প্রয়াত স্বঘোষিত মধ্যরাতের সন্তান, প্রখ্যাত পাকিস্তানি-কানাডিয়ান সাংবাদিক তারেক ফাতেহ। ১৯৪৯ সালের ২০ নভেম্বর করাচিতে জন্মেছিলেন তিনি। সোমবার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে। ৭৩ বছরের ফাতেহ ইসলামিক মৌলবাদ এবং পাকিস্তান সরকারের কড়া সমালোচক ছিলেন। এছাড়ায় সমকামীদের হয়ে আইনি লড়াই করতেন। তাঁর মেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
হিন্দুত্ববাদীদের পছন্দের লোক ছিলেন ফাতেহ। টুইটারে উপচে পড়েছে শোকজ্ঞাপন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে লিখেছেন, "তারেক ফাতেহ একজন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ছিলেন। একজন লেখক, সঞ্চালক। সংবাদমাধ্যম এবং সাহিত্য জগতে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। নিজের আদর্শ এবং বিশ্বাসের প্রতি দৃঢ় ছিলেন তিনি। নিজের সাহস এবং দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।"
অভিনেতা অনুপম খের লিখেছেন, "আমার বন্ধুর প্রয়াণের খবর খুবই মর্মাহত। মনের দিক থেকে একজন প্রকৃত ভারতীয় ছিলেন। একাধারে সাহসী এবং নরম মনের মানুষ ছিলেন।" পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী লিখেছেন, "তারেক ফাতেহ একমেবাদ্বিতীয়ম। সাহসী, মজার, বুদ্ধিমান, একাগ্র বুদ্ধিজীবী, ভাল বক্তা এবং লড়াকু। তারেক আমার ভাই, খুব কাছের বন্ধু হিসাবে গর্বিত।"
তারেকের অভিভাবকরা বোম্বে থেকে করাচিতে চলে যান স্বাধীনতার এক মাস পরে। তারেক নিজেকে বলতেন, পাকিস্তান জন্মানো একজন ভারতীয়। ইসলামে জন্মানো একজন পাঞ্জাবি। মুসলিম আধ্যাত্মিকতা নিয়ে কানাডার বাসিন্দা, মার্ক্সীয় যৌবনের দূত। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈবরসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। কলেজে বামপন্থী নেতা ছিলেন। স্নাতকের পর সাংবাদিকতা শুরু করেন।
১৯৭০ সালে করাচি সান কাগজে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে পাকিস্তানের সরকারি চ্যানেল পাকিস্তান টেলিভিশনে ১৯৭৭ সালে তদন্তকারী সাংবাদিক হয়ে যান। জিয়া-উল-হক সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করে। তার পর তাঁকে সৌদি আরবে চলে যেতে হয়। শেষে কানাডায় স্থায়ী হন তিনি ১৯৮৭ সালে। সেখানে টরন্টো রেডিও-তে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে টরন্টো সান কাগজে কলাম লেখা শুরু করেন।
ফাতেহ পাকিস্তান সরকারে সেনার প্রভাব নিয়ে সরব হয়েছিলেন। ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিবাদ করেন। আফগান যুদ্ধের সময় সৌদির সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে আমেরিকা আর্থিক সাহায্য করায় সমালোচনা করেন তিনি। টুইটারে ভুয়ো তথ্য পোস্ট করার জন্যও বেশ কয়েকবার শিরোনামে আসেন ফাতেহ।