তখন রাত ১১টা, দীর্ঘদিনের পরবাস জীবন কাটিয়ে লকডাউনে কবে বাড়ি ফিরবেন সেই চিন্তা নিয়েই সব ঘুমতে গিয়েছেন বাসুদেব সিং। হঠাৎই ঘোষণা! ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। হায়দ্রাবাদ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের সাঙ্গারেড্ডি এলাকার এই কলোনিটিতে তখন চরম ব্যস্ততা। বাসুদেব বলেন, "ওইটুকু সময়ে যে কটা জামাকাপড় পেয়েছি তাড়াতাড়ি গুছিয়ে দৌড়েছি। এরপর আমাদের পরীক্ষা করে টোকেন নাম্বার দেওয়া হল। আধার কার্ড দেখে বাসে তোলা হল। তখন প্রায় রাত ২টো আমরা স্টেশনের দিকে রওনা হলাম।"
বৃহস্পতিবার রাতে ১২০০ জন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে হায়দ্রাবাদের লিঙ্গমপল্লী স্টেশন থেকে ঝাড়খন্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছে ২২ কোচের একটি বিশেষ ট্রেন। রেলমন্ত্রকের কাছে আর্জি জানিয়ে তেলেঙ্গানা সরকার এই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে। লকডাউনের পর এই প্রথম দেশে রেল পরিষেবা দেওয়া হল। জানা গিয়েছে এই সব শ্রমিকেরা আইআইটি হায়দ্রাবাদের ফেজ ২ বিল্ডিং নির্মাণের কাজে যুক্ত ছিলেন। লকডাউনের জেরে সে কাজ স্থগিত হওয়ায় পেট চালানোই দায় হয়ে পড়ে শ্রমিকদের। তাঁদের অভিযোগ এখনও তাঁরা মজুরির বাকি টাকা হাতে পাননি।
তবে ঘরে ফিরতে পেরে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে এই শ্রমিকেরা। ট্রেন যখন হুইসেল দিচ্ছে তখন বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন আইআইটিতে নির্মাণকার্যে থাকা শ্রমিক সঞ্জীব কুমার। তিনি বলেন, "একটি শিবিরে কোনমতে গাদাগাদি করে থাকতাম। কোন রকম সুব্যবস্থা ছিল না। ন্যূনতম খাবার দেওয়া হত। আমি যে পরিবারের কাছে শেষপর্যন্ত ফিরতে পারছি এটাই এখন অনেক।" তবে সঞ্জীবদের হয়তো এখনই যাওয়া হবে না পরিবারের কাছে। কারণ ঝাড়খন্ডে ফিরলেও স্ক্রিনিং টেস্ট করার পর তাঁদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।
তবে সম্প্রতি একটি ঘটনার পরই পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে তেলেঙ্গানা সরকার। কিছুদিন আগেই সাঙ্গারেড্ডির কলোনিতে নিজেদের মজুরির দাবি নিয়ে সোচ্চার হয় শ্রমিক ও সুপারভাইজাররা। পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ হাতাহাতিও হয়। এরপর ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের কাছে তাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে আর্জি জানান। পরবর্তীতে কেন্দ্রের অনুরোধ মিলতেই শুরু হয় শ্রমিক ফেরানোর তদারকি।
সাউথ ইস্টার্ন রেলের এক আধিকারিক বলেন, "সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে আমরা মিডল বার্থ সরিয়ে দিয়েছি। সেই কারণে একটি কোচে ৭২ জনের বদলে ৫৪ জন করে নেওয়া হয়েছে। এই ট্রেনটি কোথাও দাঁড়াবে না। তেলেঙ্গানা সরকারের পক্ষ থেকে জল ও খাবারের সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে।"
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন