একদিকে মন্ত্রী বলছেন ভাগাড় কাণ্ড পার্ট টু শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। অন্যদিকে মেয়র পারিষদের বক্তব্য, এমন কোন অশনি সঙ্কেত পুরসভার কাছে আসে নি। আবার আরেকদিকে শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় প্রায় স্বাভাবিক মাংসের চাহিদা, যার অর্থ হলো মাংসভোজী বাঙালি নীরবে, এবং অনায়াসে, ফিরে গেছেন প্রাক-ভাগাড় যুগে।
“ঈদের সময় শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে ভাগাড়ের বাকি মাংস সরবরাহ করা হবে। এই সময়ের অপেক্ষায় আছে জেলের বাইরে থাকা ভাগাড়কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীরা।" এই মন্তব্য় কোনও বিরোধী দলের নেতৃত্বের নয়। বলছেন খোদ রাজ্য়ের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডে। আরও বলছেন, এই 'জালিয়াতির ব্য়বসা' করে যারা সম্পত্তি করেছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার উদ্য়োগ নিয়েছে তাঁর দফতর।
মন্ত্রী স্পষ্টতই মনে করছেন ভাগাড় মাংসকাণ্ডের রহস্য় এখনও পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি। ভাগাড়কাণ্ডের সঙ্গে অভিযুক্তরা অনেকেই যে জেলের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা-ও বলতে ছাড়েননি তিনি। এমনকী কলকাতা পুলিশ এই বিষয়ে তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন। তাহলে এখনও কি শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে মাংস খাওয়া নিরাপদ নয়? সাধনবাবুর বক্তব্য়, "পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ঈদের সময় লোকে প্রচুর মাংস খাবে। এই সময় ভাগাড়ের লোকেরা আবার মাংসে ভেজাল দেবে। ভাগাড়ের যেটুকু মাংস ধরা পড়েনি, সেই মাংস ঈদের সময় চালান করে লোককে খাইয়ে দেবে। তারা শুধু সময়ের অপেক্ষা করে আছে।" কীভাবে আটাকানো যাবে তাদের? মন্ত্রীর আক্ষেপ, "এটা কি সরকার আটকাতে পারবে? আমি জানি না।"
আরও পড়ুন: পচা মাংসকাণ্ডে অবশেষে পাকড়াও অন্যতম অভিযুক্ত কওসর
আপাতত সাক্ষ্য প্রমাণের অবর্তমানে এতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে আমাদের, কারণ ঠিক কিসের ভিত্তিতে তিনি এই অভিযোগ বা দাবি করছেন তা সাধনবাবু জানান নি।
মন্ত্রীর বক্তব্য়ের উল্টো সুর কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের কণ্ঠে। তিনি বলেন, "আমাদের কাছে এমন কোন তথ্য় নেই যে আমরা বলতে পারব কলকাতার রেস্তােরাঁগুলোতে মাংস খাওয়া নিরাপদ নয়।" মজাটা হলো, সাবধানতার বাণী শোনাতে ছাড়েননি অতীনবাবুও। "যিনি খাবেন তাঁকেই খাবারের গুণমান নির্ধারণ করতে হবে। তিনিই বুঝতে পারবেন ওই মাংস চার দিনের বাসি, না টাটকা। কলকাতা পুরসভার এত বড় পরিকাঠামো নেই যে শহরের সমস্ত রেস্তোরাঁর খাবারের গুণমান প্রতিদিন পরীক্ষা করা যাবে।" এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যে সব মাংসের স্যাম্পেলের গুণমান পরীক্ষা হয়েছিল সেগুলির রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্য়সচিবের কাছে। মুখ্য়মন্ত্রীর গঠিত কমিটি সেই রিপোর্ট পর্যালোচনা করবে।
এপ্রিল মাসে বজবজ ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে আম বাঙালীর মাংসের প্রতি অনুরাগ চাপা পড়ে গিয়েছিল এক-পাহাড় আতঙ্কের নীচে। ওই কাণ্ডের পর হোটেল, রেস্তোরাঁয় মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন এমন মানুষের সংখ্য়া নেহাত কম নয়। আমিষ ভুলে অনেকে আবার নিরামিষ খাওয়ায় মন দিয়েছিলেন। রেস্তোরাঁ মালিকেরা প্রমাদ গুনেছিলেন। এমনকি সাময়িকভাবে ব্য়বসা বন্ধও করে দিয়েছিযেন ছোট পুঁজির কারবারীরা। দোকানে কাটা মাংসের বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছিল।
আরও পড়ুন: পচা মাংসকাণ্ডের তদন্তে গঠিত হবে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি, নবান্নে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এখন আবার পরিস্থিতি আপাত স্বাভাবিক। মন্ত্রী এবং পুরসভার পাশাপাশি প্রশাসনিক মহলের একাংশের দাবি, এই মুহূর্তে মাংস খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ, কারণ নিয়মিত 'সারপ্রাইজ রেডের' ভয়ে আপাতত পচা মাংসের যোগানদারদের ব্যবসা বন্ধ। শহরের বেশ কিছু রেস্তোরাঁর সঙ্গে কথা বলে আমাদের অভিজ্ঞতা, ব্যবসা আবার উঠতির দিকে, যদিও প্রকাশ্যে কেউই কিছু বলতে চান না।
ভাগাড়কাণ্ডে যুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্য়বস্থা নিচ্ছে ক্রেতা-সুরক্ষা দফতর? সাধনবাবু বলেন, "ভাগাড় মাংসকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত তা পুলিশ আমাকে জানিয়েছে। প্রত্য়েকের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণের মামলা করা হয়েছে। ৩৭ জন অভিযুক্তের তালিকা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ দিয়েছে। কলকাতা পুলিশ এখনও কোন তালিকা জমা দেয়নি। ধরা পড়ুক না পড়ুক, আমার কিছু যায় আসে না। অভিযুক্তদের সম্পত্তি আমরা বাজেয়াপ্ত করছি।"