প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্বোধন করা নয়া সংসদ ভবনের মাথায় জাতীয় প্রতীক সিংহের মুখভঙ্গিমা নিয়ে বিস্তর বিকর্ত চলছে। সমালোচনা করছেন বিরোধী দলগুলি। এতদিন জাতীয় প্রতীকে যে সিংহের ব্যবহার হয়েছে তা সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসী বলে দাবি বিরোধীদের। মোদীর হাতে উদ্বোধন হওয়া জাতীয় প্রতীকের সিংহ হিংস্র-আগ্রাসী বলে অভিযোগ। বিজেপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার যুক্তি, ভারতও একাধিক ক্ষেত্রে বিচার-বিবেচনা অনুসারে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে থাকে। নয়া অশোক প্রতীকে ব্যবহৃত সিংহ তারই প্রতীক। এই উত্তেজনার মধ্যেই মুখ খুলেছেন জাতীয় প্রতীক তৈরির অন্যতম শিল্পী দীননাথ ভার্গবের স্ত্রী।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ভারতীয় সংবিধানের পাণ্ডুলিপি সাজিয়ে জাতীয় প্রতীকের নকশা তৈরির দায়িত্ব দেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর কলা ভবনের তৎকালীন অধ্যক্ষ তথা প্রখ্যাত চিত্রকর নন্দলাল বসুকে। জাতীয় প্রতীক নির্মাণে নন্দলাল বসু যে দলকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে তরুণ দীননাথ ভার্গব ছিলেন অন্যতম। দেশের জাতীয় প্রতীকে ব্যবহৃত সিংহ উত্তরপ্রদেশের সারনায় প্রায় আড়াইশ খ্রীষ্টপূর্বে তৈরি সম্রাট অশোকের সিংহ রাজধানী অবলম্বনে তৈরি।
সংবাদ সংস্থাকে শিল্পী দীননাথ ভার্গবের স্ত্রী ৮৫ বছরের প্রভাদেবী বলেছেন, 'ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু শান্তিনিকেতনের কলা ভবনের তৎকালীন অদ্যক্ষ এবং বিখ্যাত চিত্কর নন্দলাল বোসুকে সংবিধানের পাণ্ডুলিপি অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক তৈরির কথা বলেছিলেন। সেই সময় আমার স্বামী শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করতেন। তাঁর গুরু আনার স্বামীকে অশোক স্তম্ভের নকশা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। গুরুর নির্দেশ পাওয়ার পরই প্রায় টানা তিন মাস আমার স্বামী কলকাতার চিড়িয়াখানায় যেতেন। সিংহের স্বভাব , তারা কীভাবে বসে, দাঁড়ায়, অর্থাৎ ওদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করতেন।'
দীননাথ ভার্গবের পরিবারের দাবি যে, শিল্পীর নকশা করা অশোক স্তম্ভের মূল শিল্পকর্মের একটি প্রতিরূপ এখনও তাদের কাছে রয়েছে, কারণ তিনি বহু বছর পরে ১৯৮৫-তে সেটি সম্পূর্ণ করেছিলেন।
ভার্গবের নকশা করা শিল্পকর্মে দেখা যায় তিনটি সিংহের মুখ একটু খোলা এবং তাদের দাঁতও দৃশ্যমান। নীচে "সত্যমেব জয়তে" সোনালি রঙে লেখা।
এদিকে, ভার্গবের পুত্রবধূ নতুন সংসদ ভবনের উপরে অবস্থিত জাতীয় প্রতীকটির নকশার সঙ্গে তাঁর শ্বশুরের তৈরি আগেরটির তুলনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর কথায়, 'আমি এই বিতর্কে যেতে চাই না। তবে এটা স্বাভাবিক যে, একটি ছবি এবং তা দেখে তৈরি মূর্তির মধ্যে সামান্য পার্থক্য থাকতে বাধ্য।'
শিল্পী দীননাথের পুত্রবধূর দাবি, মধ্যপ্রদেশের যে কোনও আর্ট গ্যালারি, স্থান বা যাদুঘর ভার্গবের নামে নামকরণ করা হোক। সংবিধানের জন্য যে নকশা তৈরি করেছিলেন তাঁর স্মৃতি এরদ্বারাই রক্ষা করা যাবে। এই ইস্যুতে পরিবারের একাধিক নেতার আশ্বাস মিলেছে, কিন্তুদাবি আজ পর্যন্ত অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে।