কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আরও একবার জানিয়েছেন সারা দেশে এনআরসি হবে। এবার এ কথা তিনি ঘোষণা করেছেন সংসদে। তাঁর ঘোষণার পরেপরেই ত্রিপুরার একজনও সোৎসাহে নাগরিকত্ব রেজিস্টার সংস্কারের ব্যাপারে অতি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। তবে তাঁর একটা নতুন ফর্মুলা আছে। তিনি চান বেআইনি অভিবাসীদের চিহ্নিত করা হোক, কিন্তু তাঁদের জেলে রাখা বা অধিকার খর্ব করা অথবা তাঁদের প্রত্যর্পণ করার দরকার নেই।
ত্রিপুরা রাজপরিবারের বর্তমান বংশধর তথা প্রাক্তন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মণ সুপ্রিম কোর্টে গত বছরের ২২ অক্টোবর একটি আবেদন দাখিল করেছিলেন। সেখানে তিনি ত্রিপুরায় এনআরসি সংস্কারের কথা বলেছিলেন। তাঁর এ হেন আবেদনের ফল তাঁর পক্ষে থুব ভাল হয়নি, এমনকি নিজের প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিত্বও হারাতে হয়েছিল তাঁকে।
আরও পড়ুন, আসাম এনআরসি নিয়ে কেন অসন্তুষ্ট বিজেপি, কেন তারা আগে ক্যাব চায়?
প্রদ্যোৎবাবুর কথায় সারা ভারত কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক লুইজিনহো ফালেরিও তাঁকে বলেন হয় এনআরসি আবেদন প্রত্যাহার করতে নয়ত তাঁর জায়গায় প্রাক্তন বিজেপি নেতাদের কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হবে। এ ঘটনার জেরে তিনি পদত্যাগ করেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডট কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রদ্যোৎকিশোর বলেন, ত্রিপুরায় এনআরসি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে মানুষকে ভারত থেকে চিহ্নিত করে, বাদ দিয়ে, প্রত্যর্পণ করতে হবে।
তিনি বলেন, "আসামের এনআরসি ফর্মুলা আসাম চুক্তি মোতাবেক। আমার এনআরসি পর্যালোচনা ভারতের সংবিধানের উপর ভিত্তি করে। এ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা, আশা করি মানুষ এ দুটো গুলিয়ে ফেলবেন না।"
তাঁর এনআরসি কেমন হবে এ প্রশ্নের উত্তরে প্রদ্যোৎ বলেন, "ভারতে যে জন্মেছে, সেই ভারতীয়। আমার আবেদনের প্রেক্ষিত সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে ভারতীয় নাগরিক কীভাবে স্থির হবে তা নিয়ে বলা রয়েছে। আমি চিহ্নিত করার পক্ষে। আমি বলেছি কেউ যদি ভারতে বেআইনি ভাবে এসে থাকে তাহলে তাকে সাংবিধানিক পদ বা সরকারি চাকরি দেওয়া যাবে না। কিন্তু তাঁদের শিক্ষার অধিকার, স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকার, ধর্মাচরণের অধিকার সহ সমস্ত অধিকার থাকবে।"
গত ৬ দশক ধরে ভারতে দলাই লামা এবং তিব্বতি শরণার্থীদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, "দেশের এখন একটা জাতীয় শরণার্থী নীতি প্রয়োজন, যা আশ্রয়প্রার্থীদের আইনভঙ্গ না করে শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচার অধিকার দেবে।"
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন বিজেপি-আইপিএফটি প্রশাসন, প্রাক্তন বাম আমল এবং ১৯৮৩-৯৩-এর কংগ্রেস প্রশাসনে অনেকেই সাংবিধানিক পদে ছিলেন যাঁরা ভারতীয় নাগরিকই নন।
তাঁর নিজের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রদ্যোৎ বলেন, তিনি নতুন কোনও দল গটন করতে চান না, তবে ত্রিপুরার সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে একটি মঞ্চ তৈরি করতে চান তিনি।
রাজ্যের উপজাতি উন্নয়ন, এনআরসি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা, অষ্টম তফশিলে ককবরক ভাষার স্বীকৃতি, ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত এলাকায় উপজাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত ইস্যু তুলে ধরতে চান তিনি।