কেন অভিযোগ করার পরও পুলিশ সক্রিয় হল না? তাহলে হয়ত এভাবে মেয়েটাকে মরতে হত না। পুলিশের সেদিনের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকরাই। ‘আফতাব আমাকে মেরে দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলবে’! ২ বছর আগেই থানায় অভিযোগ জানান শ্রদ্ধা! গতকালই সামনে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। এরপর পুলিশের ভুমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকরা।
শ্রদ্ধা ওয়াকারকে হত্যার আগেও আফতাব তার সামনে তার ঘৃণ্য পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। ২০২০ সালেই সঙ্গী আফতাবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শ্রদ্ধা। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে, শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন যে আফতাব তাকে টুকরো টুকরো করার হুমকি দিয়েছিল এবং তাকে প্রচুর মারধর করা হত।শ্রদ্ধা ২৩ নভেম্বর ২০২০-এ মহারাষ্ট্রে পুলিশের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগও করেন।
আফতাবের বাবা-মায়ের কথাতেই ১৯ ডিসেম্বর ২০২০-এ শ্রদ্ধা তার অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন। কী বলেছিল আফতাবের বাবা-মা? শ্রদ্ধাকে আফতাবের মা-বাবা বলেন, নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি খুবই সাধারণ একটি বিষয়। এরপরই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন শ্রদ্ধা।
অভিযোগ পত্র প্রত্যাহার করার সময় শ্রদ্ধার থেকে লিখিত বয়ানও নেয় পুলিশ। শ্রদ্ধা জানান, 'আমি আমার বন্ধু আফতাব আমিন পুনাওয়ালার সঙ্গে একই বাড়িতে থাকি। আফতাব আমাকে ২৩ নভেম্বর ২০২০-এ লাঞ্ছিত করে, মারধরও করে, মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। আমি রাগের মাথায় অভিযোগ করলেও পরে আফতাবের বাবা-মা আমাদের বাড়িতে আসেন এবং তারা আমাদের মধ্যে বিবাদে হস্তক্ষেপ করে সবকিছু মিটমাট করে দেন। তাই আমি আমার অভিযোগ প্রত্যাহার করছি'।
আরও পড়ুন: < পাখির চোখ গুজরাট নির্বাচন! ভোটপ্রচারে রাজ্যে মোদী, কংগ্রেসকে বিঁধে ক্ষমতায় ফেরার বার্তা >
সরকার এই অভিযোগ নিয়ে কী জানাল
মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস পুরো বিষয়টি নিয়ে বলেছেন যে আমি শ্রদ্ধার ২০২০ সালের সেই অভিযোগটি দেখেছি, যাতে খুব গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছিল। আমরা তদন্ত করে দেখব কেন অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? আমি কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই না, তবে চিঠির বিষয়ে কেউ ব্যবস্থা নিলে এমনটা হতো না। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে হয়তো এমনটা ঘটার কথাই নয়।
প্রকৃতপক্ষে, ২০২০ সালে, শ্রদ্ধা আফতাবের বিরুদ্ধে নালাসোপাড়ার তুলিঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এবং মৃত্যুর আগে আফতাব তাকে হত্যা করার এবং তার টুকরো টুকরো করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এই অভিযোগে আফতাবের বিরুদ্ধে মারধর, খুনের চেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন শ্রদ্ধা। এই অভিযোগপত্রে শ্রদ্ধা আরও বলেছিলেন যে আফতাব তাকে হত্যার হুমকিও দেয় এবং তাকে কেটে টুকরো টুকরো করার পরিকল্পনা করেছে আফতাব।
শ্রদ্ধা আফতাবের বিরুদ্ধে তাকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগও করেছেন। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে, শ্রদ্ধা আরও অভিযোগ করেছিলেন যে আফতাব তাকে ৬ মাস ধরে একটানা মারধর করত এবং তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। ২৮ নভেম্বর ২০২০ এ থানায় এই মর্মে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। শ্রদ্ধা পুলিশের কাছে এই অভিযোগপত্রটি ইংরেজিতে লিখেছিলেন, যাতে তিনি তার মোবাইল নম্বর থেকে তার পুরো যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেছিলেন।
৮ মে শ্রদ্ধাকে হত্যা করা হয়
আফতাব পুনাওয়ালা ১৮ মে দিল্লিতে একটি ভাড়া বাড়িতে শ্রদ্ধা ওয়াকারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং তারপরে তার দেহ ৩৫ টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়। তবে তিনি প্রথমে মৃতদেহের টুকরোগুলিকে দীর্ঘক্ষণ ফ্রিজে পুরে রাখেন। তারজন্য নতুন একটি ৩০০ লিটারের ফ্রিজও কেনেন আফতাব। এই পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে যখন শ্রদ্ধার বাবা তার নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করেন এবং তার পরে আফতাবকে ১২ নভেম্বর পুলিশ গ্রেফতার করে।