/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/modi.jpg)
করোনাভাইরাস, লকডাউন, অর্থনৈতিক মন্দা, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার আবহে আজ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশে কলম ধরলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উপলক্ষ্য, দ্বিতীয় মোদী সরকারের একবছর পূর্তি। আপামর ভারতবাসীকে একটি খোলা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, "গত বছর এই দিনে ভারতের গণতন্ত্রে এক স্বর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয়। বহু দশক পর পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সমেত কোনও সরকার পুনরায় নির্বাচিত হয়ে আসে"।
তিনি আরও লিখেছেন, সাধারণ সময় হলে তিনি জনগণের মাঝেই থাকতেন, তবে যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয়, তাই তিনি চিঠি লিখেই সর্বসাধারণের আশীর্বাদ প্রার্থনা করছেন।
তাঁর বক্তব্য, ২০১৪ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের মান বহুলাংশে বেড়েছে। দেশে দরিদ্রের সম্মান বেড়েছে, আর্থিক দূরত্ব কমেছে, বিনামূল্যে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা পেয়েছে দেশ, শৌচালয় এবং গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ঘটেছে। "দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার বেড়াজাল" কাটিয়ে বেরিয়ে এসেছে দেশ।
চিঠিতে 'সারজিকাল স্ট্রাইক' এবং 'এয়ার স্ট্রাইকের' উল্লেখ করে মোদী লিখেছেন, 'ওয়ান র্যাঙ্ক ওয়ান পে', 'ওয়ান নেশন ওয়ান ট্যাক্স' এবং কৃষকদের জন্য আরও বেশি দামে ফসল বিক্রির সুযোগ ইত্যাদির মতো কয়েক দশকের দাবিও মেটানো হয়েছে। তাঁর মতে, ভারতকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শীর্ষে দেখার যে স্বপ্ন নিয়ে ২০১৯-এ ভোট দিয়েছিলেন দেশের মানুষ, সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সর্বক্ষেত্রেই এগিয়ে চলেছে ভারত, এবং ১৩০ কোটি ভারতবাসী দেশের উন্নয়নের রেখাচিত্রে নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন।
মোদীর বক্তব্য, গত এক বছরের তাৎপর্যপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত হলো - ৩৭০ ধারা, যা রাষ্ট্রীয় একতাকে মজবুত করেছে, সুপ্রিম কোর্টের রাম মন্দির রায়, যা শতাব্দী-প্রাচীন বিবাদভঞ্জন করেছে, এবং তিন তালাকের মতো 'বর্বরোচিত প্রথা', যা ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের কথা, যা ভারতের "মমতা এবং সকলকে কাছে টেনে নেওয়ার" প্রতীক।
ভারতের গগনযান অভিযানের কোথাও উল্লেখ করেছেন মোদী। পাশাপাশি বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী কৃষি সম্মান নিধি এখন দেশের প্রত্যেক কৃষকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এক বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকারও বেশি জমা করা হয়েছে ৯ কোটি ৫০ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে। তিনি একথাও লিখেছেন যে, জল জীবন অভিযানের সাহায্যে পানীয় জল পৌঁছনো হবে গ্রামাঞ্চলের ১৫ কোটি গৃহস্থালিতে। এছাড়াও ৫০ কোটি গবাদি পশুর জন্য চলছে বিনামূল্যে টীকাকরণ।
মোদী তাঁর চিঠিতে ঘোষণা করেছেন যে, ব্যবসায়ীদের সমস্যার সময়মত সমাধানের উদ্দেশ্যে গঠিত হতে চলেছে 'ব্যাপারী কল্যাণ বোর্ড'। এছাড়াও স্বনির্ভর গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত সাত কোটির বেশি মহিলাকে আরও বেশি অর্থসাহায্য দেওয়া হবে, এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের ঋণের পরিমাণ ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও আদিবাসী শিশুদের কথা মাথায় রেখে ৪০০-র বেশি একলব্য মডেল আবাসিক স্কুলের নির্মাণ শুরু হয়েছে।
তাঁর কথায়, বর্তমান সরকারের নীতির কারণেই হ্রাস পাচ্ছে শহর-গ্রামের ব্যবধান। এমনটা প্রথমবার ঘটেছে যে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন শহরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি মানুষ।
