সরকারি বাংলো দখলমুক্ত করতে তৎপর কেন্দ্র। আর সেই তালিকায় রয়েছেন একাধিক পদ্ম সম্মান প্রাপক, সঙ্গীত-নাটক অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্তরা। ১৯৮০ সালে এশিয়াড ভিলেজে এই সব শিল্পীদের একসময় ভাড়ায় থাকতে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এবার ৪২ বছর পর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে সরকার।
উৎখাত হওয়া শিল্পীদের মধ্যে ৯১ বছরের পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপক ওডিশি নৃত্যগুরু মায়াধর রাউতও রয়েছে। দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মানে ভূষিত হন ২০১০ সালে। ওডিশি নৃত্য প্রসারে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে যখন তাঁকে উচ্ছেদ করা হল, তখন রাস্তায় ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরিত সেই মানপত্র। এছাড়াও আরও জিনিসপত্র তখন রাস্তায় পড়ে। নবতিপর বৃদ্ধ তখন বাস্তুহারা।
নৃত্যগুরুর মেয়েও ওডিশি নৃত্যশিল্পী। মধুমিতা রাউত বলেছেন, "দুপুরের খাবার নিয়ে আমরা বসেছি, তখনই আধিকারিকরা আসেন। আজকে আমরা খুব ব্যথিত এবং ভেঙে পড়েছি। দেশের অন্যতম, কিংবদন্তী নৃত্যশিল্পী যেমন সোনাল মানসিং, রাধা রেড্ডিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন যিনি আর তাঁকেই এমন নির্মমভাবে ঘরছাড়া করা হল। ৫০ বছর ধরে দিল্লিতে তিনি নাচ শেখাচ্ছেন। তাঁকে এই ভাবে বেঘর করা, এটা প্রাপ্য় ছিল না। তাঁর কোথাও এক ইঞ্চিও জমি নেই। সব নাগরিকেরই অন্তত মৌলিক সম্মানটুকু প্রাপ্য।"
বর্তমানে নিজের ছাত্রীর অভিভাবকের মালিকানাধীন সর্বোদয়া এনক্লেভের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন মায়াধর ও তাঁর মেয়ে। উল্লেখ্য, সাতের দশক থেকে ৪০-৭০ বছর বয়সী শিল্পীদের সাধারণ ভাড়ায় তিন-চার বছরের জন্য সরকারি ঘর ভাড়ায় দেওয়া হয়। পরে সেই সময়সীমা বাড়ানো হয়। গত ২০১৪ সালে সেই বর্ধিত সময়সীমাও পার হয়ে যায়। এরপর সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে শিল্পীদের বার বার চিঠি পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন জম্মু-কাশ্মীরের সেনা স্কুলে হিজাব বিতর্কের আঁচ, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা
আবাসন এবং পুর বিষয়ক মন্ত্রক দুবছর আগে বাড়িগুলি খালি করার নোটিস দেয়। এঁদের মধ্যে কত্থক সম্রাট বিরজু মহারাজ, ধ্রুপদ শিল্পী ওয়াসিফুদ্দিন দাগার, কুচিপুরী গুরু জয়ারামা রাও এবং মোহিনীআট্টম শিল্পী ভারতী শিবাজি এই নোটিসের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন। আবাসন মন্ত্রকের অধীনে ডিরেক্টরেট অফ এস্টেট জানিয়েছে, সরকারি বাংলো দখলমুক্ত করার নির্দেশ রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে শিল্পীরা আর সরকারি আবাসনে থাকতে পারবেন না।
দিল্লি হাইকোর্ট মানবিক দিকে থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিতে বলেছিল। সেই সময়ও পেরিয়ে গেছে। এবার তাঁদের ঘর খালি করতে বলা হয়েছে। ২৮ জনের মধ্যে ১৭ জন শিল্পী ঘর খালি করেছেন। বাকিরা কয়েকদিনের মধ্যেই খালি করবেন।