জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করার পর এই প্রথমবার নিয়ন্ত্রণ রেখায় সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে কুপওয়ারা জেলায় গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। পাকিস্তানি সেনার গুলিতে দুই ভারতীয় সেনা-সহ এক নাগরিকের নিহত হওয়ার পরই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি লঞ্চ প্যাডে হামলা চালায় ভারত। সেনার বক্তব্য, ভারতের পাল্টা গোলাবর্ষণে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে থাকা তিনটি পাক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেন, "সন্ত্রাসঘাঁটিগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং ১০ জন পাক সেনা এবং তিনটি জঙ্গি ঘাঁটিও ধ্বংস করা হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, তাঁদের কাছে তথ্য ছিল যে জঙ্গিরা আগেই এই শিবিরগুলিতে এসেছিল। গত একমাস ধরে এই অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল পাক জঙ্গিরা।
আরও পড়ুন- কাশ্মীর সীমান্তে পাল্টা হামলা ভারতের, নিহত পাঁচ পাক সেনা
এদিকে, ভারতের এই পাল্টা প্রত্যাঘাতের পরই পাকিস্তান ইসলামাবাদে ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার গৌরব আলুওয়ালিয়াকে ডেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর ভারতকে নিশানা করে বলেন, "ভারত নীলম উপত্যকার জুরা, শাহকোট ও নওহরি এলাকাগুলিতে ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ লোকদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছে।" এমনকি টুইট করে বলা হয়, "৯ জন ভারতীয় সেনা গুরুতর আহত হয়েছেন। ২টি ভারতীয় বাঙ্কারও ধ্বংস করা হয়েছে।" যদিও ভারত এই মন্তব্যকে অস্বীকার করেছে।
প্রসঙ্গত, উরির সেনা ঘাঁটি এবং পুলওয়ামায় আধাসেনার উপরে হামলার জবাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের বালাকোটে অভিযান চালিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বালাকোটের জয়শ-ই-মোহাম্মদ শিবিরে আঘাত হানা এবং পুলওয়ামার হামলার পর ফের এই পাল্টা হামলা ভারতীয় সেনাবাহিনীর। এর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে এলওসি-জুড়ে এই জঙ্গি ঘাঁটিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছিল। সেভাবেই শনিবার রাতে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিতে আক্রমণ চালায় ভারত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্রে খবর, শনিবার রাত ১১টা নাগাদ টাংধর এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু করে পাকসেনা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, “পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার চেষ্টা করে। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী সঠিক সময়ই সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে সমর্থ হয়েছে।”
আরও পড়ুন- ‘ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, শাহর সঙ্গে কথা বলব’, সীমান্তে গুলিকাণ্ডে মন্তব্য বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জানান, পাকিস্তানের এই হামলায় ভারতীয় দু'জন সেনা ছাড়াও একজন নাগরিকেরও মৃত্যু হয় এবং তিনজন আহত হয়। নিহতরা হলেন- পদম বাহাদুর, গামিল কুমার এবং টাংধরের বাসিন্দা মহম্মদ সাদিক (৫৫)। এমনকি, শনিবার জম্মুর হীরানগর এলাকার কাঠুয়া জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্তে গুলি ও মর্টার শেলিং করে পাকিস্তান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুটি বাড়ি। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংকেও গোটা ঘটনাটি জানানো হয় বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান বিপিন সিং রাওয়াত। তাঁরা এই ইস্যুটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে গিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিপিন সিং বলেন, "রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সামরিক বাহিনী একসঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছে। কোনওরকম বিধিনিষেধ আরোপ না করেই সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমাদের পুরোপুরি সমর্থন করেছে।"
Read the full story in English