আন্দামান ও নিকোবরের প্রাক্তন মুখ্য সচিব জিতেন্দ্র নারাইন এবং শ্রম কমিশনার আর এল ঋষির বিরুদ্ধে গণধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে ২১ বছর বয়সী এক মহিলা। সেই অভইযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত করেছে আন্দামান ও নিকোবর পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি)। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে যে, সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী জিতেন্দ্র নারাইন যৌন চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে এসআইটি তদন্ত করে জানতে পেরেছে।
মুখ্যসচিব হিসাবে মেয়াদ চলাকালীন নারাইনের পোর্ট ব্লেয়ারের বাড়িতে মেয়েদের নিয়ে আসা হত বলে অভিযোগ। অন্তত ২০ জন মহিলাকে এনে তাঁদের যৌন ব্যবসার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী। সাক্ষীরা তদন্তকারীদের নাকি জানিয়েছেন যে, যৌন শোষণের পরিবর্তে ওই ২০ জন তরুণীর বেশ কয়েকজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আগামী শুক্রবার, ২৮শে অক্টোবর নারাইন আন্দোমান নিকোবর পুলিশের এসআইটি-র জেরার মুখোমুখি হবেন।
পোর্ট ব্লেয়ারের এখক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নিশ্চিত করেছেন যে, সিডিআর (কল ডেটা রেকর্ড) এবং বহিষ্কৃত দুই আমলাদের মোবাইল ফোনের সেল ফোন টাওয়ার লোকেশন নজরে রাখা হয়েছে। গত জুলাই মাসে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে দিল্লিতে বদলি হন জিতেন্দ্র।অভিযোগ যে, মুখ্য সচিবের বাড়ির ক্লোজ সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা সিস্টেমের ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) এর হার্ডডিস্কটি প্রথমে মুছে ফেলা হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে, পোর্ট ব্লেয়ার থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের সময় ডিভিআরটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। একজন পূর্ত আধিকারিক এবং একজন স্থানীয় সিসিটিভি বিশেষজ্ঞ তাদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক প্রমাণলোপাটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নারাইনের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে আন্দামান নিকোবর প্রশানের আইনজীবীবর যুক্তি ছিল, র সামনে বলেছিলেন যে নির্যাতিতার বক্তব্য একটি "সুরক্ষিত সাক্ষী" এবং বৈদ্যুতিন প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। ২০ অক্টোবরের আদেশে বলা হয়েছে যে "আবেদনকারীর (নারাইন) দ্বারা প্রমাণ টেম্পার করার উদাহরণ রয়েছে।"
সব অভিযোগ অস্বীকার করে জিতেন্দ্র নারাইন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং আম্দামান নিকোবর প্রশাসনকে চিঠিতে বলেছে যে, তাঁর বিরুদ্ধে 'ষড়যন্ত্র' হয়েছে। দাবি করেছেন যে তার কাছে 'নির্দিষ্ট প্রামাণ রয়েছে যা মামলার ভুয়ো প্রকৃতি প্রদর্শন করে।' এফআইআর-এ দেওয়া দুটি তারিখের একটিতে তিনি পোর্ট ব্লেয়ারে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন মুখ্য সচিব। প্রামাণ হিসাবে সেই সময় নয়াদিল্লিতে তাঁর উপস্থিতি দেখানোর জন্য বিমানের টিকিট এবং অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময়সূচী উল্লেখ করেছেন।
জিতেন্দ্র নারাইনকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে নয়াদিল্লিতে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেছিলেন যে বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় তিনি সর্বশেষ ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারবেন না। তার আইনজীবী, যিনি আজ পোর্ট ব্লেয়ারে সর্বশেষ পিটিশন দাখিল করেছেন, মন্তব্য করতে রাজি হননি।
১৭ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে নারায়ণকে বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। ঋষিকেও বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তাঁর নামে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পোর্ট ব্লেয়ারে জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
১৮ অক্টোবর, আন্দামান নিকোবর পুলিশের একটি দল, নয়াদিল্লিতে নারাইনের বাসভবনে গিয়ে তাঁকে এসআইটির সামনে হাজির হওয়ার জন্য একটি নোটিস দেয়। তখন অবশ্য তিনি বাসভবনে ছিলেন না। ওই সময়ই পুলিশ দল নারাইয়ের ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন সহ "ইলেক্ট্রনিক" প্রমাণ সংগ্রহ করে এবং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পোর্ট ব্লেয়ারে নিয়ে যায়। নিখোঁজ ডিভিআর প্লেয়ারটি পুলিশের দ্বারা চিহ্নিত প্রমাণগুলির মধ্যে ছিল না।
যোগাযোগ করা হলে, আন্দামান নিকোবর পুলিশের ডিজি নীরজ ঠাকুর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন যে, '১লা অক্টোবর ২১ বছর বয়সী তরুণীর দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গণধর্ষণ অভিযোগটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা একটি এসআইটি গঠন করেছি এবং তাদের দ্বারা সংগৃহীত মৌখিক এবং বৈদ্যুতিন প্রমাণ সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী। তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে আমরা আদালতে একটি শক্তিশালী মামলা উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।'
তদন্তের জন্য জিতেন্দ্র নারাইনের ড্রাইভার, বাবুর্চি এবং অন্যান্য গৃহকর্মী সহ প্রাক্তন মুখ্য সচিবের কর্মীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে এসআইটি। তাদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। এঁদের একজনকে জিতেন্দ্র হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই কর্মী বলেছেন, 'তৎকালীন মুখ্য সচিব আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন যে আমি যদি কখনও বাড়িতে আসা (মহিলা) অতিথিদের সম্পর্কে কথা বলি তবে আমার জীবনে বিপদ নেমে আসবে।'