ভারতীয় বায়ুসেনার বালাকোটে অতর্কিত হামলার জেরে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়লেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পারভেজ খাটটার্ক এবং বিদেশ মন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, পাকিস্তান বায়ুসেনার প্রতিক্রিয়া এত দেরিতে আসে কেন।
খাটটাক এবং কুরেশি পাকিস্তানের সরকারি অবস্থানেই অনড় রইলেন, যে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের আকাশপথে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি এগোতে পারে নি, কারণ পাকিস্তান বায়ুসেনার চ্যালেঞ্জের মুখে তাদের ফিরে যেতে হয়। তা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে বারবার পাকিস্তানি বায়ুসেনা কেন ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলি আটকাতে পারে নি, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, যার ফলে তাঁকে উদ্দেশ করা প্রশ্নের উত্তর দিতে এগিয়ে আসতে হয় বিদেশ মন্ত্রীকে।
আরও পড়ুন: বৃত্ত সম্পূর্ণ, ’৯৯-এর বিমান অপহরণকারীদের ঘাঁটিতে এয়ার স্ট্রাইক
এক পাকিস্তানি সাংবাদিক এও জানতে চান যে পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনোয়ার খানের মধ্যে কোনো গোপন চুক্তি হয়েছে কিনা ভারতীয় বায়ুসেনাকে পাকিস্তানের এলাকায় ঢুকতে দেওয়া নিয়ে। "গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় আমাদের সেনা প্রধান বায়ুসেনার সদরে যান। ওদের চার-পাঁচ কিলোমিটার আসতে দেওয়া হবে, এমন কি কোনো চুক্তি হয়েছিল? কারণ আপনারা বলছেন ওরা ওইটুকুই এসেছিল, কিন্তু খবর আসছে যে ওরা অনেকটাই এসেছিল। আমাদের বিমান এত দেরি করল কেন? ভারতীয়দের পালাতে দেওয়া হলো কেন?"
ক্ষুব্ধ বিদেশ মন্ত্রী জানান, এই প্রশ্নের উত্তর তিনি দেবেন। "আপনার এই মন্তব্য অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। সেনা এবং বায়ুসেনা প্রধান কখনোই এমন হতে দিতে পারেন না। এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই। আমাদের বিমানের দেরি হয় নি। আমরা একেবারেই তৈরি ছিলাম, এবং সবসময়ই তৈরি থাকি চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য। ওদের ক্ষমতাকে অবহেলা করবেন না। আমাদের নিজেদের সময়জ্ঞান আছে। অন্যরা কী করছে, আমরা তার দ্বারা প্রভাবিত হবো না। আমরা পদক্ষেপ নেব, প্রতিক্রিয়া দেব না।"
ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানি বায়ুসেনার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অকেজো করে দেয়, এই বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, খবরটি সম্পূর্ণ ভুল, কারণ পাকিস্তানি বায়ুসেনা সত্যিই অপ্রস্তুত থাকলে অত দ্রুুুত বিমান ওড়াতে পারত না।
খাটটাক বলেন পাকিস্তানি বায়ুসেনা প্রস্তুত ছিল, "কিন্তু রাতের অন্ধকারেে ক্ষয়ক্ষতির আন্দাজ করা যায় নি। যে কারণে অপেক্ষা করছিল তারা। এখন দিশা পেয়েছি আমরা, এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সব কথা এখানে বলা যাবে না, কিন্তু জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে।"
আরও পড়ুন: ফের প্রত্যাঘাত ভারতের, ধ্বংস ৫ পাক পোস্ট
এখানে ফের একবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর তরফে জবাব দেন কুরেশি, এবং বলেন যে ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পাকিস্তানি বিমান আকাশেই ছিল। "আমরা সবরকম পরিস্থিতির জন্যই তৈরি ছিলাম, ওদের চেষ্টা ছিল বহুমাত্রিক হামলার। বিশদে বলব না, কিন্তু ওদের ঠিক সময়মতো বাধা দেওয়া হয়। ওরা রাত ২.৫৫ তে ঢুকে ২.৫৮ তে বেরিয়ে যায়।নিয়ন্ত্রণরেখা থেকেই ফিরে যায় তারা।"
পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলোয় এখন দেশাত্মবোধক গান চলছে সর্বক্ষণ, এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেও পাক মন্ত্রীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, গান তো চলছে, কিন্তু পাক সরকারের নীতি তো মনে হচ্ছে, "অবকে মার কে দেখ" (আর একবার মেরে দেখা!)। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, "একটিও ভারতীয় যুদ্ধবিমানের গায়ে আঁচড়টুকুও লাগল না, এটা কী করে সম্ভব হল? বিমানগুলিকে গুলি করে নামানো গেল না কেন? এখন কী হবে? পুরোদমে যুদ্ধ? না কি সে সম্ভাবনা নেই?"
উত্তরে কুরেশি বলেন, "আপনারা সবাই পাকিস্তানি, এবং আমার একটি অনুরোধ আছে আপনাদের কাছে। পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে ভারতের আগ্রাসনের উত্তর দেওয়ার মতো ক্ষমতা পাকিস্তানের সামরিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি সেই নেতৃত্বের কাছে পরীক্ষা।উত্তেজনার মাত্রা বাড়ানো আমাদের লক্ষ্য নয়, ছিলও না।আমরা সবসময় উত্তেজনা প্রশমনের কথাই বলে এসেছি।আগ্রাসনের প্রত্যুত্তর দেওয়ার অধিকার আমাদের আছে এবং দেশবাসীকে আমরা হতাশ করব না।"
তিনি আরও যোগ করেন যে পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে তিনি এই মুহূর্তে আর কিছু বলতে চান না, যাতে করে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।