Advertisment

বড়বাজারে ডালা নিয়ে তোলাবাজি, নিয়ন্ত্রণের দাবি বিরোধীদের

বাগরি মার্কেটের আগুন নেভাতে গাড়ি ঢুকতে পারেনি রাস্তার পাশের ডালার জন্য। এই কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধী নেতৃত্ব। তা এত বিরোধিতা সত্ত্বেও ডালা নিয়ন্ত্রণে অপারগ কেন প্রশাসন?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bagree market Day 2 Express Photo Shashi ghosh

ফাইল চিত্র

বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে ফুটপাথের ডালার ভূমিকা। এ নিয়ে এত প্রশ্ন উঠে এসেছে যে আর উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। তোলাবাজির অভিযোগের পাশাপাশি এটা স্পষ্ট, যে অনেক স্থায়ী দোকানদার ফুটপাথে ডালা বসিয়ে রাখেন বাড়তি রোজগারের আশায়।

Advertisment

ডালা ব্যাপারটা কী? বড়বাজারে ফুটপাথে যে সব দোকান বসে, সেই সব দোকান ডালা নামেই পরিচিত। ফুটপাথ অধিগ্রহণ শেষ করে এইসব ডালা এখন থাবা বসাচ্ছে রাস্তায়। শুধু বাগরি মার্কেট সংলগ্ন এলাকা নয়, পুরো বড়বাজারেরই এমন বেহাল দশা। প্রাক্তন এক আইপিএসের কথায়, "নিয়ন্ত্রণ বলে কিছু নেই। আইন থাকলে বসবে, না থাকলে বসবে না।"

publive-image আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর মার্কেটের ভেতর পরিদর্শন। ছবি: সৌরদীপ সামন্ত

বাগরি মার্কেটের আগুন ডালা থেকেই ছড়িয়েছিল কী না, তা নিয়ে বিতর্ক চলেছে। কিন্তু ফুটপাথের ডালা সমস্যা নিয়ে তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগরি মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর দাবি, "এখানকার বেশ কয়েকজন দোকানদারের ফুটপাথে ডালা রয়েছে। এই ডালার কারবারিরা হপ্তা দেয় স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের। সেই টাকা পৌঁছে যায় পুলিশের একাংশের কাছে।" পুরো কলকাতায় এমন কারবার চলছে বলেই দাবি তাঁর।  যার কারণে দমকল ঢোকা তো দূরের কথা, ফুটপাথ দিয়ে হাঁটাও অসম্ভব। ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই।যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন: দমকলের বিরুদ্ধে খেপে আগুন বাগরির ব্যবসায়ীদের একাংশ

বিরোধীদের অভিযোগ, ডালা নিয়ে কোটি কোটি টাকার তোলাবাজি চলছে। এক একটি ডালা থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০০-২৫০ টাকা নেওয়া হয়। ডালার সংখ্যা হিসেব করলে টাকার পরিমান কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় বলেন, "সারা শহরে এই অবস্থা। মানুষ যাতায়াত করতে পারছেন না ফুটপাথে। বড়বাজারের মত জায়গা, যেখানে মানুষ ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে পারেন না, দমকলের গাড়ি কীভাবে ঢুকবে? তোলাবাজি তো হচ্ছেই। যে পারছে তোলা আদায় করে চলে যাচ্ছে। এটা দেখভাল করার কেউ নেই। একশো শতাংশ নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।"

publive-image ভস্মীভূত বাজার। ছবি: শশী ঘোষ

বাগরি মার্কেট এলাকার কাউন্সিলর বিজেপির। গোটা বড়বাজারটাই গেরুয়া শিবিরের শক্ত ঘাঁটি। বিজেপি নেতা তথা স্থানীয় কাউন্সিলর সুনীতা ঝাওয়ারের স্বামী কিষাণ ঝাওয়ার বলেন, "বিরোধী কাউন্সিলর হিসেবে অনেক কিছু করতে অসুবিধে হয়। ডালা নিয়ে ৩৫ বছর সিপিএম রাজনীতি করেছে। আট বছর দিদি রাজনীতি করছেন। বড়বাজারে ক্যানিং স্ট্রিট, এম জি রোড-সহ প্রায় সব জায়গায় দোকানদার নিজেই ডালা বসাচ্ছেন। এদেরকে সরানো কাউন্সিলরের পক্ষে সম্ভব নয়। ঘটনা হলে চেঁচামেচি হয়। পুলিশ সরকারের, মন্ত্রী সরকারের। বিধায়ক, সাংসদ সবাই শাসকদলের। কাউন্সিলরের নির্দেশ কেউ শুনবে? পুলিশ-প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করবে?"

তাঁর দাবি, "এই ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে একটা নতুন ডালা বসেছে কেউ প্রমান করুক। ৪০ বছরের ডালা কি করে সরাবো?" বিজেপির আর এক কাউন্সিলর বিজয় ওঝা বলেন, "ফুটপাথে ডালা বসাানো নিয়ে বহুবার বরোতে আলোচনা হয়েছে। পুর-কমিশমারের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছি। উচ্ছেদ নয়, নিয়ন্ত্রণ হোক।" তাঁর দাবি, "এটাও এক ধরনের সিন্ডিকেট।"

আরও পড়ুন: বাগরি অগ্নিকাণ্ডে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দমকলের

রাজ্যের ওই প্রাক্তন আইপিএস বলেন, "ডালা বা ফুটপাথের দোকান নিয়ন্ত্রণ, এসব ছেঁদো কথার কোনও মানে হয় না। ডালা নিয়ে টাকা পয়সার লেনদেন নতুন কিছু নয়। স্থানীয় নেতৃত্বের একটা অংশ নিয়মিত টাকা তোলেন। শুধু পুলিশের একাংশ নয়, স্থানীয় প্রশাসনের একাংশও যুক্ত থাকে এর সঙ্গে। টাকার ভাগ অনেকেই পায়।"

ডালা বসানো বা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন স্থানীয় বিধায়ক স্মিতা বক্সী। তাঁর একটাই বক্তব্য, "ডালা নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। কেউ কখনও আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি।" তাঁর কথা মেনে নিয়ে এখানেই শেষ করা যেত। কিন্তু একটা কথা না বললেই নয়। সুদূর ফ্র্যাঙ্কফার্টে বসে খোদ মমতা বড়বাজারের ডালা সাম্রাজ্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের জন্য দমকলের গাড়ি ঢুকতে পারেনি, সেকথা উল্লেখ করেছেন তিনি। এইটুকুই।

kolkata news fire
Advertisment