রাস্তা দিয়ে ছুটে পালাচ্ছে অপরাধী। তার পিছনে ধাওয়া করছেন পুলিশের বিশেষ বাহিনী। সোজা কথায় বললে এনকাউন্টার স্পেশালিস্টরা। বলিউডের দৌলতে এই সব দৃশ্য, আট থেকে ৮০- আপামর ভারতবাসী দেখে ফেলেছেন। আর, 'অব তক' থেকে হাজারো 'তক' মার্কা এমন ধরনের বিভিন্ন সিনেমা করায় অভিনেতা নানা পাটেকরকে পার্ট টাইম এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট বললেও ভুল বলা হবে না। কিন্তু, রিল নয় রিয়েল লাইফে, এমন দৃশ্য ক'জনই বা দেখেছেন! এবার তেমনই দৃশ্য কিন্তু দেখা গেল হরিয়ানার ফরিদাবাদে। এখানে অবশ্য কোনও মাফিয়া গ্যাংয়ের সদস্য নয়। অপরাধী একজন বজরং দলের নেতা। নাম, রাজ কুমার। তবে, এই নামে তাকে খুব বেশি লোক চেনে না। কিন্তু, বিট্টু বজরঙ্গী বললে একডাকে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকার কাছে নামটা যেন চেনা ঠেকবে। বিশেষ করে সম্প্রতি হরিয়ানায় ঘটে যাওয়া নুহ হিংসার পর।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুব বাহিনী বজরং দলের গোরক্ষা বিভাগে ফরিদাবাদের প্রধান এই বিট্টু। বজরং দলের নেতা বলে পরিচিত বজরঙ্গী নামে। সংঘ পরিবারে মারকাট্টা বাহিনী হিসেবে বজরং দলের কুখ্যাতি দেশজোড়া। আর, বজরং দলের নেতাদের ভাষণের বেলায় তো কথাই নেই। যেন, সাম্প্রদায়িকতার আস্ত শপিংমল। বিট্টু বজরঙ্গীর 'বিদ্বেষমূলক বক্তব্য'র ভিডিও জোগার করতে তাই পুলিশের তেমন অসুবিধা হয়নি। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। নুহ হিংসায় বিপাকে পড়ে হাত খুলে পুলিশকে কাজ করতে অনুমতি দিয়েছে হরিয়ানার মনোহরলাল খট্টরের প্রশাসন। বিট্টু বজরঙ্গীর বিরুদ্ধেও দায়ের হয়েছে বেশ কয়েকটি এফআইআর।
তবে, শুধু সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোই নয়। গত ৩১ জুলাই নুহ জেলায় ধর্মীয় যাত্রার সময় যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল, তার চক্রী হিসেবে বিট্টু বজরঙ্গীর নামে অভিযোগ আছে। সরকারি কর্মচারীকে (পড়ুন পুলিশ) দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া, পুলিশের ওপর হামলা, জোর করে সরকারি কর্মচারীদের কাজে বাধা দেওয়া, ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি কর্মচারীর ক্ষতিসাধন করা, দাঙ্গা বাধানো এবং অস্ত্র আইনের ২৫ নম্বর ধারায় হরিয়ানা পুলিশ বিট্টু বজরঙ্গীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশের হাতে উঠে আসা ভিডিও অনুযায়ী, বিট্টু বজরঙ্গী মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের জড় হতে ভাষণে উৎসাহ দিয়েছিলেন। জড় হওয়া হিন্দুত্ববাদীদের উসকেছিলেন আর নুহ হিংসায় প্ররোচিত করেছিলেন।
আরও পড়ুন- আচমকা বুকে ব্যথা! হাসপাতালে ভর্তি করাতেই হল সূর্যকান্ত মিশ্রকে
পুলিশ সূত্রে খবর, ধরা পড়ার আঁচ পেয়েই বিট্টু বজরঙ্গী গা ঢাকা দিয়েছিল। পুলিশ ফরিদাবাদে বিট্টুর আস্তানা খুঁজে সাদা পোশাকে ঘিরে ফেলে। হাতে লাঠি ছাড়া অস্ত্রও রাখেনি, যাতে সন্দেহ না-হয়। কিন্তু, তারপরও পুলিশ চিনতে বিট্টুর অসুবিধা হয়নি। ধরা পড়ার আঁচ পেয়েই রাস্তা দিয়ে ছুট লাগায়। লাঠি হাতে পিছু ধাওয়া করেন পুলিশকর্মীরা। তবে, পালাতে গিয়ে ভুল গলিতে ঢুকে পড়ায় রাস্তা চারপাশ থেকে বাড়ির দেওয়াল দিয়ে বন্ধ থাকায় বিট্টুর আর পালানো হয়ে ওঠেনি। ধরা পড়ে যায়। ওই রাস্তার পাশে সিসিটিভিতে এই দৃশ্য ধরা পড়েছে। যা দেখে এখন নুহ পুলিশকে রীতিমতো তারিফ করছেন নেটিজেনরা।