফিকেশন কার্যকর করে প্রত্যেকটি ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে অমুসলমান বন্দীদের মুক্ত করা হোক। এনআরসির প্রক্রিয়ায় ইচ্ছাকৃত ভুল ত্রটির মাধ্যমে যে হিন্দুরা বাদ পড়েছেন তাদের বিনাশর্তে তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হোক। নিরপেক্ষভাবে রাজ্যে ও মুসলমান নাগরিকদের প্রমাণপত্র পরীক্ষা করার জন্য একটি উচ্চস্থরীয় দল গঠন করা হোক। এর মধ্যে প্রাক্তন এবং বর্তমানে কার্যরত বিচারপতিদের রাখা হোক। কেন্দ্রীয় স্তরে একটি মানবাধিকার সুরক্ষা কমিটি গঠন করে রাজ্যের প্রত্যেক হিন্দুকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। বলা হয়েছে, সরকারিভাবে সীমান্ত পুলিশকে কড়াভাবে নির্দেশ দেওয়া হোক যেন তারা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি, জৈন এবং শিখ ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের বিরুদ্ধে ডি-ভোটার নোটিস জারি না করেন। সর্বশেষ দাবি ডিটেনশন ক্যাম্পে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারকে অন্তত কুড়ি লক্ষ টাকার অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক।
সংগঠনের তরফে মানবাধিকার কমিশন এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও তাদের দাবি সম্বলিত সড়ক পত্রের প্রতীলিপি পাঠিয়েছে নেলেক।

publive-image প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দাবি জানাল আরএসএস সমর্থিত নর্থইস্ট লিঙ্গুইস্টিক এন্ড এথনিক কোঅর্ডিনেশন কমিটি।

কাছাড়ের প্রশাসকের কাছে স্মারকপত্র দিতে উপস্থিত ছিলেন নেলেকের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি ডঃ বিভাস দেব, উপদেষ্টা শুভ্রাংশু শেখর ভট্টাচার্য, ডঃ অভিজিৎ নাথ, আশীষ হালদার এবং কোষাধ্যক্ষ জয়দীপ দত্ত জয়দীপ দত্ত। কাছার সহ হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জের জেলাশাসকের মাধ্যমেও নেলেকের পক্ষ থেকে একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে স্মারকপত্র প্রদান করা হয়েছে।

আসাম রাজ্যে জোড়া নোটিফিকেশন চালু করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে নর্থইস্ট লিঙ্গুইস্টিক এন্ড এথনিক কোঅর্ডিনেশন কমিটি। গত মাসে বরাক উপত্যকার তিন জেলায় এই দাবির সমর্থনে বিরাট জনসমাবেশ গড়ে তুলেছিলেন তারা। সম্প্রতি মোহন ভাগবত শিলচরে তিন দিনের একটি বৈঠক করে গেছেন। তার সঙ্গে দেখা করতে আসামে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব সহ উত্তর-পূর্বের বড় মাপের নেতারা শিলচরে এসেছিলেন। মোহন ভাগবতের বৈঠকের পর আরএসএস সমর্থিত নেলেক তাদের দাবিটি আবার জোড়াল করতে মাঠে নেমেছে।

এর আগে আসামে এনআরসির সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিল সংগঠনটি। গতবছর পুজোয় এক অনুষ্ঠানে মহিষাসুরের জায়গায় প্রতীক হাজেলার প্রতিকৃতি বসিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সংগঠনের সদস্যরা। এনআরসির প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার পর এবার সুপ্রিম কোর্ট হাজেলাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় উদ্যোগ নেয়। এব্যাপারে তাদের বয়ান, শুধুমাত্র হাজেলার অপসারণে কোনও কাজে আসবে না, দেশের যেসব প্রকৃত নাগরিক এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তাদের অবিলম্বে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

Assam nrc
Advertisment