শুক্রবার সন্ধ্যায় যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে তার রেশ যেন এখনও রয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ২৮৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারা গিয়েছে। ১১০০-এরও বেশি যাত্রীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। গত দুই দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় রেল দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার পর এলাকার চিত্রটাই যেন মুহুর্তে বদলে গিয়েছে। বুকফাটা কান্না-হাহাকার, রেললাইনে ছড়িয়ে ছিটিতে মৃতদেহ। ঘটনার বীভৎসতায় বাকরুদ্ধ গোটা দেশ। উঠেছে রেলের তরফে গাফিলতির তত্ত্বও।
এর মাঝেই উদ্ধার অভিযান শেষে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্যের সাক্ষী থাকল গোটা দেশ। দুর্ঘটনা স্থলের ঠিক কাছেই অবস্থিত এক স্কুল রাতারাতি হয়ে উঠেছে মর্গ। একই সঙ্গে রাজ্য সরকার রাজ্য ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে অজ্ঞাত দেহগুলির ফরেনসিক পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে মৃতদেহ রাখার জন্য স্কুলটিকে কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করে, শীর্ষ এক আমলা বলেন, “স্কুলটি দুর্ঘটনাস্থলের একেবারে কাছাকাছি, পাশাপাশি স্কুলটিতে অনেক বেশি খোলা জায়গা রয়েছে”। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে মোট ১৬৩টি মৃতদেহ স্কুলে আনা হয়। যার মধ্যে ৩০টি মৃতদেহকে শনাক্ত করেছেন আত্মীয়রা।
পুরসভার ১০০ কর্মী স্কুলের ভিতর মোতায়েন করা হয়েছে। এমনই এক পুরকর্মী রাজেন্দ্র বলেছেন, “পচা লাশ তোলা কঠিন কাজ, কিন্তু স্বজনদের কষ্ট দেখা তার চেয়েও কঠিন। ট্রেন দুর্ঘটনায় অনেকেই বিদ্যুতের আঘাতে ঝলসে গিয়েছেন। কারুর দেহ টুকরো-টুকরো হয়ে গিয়েছে। দেহগুলি শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ছে”। স্কুলে জড়ো হওয়া অনেক পরিবারই এসেছেন বাংলা থেকে স্বজনদের খোঁজে। চোখে মুখে আতঙ্ক। স্কুলে দেখা যাচ্ছে সাদা চাদরে মুড়িয়ে একের পর দেহ। মৃতদেহগুলির এমন অবস্থা যে তা দেখে চেনার উপায় নেই।
শনাক্তকরণের জন্য লাগেজ, ফোন এবং অন্যান্য জিনিসপত্র খুঁজছেন পরিজনরা। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এসেছেন সাজাত আলী। তার একমাত্র শালা কাঠমিস্ত্রীর কাজ করেন। ছিলেন এই অভিশপ্ত ট্রেনেই। একরাশ উদ্বেগ নিয়ে সাজার বলেন, “ ওর সঙ্গে অনেক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পারিনি। মোবাইল অফ স্যুইচ অফ”। স্কুলে তাদের প্রিয়জনকে খুঁজে পাননি অনেকেই। তারা আবার ভিড় জমাচ্ছেন পাশের হাসপাতালে।
বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা ছোটুরাম চৌধুরী তার দুই আত্মীয় সাধু চৌধুরী ও দীপঙ্কর মণ্ডলকে খুঁজতে স্কুলে এসেছেন। তিনি বলেন, “গরমে মৃতদেহগুলি পচতে শুরু করেছে। অনে্কেরই মুখ চেনা যাচ্ছে না। আমি দুজনকে খুঁজে পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছি। আমি জানি না আমি বাড়ি ফিরে কী জবাব দেব”।