গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে অশান্ত মণিপুর। প্রাণহানির সংখ্যা ১৫০-এর বেশি। মেয়েদের উপর অকথ্য অত্যাচারের ঘটনা ঘিরে উত্তাল দেশ। এই পরিস্থিতি উত্তর পূর্বের এই রাজ্যের অবস্থা স্বচক্ষে দেখে এসেছেন বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটের প্রতিনিধিরা। সেই অভিজ্ঞতার কথাই বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে জানালেন 'ইন্ডিয়া'র ৩১ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বিরোধীদের দাবি সত্ত্বেও মণিপুরের ঘটনা নিয়ে এখনও সংসদে মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী। বাদল অধিবেশন শুরুর দিন যা বলেছেন তা যথেষ্ট নয় বলে সোচ্চার বিরোধী শিবির। এদিন রাষ্ট্প্রতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে 'ইন্ডিয়ার'প্রতিনিধিদের দাবি, অবিলম্বে মণিপুরে যাওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সংসদেও যাতে প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেন তার জন্য হস্তক্ষেপ করুন রাষ্ট্পতি। পাশাপাশি, তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব মণিপুর নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিশেষ আর্জি তুলে ধরেন।
জানা গিয়েছে, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব মণিপুর থেকে দু’জন মহিলাকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতিকে জানান, মণিপুরে নারীদের উপর অকথ্য অথ্যাচার চলছে। বেশ কয়েকটি প্রকাশ্যে এসেছে। ঘটনায় শঙ্কিত সকলে। ভয় কাটাতে ও মহিলাদের কথা আরও পোক্ত করে তুলে ধরতে দুই সম্প্রদায়ের দুই মহিলাকে রাজ্যসভায় আনা উচিত।
মণিপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জানিয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে একটি স্মারকলিপিও তুলে দেন বিরোধী জোটের সাংসদেরা। সেই স্মারখলিপি-তে উল্লেখ, 'অনলাইনে প্রকাশিত ভাইরাল ভিডিও গোটচা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট যে রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশ বিষয়টিকে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। দু'মাসেরও বেশি সময় পেরিয়েছে হিংসা ও মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় এইআইআর করতে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতেও দেরি হয়েছে। পরবর্তীকালে, এটি প্রকাশ্যে এসেছে যে উল্লিখিত ঘটনাটি মহিলাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার কয়েকটি মামলার মধ্যে একটি মাত্র। মণিপুরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। তাই এই ইস্যুতে সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে জরুরীভাবে ভাষণ দেওয়ার জন্য ও বিশদ আলোচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করা হয়নি শাসক দলের তরফে।'
স্মারকলিপিতে উল্লেখ, 'হিংসায় ২০০-র বেশি প্রাণহানি হয়েছে। ৫০০-র বেশি আহত হয়েছেন। ৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর পুড়েছে৷ ৬০ হাজারের বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এঁরা রাজ্য জুড়ে ত্রাণ শিবিরে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বসবাস করছে।' বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটের প্রতিনিধি দল চুরাচাঁদপুর, মইরাং এবং ইম্ফল সহ তিনটি ভিন্ন সংঘাত-আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেছে, যেখানে তারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, মণিপুরবাসীর উদ্বেগের কথা শুনেছেন এবং বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য ভয়াবহ জীবনযাত্রার পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই স্মারক লিপিতে বলা হয়েছে যে, 'ত্রাণ শিবিরে লোকেরা খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রীর অপ্রতুলতায় অসুবিধায় পড়েছেন। তারা সবসময় ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে এবং তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য একটি নিরাপদ ও ন্যায়সঙ্গত পুনর্বাসনের প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্যে তিন মাসব্যাপী ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়াকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকার ফলে মণিপুরের শিশু ও যুবকদের শিক্ষার উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।'
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, 'আমরা রাষ্ট্রপতিকে মণিপুরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছি। সে রাজ্যে মেয়েদের উপর কী ভাবে অত্যাচার চলছে, তা-ও জানিয়েছি। তবে আমাদের মূল দাবি হল, সে রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই মণিপুরে যান। এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন রাষ্ট্রপতি।'
বুধবারের প্রতিনিধিদলে ছিলেন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন, এনসি-র ফারুক আবদুল্লা প্রমুখ।