স্বাভাবিকভাবেই করোনাভাইরাস মহামারী এবং তজ্জনিত নানাবিধ সমস্যার কোথাও স্থান পেয়েছে তাঁর চিঠিতে। তিনি লিখেছেন, "যখন আমরা দ্রুতগতিতে আমাদের দেশবাসীর লক্ষ্যপূরণের দিকে এগোচ্ছিলাম, সেই সময়েই করোনাভাইরাস প্যানডেমিক গ্রাস করল আমাদের দেশকে। একদিকে অসীম অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং আধুনিকতম স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পন্ন দেশ, অন্যদিকে আমাদের সীমিত ক্ষমতা এবং বিপুল জনসংখ্যায় ভারাক্রান্ত দেশ।"
তবে তিনি দেশবাসীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, "অনেকের মনে ভয় ছিল যে করোনা আবহে ভারত দুনিয়ার বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তবে স্রেফ আত্মবিশ্বাস এবং মনের জোরে আপনারা ভারতের প্রতি দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছেন... করোনা যোদ্ধাদের সম্মানে প্রদীপ জ্বালিয়ে বা হাততালি দিয়েই হোক, জনতা কার্ফুর মাধ্যমে হোক, বা নিষ্ঠা সহকারে দেশব্যাপী লকডাউনের নিয়ম পালন করেই হোক, আপনা দেখিয়ে দিয়েছেন যে 'এক ভারত' হলো 'শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর গ্যারান্টি।"
"যেখানে সঙ্কট এত গভীর, সেখানে কখনওই এই দাবি করা যাবে না যে কারোর কোনোরকম অসুবিধা বা অস্বস্তি হয় নি। আমাদের শ্রমিক, পরিযায়ী কর্মী, ফেরিওয়ালা, এবং ক্ষুদ্র শিল্পের কারিগরদের মতো আরও অনেক নাগরিক চরম দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছেন," লিখেছেন মোদী।
একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করেছেন, "অসুবিধা যাতে বিপর্যয়" না হয়ে যায়, তার জন্য সমস্ত নিয়ম এবং নির্দেশিকা মেনে চলা উচিত। "আমরা এতদিন ধৈর্য ধরে থেকেছি, এখনও থাকতে হবে। ভারত যে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো এবং নিরাপদ আছে, তার একটি বড় কারণ আমাদের এই নিষ্ঠা। দীর্ঘমেয়াদী এই যুদ্ধ, কিন্তু আমরা জয়ের পথে অগ্রসর হয়েছি," বক্তব্য মোদীর।
সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আমফান সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, "পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার কিছু অংশের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এক বিধ্বংসী সুপার সাইক্লোন। এই দুই রাজ্যের মানুষের মনোবল প্রশংসনীয়। তাঁদের সাহস দেশের সকল নাগরিককে অনুপ্রাণিত করে।"
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার উল্লেখ করে মোদী লিখেছেন, "ভারত সহ নানা দেশের অর্থনীতি কীভাবে পুনরুজ্জীবিত হবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। তবে ভারত যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করে সকলকে অবাক করে দিয়েছে, সেভাবেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব আমরা।"
এই প্রসঙ্গে মোদী আরও একবার তুলে এনেছেন আত্মনির্ভরতার তত্ত্ব। "এটা সময়ের চাহিদা যে আমাদের আত্মনির্ভর হতে হবে, নিজেদের মতো করে এগোতে হবে।" সম্প্রতি ঘোষিত 'আত্মনির্ভর ভারত অভিযান'-এর আওতায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের উল্লেখ করে মোদী লিখেছেন, "এই উদ্যোগ সমস্ত ভারতবাসীকে সুযোগ দিচ্ছে এক নতুন যুগের সূচনা করার... ভারতের মাটির সুগন্ধ, আমাদের শ্রমিকদের পরিশ্রম এবং দক্ষতা, এমন সামগ্রী উৎপাদন করবে, যা আমদানির ওপর আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে আমাদের স্বনির্ভর করে তুলবে।"
পরিশেষে ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে তাঁদের "ভালোবাসা এবং আশীর্বাদের" জন্য ধন্যবাদ দিয়ে মোদী লিখেছেন, "আপনাদের আশীর্বাদে গত একবছরে কিছু ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত এগিয়েছে দেশ। তবে আমি জানি যে এখনও অনেক কাজ বাকি। এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে দেশকে। আমি রাতদিন কাজ করছি। আমার মধ্যে খামতি থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের দেশে কোনোকিছুরই অভাব নেই। আমি নিজের চেয়ে বেশি ভরসা রাখি আপনাদের ওপর, আপনাদের শক্তি এবং ক্ষমতার ওপর।
"বিশ্বব্যাপী মহামারীর আবহে আমরা সঙ্কটে, কিন্তু আমাদের জন্য এ এক সঙ্কল্পের সময়ও বটে। আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, ১৩০ কোটির বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কখনোই নির্ধারণ করতে পারে না কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতি।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন