নেতাজির মত সাহস অন্য কারও ছিল না। তিনি ক্ষমতাসীন শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সাহস দেখিয়েছিলেন। বণিকসভা অ্যাসোচেম আয়োজিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস স্মারক বক্তৃতায় এমনটাই বললেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। নেতাজির প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'জনগণের সামর্থ্যের প্রতি নেতাজির অগাধ বিশ্বাস ছিল। আজ, আমাদের নাগরিকদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের আন্তর্জাতিকস্তরে প্রতিযোগিতার জন্য উপযুক্ত করে তোলার দিকে নজর দেওয়া উচিত।'
সুভাষচন্দ্র বোসের অসাধারণ কৃতিত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডোভাল দেশের জন্য নেতাজির অবদান, তাঁর সাহসিকতা এবং দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। নেতাজি নির্ভীক হয়ে যেভাবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, তাঁর কলেজ জীবনে একজন ব্রিটিশ অধ্যক্ষের বিরোধিতা করেছিলেন, অল্পবয়সে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছিলেন, এমনকী মহাত্মা গান্ধীকেও অস্বীকার করেছিলেন- দোভাল সেই সব প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
একইসঙ্গে ডোভাল বলেন, 'গান্ধীর প্রতি নেতাজির গভীর শ্রদ্ধা ছিল। তবে, বোসের মত সাহস অন্য কারও ছিল না। পরিণতি যাই হোক না-কেন, ক্ষমতাসীন শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার মত সাহস তাঁর মধ্যে ছিল। আইসিএসের জন্য লন্ডনে যাত্রা থেকে শুরু করে বন্দি থাকার সময় ভারত থেকে পালানো পর্যন্ত, তাঁর এই সাহসিকতার পরিচয় সারা জীবনই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। তিনি অতুলনীয় সাহসিকতা এবং সংকল্প প্রদর্শন করেছিলেন।'
বিভিন্ন পটভূমির লোকেদের একত্রিত করার মত নেতাজির ক্ষমতা এবং তিনি কীভাবে একীভূত ও শক্তিশালী ভারতের কল্পনা করেছিলেন, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে নেতাজির উত্তরাধিকার হিসেবে সেই শক্তিশালী ভারত গঠনের দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার ওপর দোভাল জোর দেন। তিনি বলেন, 'বোসের নেতৃত্ব ছিল ব্যতিক্রমী। তিনি ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত বিভাজন অতিক্রম করে ভারতকে একটি বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সেই অখণ্ড ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি কদম কদম বাড়ায়ে জা-এর আহ্বানের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছিল। তিনি দেশবাসীকে লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তাঁদের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষ হলেও তিনি ছিলেন গভীরভাবে ধার্মিক। তাঁর দেশপ্রেম ছিল একটা আবেগ। আর, মহান ভারতের অটল স্বপ্ন দ্বারা চালিত।'
আরও পড়ুন- তিনমূর্তি হাউস মিউজিয়াম ও লাইব্রেরি থেকে বাদ নেহরুর নাম, কীভাবে ঘটল বদল?
দোভাল বলেন, 'বোসের চেষ্টা ছিল স্মারকের তুল্য। তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে রোমান্টিক আদর্শ এবং এক মহান ভারতের জন্য তার অটল আশা স্বাধীনতার যাত্রাপথে দেশবাসীকে ইন্ধন জুগিয়েছিল। ইতিহাস হয়তো তাঁর প্রতি নির্দয় ছিল। কিন্তু, তাঁর প্রভাব এবং জাতীয়তাবাদ মৃত্যুর পরেও অব্যাহত ছিল। তিনি অগণিত ভারতীয়দের হৃদয় ও মনে এক অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছেন। যার দ্বারা দেশবাসী অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।'