অযোধ্যায় রামজন্মভূমিতে তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির। রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র। তিনি কথা বলেছেন ভূপেন্দ্র পাণ্ডে ও পি বৈদ্যনাথন আইয়ারের সঙ্গে।
প্রশ্ন- আপনি একজন আইএএস অফিসার হিসেবে রাজ্য এবং কেন্দ্রে দায়িত্ব সামলেছেন। ২০২০ সাল থেকে আপনি শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান। এই তিন বছরে কতটা শিখলেন?
অর্থনীতিতে সব ক্ষেত্রেই একটা দৃষ্টিকোণ রয়েছে। তাছাড়াও কিন্তু, আরও একটা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আমি এখানে আসার পর সেটা খুব স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি। বিশেষ করে প্রযুক্তি বা ইঞ্জিনিয়ারিঙের ক্ষেত্রে তো অনেকগুলি দৃষ্টিভঙ্গি আছে। যেমন ধরুন, লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো এবং টাটা কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে যখন কথা হয়েছে, তখন সকলেই ভিত তৈরিতে পাইল ফাউন্ডেশন পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। পশ্চিমের দেশগুলোয় ১০০ তলা বিল্ডিং তৈরির জন্য পর্যন্ত পাইল ফাউন্ডেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আর, এই মন্দির তো মাত্র তিনতলা। তাই পাইল ফাউন্ডেশন ব্যবহারে কোনও অসুবিধা নেই। তাই পাইল ফাউন্ডেশনের ব্যবহার করা হবে বলেই ঠিক হল। সিদ্ধান্তটা ঠিকঠাক কি না, তা জানতে পাঁচটি নমুনা পরীক্ষা করা হল। কতটা লোড নিতে পারছে, সেটা দেখার জন্য। সেই সময় কেউ একজন আমার কানে ফিসফিস করে বলল, 'স্যার, তিনটি নমুনা একটু কাত হয়ে গিয়েছে।' আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, এটা লুকিয়ে রাখার কোনও দরকার নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞদের ব্যাপারটা জানানো যাক।
আমরা আইআইটি দিল্লির প্রাক্তন ডিরেক্টর এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের অন্যতম ভিএস রাজুর সঙ্গে কথা বলেছি। চেন্নাই, কানপুর, সুরাট এবং গুয়াহাটি আইআইটির বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, রুরকির বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। লার্সেন অ্যান্ড টুবরোর ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁরা প্রায় ৫-৬ দিন ধরে কথা বলেছেন। কেউ বলেছেন পাইল ফাউন্ডেশনের কথা। কেউ আবার ভিত খুঁড়ে বানানোর কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন- সেনাঘাঁটির বাইরে জড় হচ্ছেন ইমরানের সমর্থকরা, পিছু হঠবে পাক সেনা?
এবার উঠে এসেছে আবেগের প্রসঙ্গ। আমি ট্রাস্টের লোকেদের ডেকেছিলাম। তাঁদের ব্যাপক ধর্মীয় বিশ্বাস। ৬০-৭০ বছর ধরে আন্দোলন চালিয়েছে। তাঁদের অনেকেরই আবার দাবি, এই মন্দিরও আমাদের প্রাচীন মন্দিরগুলোর মত ১,০০০ বছর ধরে টিকে থাকবে, এমন করে বানাতে হবে। আমি অধ্যাপক রাজুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, প্রাচীন মন্দিরগুলো কীভাবে বানানো হয়েছিল, সেসব নিয়ে তাঁর কাছে কোনও কাগজ আছে কি? তিনি জানিয়েছেন, প্রাচীন মন্দিরগুলো তৈরির কায়দা নিয়ে কোথাও পড়ানো হয় না। সেটা জানতে গেলে প্রযুক্তিবিদদেরকে কিছু নমুনা দিতে হবে। যেখানে হাতেকলমে তাঁরা ব্যাপারটা দেখে নিতে পারবেন। কিন্তু, ধর্মবিশ্বাস আবার ইঞ্জিনিয়ারদের সেই সুযোগ দেবে না। এক্ষেত্রে ধর্মবিশ্বাসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশ বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হবে, এই আহ্বানের ব্যাপারে দেশের যুবসমাজ অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমার মনে হয়, সেটা আরও চাগিয়ে দেওয়া উচিত। এই মন্দির আমাদের গর্বের আরও একটা কারণ হয়ে উঠবে।