জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের একবছর পূর্ণ হতে চলল। কিন্তু সেই দিনগুলোকে ভুলতে পারছেন না উপত্যকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এবিষয়ে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকলে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো না।' রাখঢাক না করেই আবদুল্লা বলেন, 'আমি খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই যে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকাকালীন আমার পক্ষে কোনও বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব নয়। এই এলাকা থেকেই সবচেয়ে বেশিবার সাংসদ হওয়ার পরেও যেভাবে আমাদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাতে কিছুতেই আর আইনসভার সদস্য হতে পারবো না।'
গত বছরের ৫ অগাস্ট, কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার এবং রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। সরকার যুক্তি দিয়েছিল যে ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা 'সাংবিধানিকভাবে দুর্বল' এবং 'বৈষম্যমূলক' ছিল, যা উপত্যকার বিকাশকে ব্যাঘাত করেছে।
বিশেষ মর্যাদা বিলোপের প্রায় এক বছর পর কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ ও তার ফলশ্রুতি নিয়ে মুখ খুলেছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশ্ন- আপনি মুক্ত হওয়ার পরও কেন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে রাজনীতিক কর্মকাণ্ডে অমশ নিচ্ছে না? দলের নেতা, মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন না?
উত্তর- প্রথমত, আমি মুক্ত হওয়ার পর থেকেই লকডাউন শুরু হল। দ্বিতীয়ত, আমার বেশিরভাগ দলীয় সহকর্মীকে বেআইনিভাবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁদের সহ্গে সবসময় কথা বলা যায় না। তাঁদের মুক্তির জন্য আমরা জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টে লড়াই করছি।
প্রশ্ন- অনেক জায়গাতেই মানুষ বলছেন ওমর আবদুল্লার বক্তব্যের জন্য তাঁরা মুখিয়ে রয়েছেন? অনেকেই আবার বলছেন, মিছিল করার লোক নেই বা নেতৃত্ব দেওয়ার লোকের অভাব রয়েছে...
উত্তর- চলতি পরিস্থিতি নিয়ে বিরক্তি আগেই প্রকাশ করেছি। এবার বলতে চাই, প্রথমত, করোনার কারণে দলীয় কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। করোনা কেটে গেলেই স্পষ্ট হবে দল সম্পর্কে অনেকে যা ধারণা করছেন তা সত্যি কিনা। দ্বিতীয়ত, আমার বহু সহকর্মী জনসুরক্ষা আইনে গৃহবন্দি বা জেলবন্দি। তাই আমি এমনকিছু বলতে চাই না যা তাদের মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া ও স্বাধীনতাকে ধ্বংস করে দেয়। তবে, অনন্তকাল এইভাবে চলতে পারে না।
প্রশ্ন- কেন্দ্রীয় পদক্ষেপে চাপা অসন্তোষ রয়েছে, কিন্তু তাকে আন্দোলনে পরিণত করার নেতৃত্বের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন?
উত্তর- অন্দোলন, বিক্ষোভ স্বঃস্ফূর্তভাবে হয়। ২০১৬ সালে উপত্যকায় বিক্ষোভই তার বড় উদাহরণ ছিল। প্রথমে ওই আন্দোলনে কেউ নেতৃত্ব দেয়নি। পরে বিক্ষোভ-আন্দোলন বড় হয়ে দানা বেঁধেছিল। কেউ যদি মনে করেন আমি মানুষের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবো তাহলতে আমি দুঃখিত। কাশ্মীরে আন্দোলন মানেই রক্ত ঝড়বে, তরুণরা জড়িয়ে পড়বে- সব জেনেও ফায়দার জন্য এই রাজনীতি আমি বা আমার দল করবে না।
আগেও আমি বলেছি যে, রাজ্যের তরুণ, যুবরদের হাতে আন্দোলনের নামে বন্দুক তুলে দেওয়ার রাজনীতি ন্যাশনাল কনফারেন্স করে না। যা ঘটছে আমি তার বিরুদ্ধে সরব হব। কিন্তু, রক্তক্ষয়ী আন্দোলন থামানোর নামে বন্দুক হাতে উর্দিধারী কেউ জম্মু-াকাশ্মীরের নবপ্রজন্মকে হত্যা করবে- তা আমি হতে দিতে পারি না।
প্রশ্ন- ভবিষ্যতে সব থেকে বড় ভয় কী বলে মনে করেন?
উত্তর- ভয়ের আর কী অবশিষ্ট রয়েছে? রাজ্যের স্বার্থে যা উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিল তা ধ্বংস করা হয়েছে। এখন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছু বলার নেই।
প্রশ্ন- কিন্তু, আপনি কী কোনও এক সময়ে গিয়ে ভোট দেবেন না?
উত্তর- আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আদালত ক্ষমতাশালী হয় তার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। সেই শ্রদ্ধা ফের ফিরলেই আমি ও আমার দল মানুষকে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বলব।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন