/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/08/pakhtoon.jpg)
সীমান্ত গান্ধীর নাতনি ইয়াসমিন নিগার খান। ছবি- পার্থ পাল
আতঙ্ক! এটাই যেন এখন একমাত্র সঙ্গী এদেশে বসবাসকারী পাখতুন বা পাঠানদের। খান আবদুল গাফ্ফর খান, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে যিনি সীমান্ত গান্ধী বলে অধিক পরিচিত। পাঠান এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর বংশধরদেরও আজ দিন কাটছে প্রবল উৎকণ্ঠায়। কলকাতার পার্ক সার্কাসের কাছে করিম হুসেন লেন। সেখানেই বর্তামানে বসবাস সীমান্ত গান্ধীর পরবর্তী প্রজন্মের। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর নাতনি ইয়াসমিন নিগার খান। আফগানিস্থানে তালিবানরাজ ফিরতেই আতঙ্ক গ্রাস করেছে বছর পঞ্চাশের ইয়াসমিনকে। আফগান আম আদমির পরিণতির কথা ভেবেই চিন্তিত তিনি। ভয় ধরেছে এ দেশে বছরের পর বছর বসবাসকারী ৩২ লক্ষ পাঠানদের নিয়েও।
তালিবানদের কব্জায় প্রায় গোটা আফগানিস্থান। বিশ্বজুড়ে এখন যেন বিভিষিকা কাবুল। বিপন্ন মানবতা। ধ্বংসলীলাই যেন সে দেশের ভবিতব্য। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় পাঠানদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া পাখতুন-ই-হিন্দের প্রধান ইয়াসমিন নিগার খান দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, "তালিবানদের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্থান বসবাসকারী আত্মীয়দের থেকে ভারতীয় পাঠানরা বহু উগ্র ফোন পাচ্ছেন। সবাই খুব ভীত। এর পরে কী হতে পারে কেউ জানে না।"
আরও পড়ুন-‘তালিবানদের বিশ্বাস নেই’, শান্তি-সুরক্ষার আর্জি নিয়ে কাবুলে বৈঠক শিখ ও হিন্দু নেতাদের
তালিবান জমানায় আফগানিস্থানের স্বাধীনতা, উন্নয়ন ফের বিপন্ন হবে বলেই মনে করেন সীমান্ত গান্ধীর নাতনি ইয়াসমিন নিগান খান। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ইয়াসমিন বলেছেন, "তালিবান সরকারের প্রত্যাবর্তনে আফগানিস্তান ধ্বংসের মুখে পড়বে। বিশেষ করে মহিলারা। তাঁদের স্বাধীনতা ও অধিকার সম্পূর্ণ বিপন্ন হবে। এতে সাধারণ আফগানরা ভুগবেন ও তাঁদের প্রবল আপোস করতে হবে।" সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অন্যান্য শক্তিশালী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন ভারতীয় পাঠানদের সংগঠনের এই নেত্রী।
ব্রিটিশ শাসনের ভারতে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের অবিসংবাদিত নেতা খান আবদুল গাফফার খান। গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত কংগ্রেসের সমর্থক এই মানুষটি বেছে নিয়েছিলেন অহিংস আন্দোলনের পথ। তিনি এবং তার অনুগামীরা স্বাধীনতার দাবিতে ১৯২৯ সালে শুরু করেন অহিংস আন্দোলন। শক্তিশালী পাঠানদের অহিংস পথে আন্দোলনে সামিল ছিল এক বিপ্লব। এই মানুষটি এবং তার অনুগামীরা নিজেদের ‘খুদা-ই- খিদমতগার’ অর্থাৎ 'ঈশ্বরের সেবক' বলতেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সীমান্ত গান্ধী প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন।
আরও পড়ুন-আফগানিস্তান থেকে ভারতে ঢোকার নয়া ভিসা বিভাগ চালু কেন্দ্রের
সীমান্ত গান্ধী তাঁর দত্তক পুত্র লালা জান খানকে ১৯৪৯ সালে ভারতে পাঠান। থাকতেন দিল্লিতে। ভারতীয় পাঠানদের সংগঠন ওই বছরই গড়ে ওঠে দ্য পাখতুন জিগরা-ই-হিন্দ। পরে ১৯৬ সালে কলকাতায় চলে আসেন লালা জান খান। তাঁরই কন্যা ইয়াসমিন নিগার খান। বর্তমানে ভারতীয় পাঠানদের সংগঠনের প্রধানের দায়িত্বে তিনি।
জেহাদি তালিবানি জমানায় মহিলাদের করুণ পরিণতির কাহিনী বিশ্ব জানে। সেই স্মৃতি মনে করেই শিউড়ে উঠছেন ইয়াসমিন। তিনি বলেন, "ইতিমদ্যেই তালিবানরা আফগান মহিলাদের কাজে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে তালিবান শাসনে দেখেছি যে, বিধবাদের ইসলামের নাম করে নিয়ে যেত জেহাদিরা। তারপর ওই মহিলাদের জোর করে বিয়ে করত তালিবানরা। এটাকে ইসলাম মান্যতা দেয় না। তালিবানরা মহিলাদের আধুনিক শিক্ষার বিরুদ্ধে। এখানে আমরাও মুসলমান, কিন্তু আধুনিক শিক্ষা, আচার-আচরণ বা চাকরির ক্ষেত্রে কোনও বাধা রয়েছে কি?"
আরও পড়ুন-নিজের সিদ্ধান্তে অটল, তালিবান উত্থানের দায় আফগানদের ঘাড়েই ঠেললেন বাইডেন
ভারতে বা বাংলায় খান আবদুল গাফ্ফর খানের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের জন্য কেন্দ্র বা রাজ্যে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ইয়াসমিন নিগার খান। কিন্তু এখনও তাতে সাড়া মেলেনি। তিনি বলেছেন, "কিছু কারণে এখনও এই আবেদন বাস্তবায়িত হয়নি। তবে আমি আশাবাদী।" সীমান্ত গান্ধী ১৯২১ সালে মেয়েদের জন্য উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে (বর্তমানে যা আফগানিস্থানে) স্কুল স্থাপণ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর নাতনি।
তাহলে কি যুদ্ধই আফগানিস্থানের একমাত্র ভবিষ্যত। সীমান্ত গান্ধীর নাতনি বলেন, "আম আফগানরা দেশের উন্নতি, সমৃদ্ধি চায় না - এমনটা নয়। কিন্তু তালিবানরা ক্ষমতা দখল করায় বারে বারেই তা হোঁচট খাচ্ছে।"
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন