প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে গ্রেফতার শিক্ষক। 'আপত্তিকর' পোস্ট বাতিল ও ক্ষমা চেয়েও মেলেনি রেহাই। ঘটনা আসামের শিলচরের। গুরুচরণ কলেজের পদার্থ বিদ্যার সহকারী শিক্ষক সৌরদীপ সেনগগুপ্ত গত ২৫ ফেবরুয়ারি 'সনাতন ধর্ম মাই ফুট', 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গণহত্যাকারি', 'আরএসএস-বিজেপি দিল্লিতে গোধরা কান্ডের পুনরাবৃত্তি করছে' বলে লিখেছিলেন। তারপর থেকেই কলেজের পড়ুয়াদের রোশানলে তিনি। শুক্রবার শিলচর সদর থানায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযুক্ত সৌরদীপ সেনগুপ্তকে গ্রেফতার করে। এখানেই শেষ নয়, কলেজ থেকে সৌরদীপকে বরখাস্তেরও দাবি করেছেন পড়ুয়ারা।
গুরুচরণ কলেজের পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, 'একজন শিক্ষক প্রকাশ্যে সনাতন ধর্মকে গালাগাল দিচ্ছেন, সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করছেন। এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। রাজনৈতিকভাবে তিনি একটি দল একজন ব্যক্তিকে অপছন্দ করতেই পারেন। তবে শিক্ষকতার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশায় থেকে সনাতন হিন্দু ধর্মকে 'মাই ফুট' বলে অপমান করার অধিকার তাকে কেউ দেয়নি। এইসব মন্তব্যে সমাজ বিষিয়ে উঠতে পারে। তাঁর পড়ুয়াদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মের রয়েছেন। ভারত স্বাধীন দেশ এবং এখানে নিজের মনোভাব প্রকাশের মৌলিক অধিকার রয়েছে। যদিও এর মানে এই নয় যে, এক বিশেষ সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করা যাবে। তাঁর কথায় আমরা আঘাত পেয়েছি। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা চাই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করুক।'
পড়ুয়াদের সংযোজন, 'এ ধরনের একজন শিক্ষক কলেজের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ খারাপ হবে। তিনি পড়ুয়াদের ভিতর ধর্মীয় ভেদাভেদের পরিবেশ গড়ে তুলবেন। আমরা কলেজে শিক্ষা অর্জন করতে আসি, এখানে বিষাক্ত পরিবেশ কাম্য নয়। কলেজে সব সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন। তাদের কথা ভেবে এই ব্যক্তিকে কলেজের সব রকমের দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হোক।'
এদিকে, সৌরদীপ সেনগুপ্তর পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর দিদি স্বাগতা হোম চৌধুরী জানিয়েছেন, 'একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে বিপদের সূত্রপাত। গুরুচরণ কলেজের পক্ষ থেকে ফোনে ভয় দেখানো হয়েছে। পরে কলেজের প্রায় ৪০ জন ছাত্র বাড়িতে এসে চড়াও হয়। তারা সৌরদীপকে ফেসবুক লাইভে গিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছিল। যদিও মূল পোস্টটি ডিলিট করে সৌরদীপ আগেই ফেসবুকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। তাই ফের ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রশ্নই নেই।'
অভিযোগের খবর পেয়ে শিক্ষক সৌরদীপ সেনগুপ্ত থানায় গেলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি পরিবারের। আইনি পথেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শিক্ষকের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য জখম যুবকের মৃত্যু
সোশাল মিডিয়াতেও নিশানা করা হয়েছে গুরুচরণ কলেজের পদার্থ বিদ্যার সহকারী শিক্ষক সৌরদীপ সেনগগুপ্তকে। সেখানে শিক্ষকের শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে। গুরুচরণ কলেজের ছাত্র তথা হিন্দু সংহতির সদস্য সুভাষ চৌধুরী তার টাইমলাইনে লিখেছে, 'গতবছর ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে কুমন্তব্য করায়ে পাপড়ি ব্যানার্জিকে যে শাস্তি পেতে হয়েছে, গুরুচরণ কলেজের শিক্ষক সৌরদীপ সেনগুপ্ত কেউ একই শাস্তি পেতে হবে। ভারতে থেকে- দেশ বিরোধী মন্তব্য করলে আমরা কিছুতেই মেনে নেব না।'
একইভাবে ফেসবুকে আরএসএস বিরোধী পোস্ট আপলোড করার দায়ে বৃহস্পতিবার শিলচরের এক কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে 'দেশদ্রোহিতা'র অভিযোগে মামলা হয়। দিল্লি দাঙ্গার জন্য আরএসএসকে দায়ী করে পোস্ট করেছিলেন ওই কংগ্রেস কর্মী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন