প্যাংগং টিএসও-তে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করছে চিনা বাহিনী। ফিঙ্গার ৪-এ হেডিপ্যাড বানানোর সঙ্গে সঙ্গে প্যাংগং টিএসও-র দক্ষিণে হঠাৎই সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে লাল ফৌজ। প্যাগংকে কেন্দ্র করে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালের অগাস্টে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করে কেন্দ্রীয় সরকার। লাদাখকে পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেই চিনের নজরে প্যাংগং।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর চিনা বাহিনীর আগ্রাসী রূপ প্রকাশ্যে আসে। প্যাংগং হ্রদের উত্তরে ফিঙ্গার ৮-এর দিকে নজরদারির জন্য ভারতীয় বাহিনীকে যেতে বাধা দেয় লাল ফৌজ। ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে পিপলস লিবারেশন আর্মির আটটি সাজোঁয়া গাড়ি ফিঙ্গার ৪-এ আসে। ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে লাল ফৌজের তীব্র কথা আদান-প্রদান হয়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সংঘর্ষে জড়ায় দুই দেশের সেনা। আধিকারিকদের কথায়, এই সংঘর্ষে ভারতের ১০ সেনাকর্মী ও আইটিবিপি জওয়ান জখম হয়। প্যাংগং লেকে ভারতীয় সেনার তিনটি নৌকা ভাঙে দেয় চিনা বাহিনী। পাল্টা হিসাবে ভারতীয় সেনারাও চিনের দু'টি নৌকা ভাঙে।
ফিঙ্গার ৪-এ নজরদারির জন্য পাথরের কাঠামো নির্মাণ করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেগুলিকেও গুঁড়িয়ে দেয় লাল ফৌজ। একই ধাঁচে চিনা সেনারা ফিঙ্গার ৮-এ তাদের শিবিরেরে আরও পশ্চিমে কাঠামো নির্মাণ করে। এরপরই ফিঙ্গার ৮-এর দিকে নজরদারির জন্য ভারতীয় বাহিনীকে যেতে বাধা দেয় লাল ফৌজ। ক্রমশ এই বাধা তীব্র হতে থাকে।
কিন্তু, দেশের সুরক্ষায় ভারতীয় বাহিনীর কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় নজরদারি চালানো ছিল একান্ত জরুরি। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাই সেখানে পৌঁছতে বিকল্প রুটের সন্ধান চালায়। ফিঙ্গার ৪-এর পিছন দিক দিয়ে ফিঙ্গার ৮-এর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে এ দশের বাহিনী। যার প্রবল প্রতিবাদ জানায় চিন। ওই এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। যার ফলশ্রুতি চলতি বছর মে মাসের ৫-৬ তারিখের সংঘর্ষ। এরপর থেকেই নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে ইন্দো-চিন সেনাবাহিনী।
গত দু'মাসে প্যাংগং টিএসও-তে ভারত-চিনা বাহিনী অন্তত তিনবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, লাল ফৌজ ফিঙ্গার ৪-এর কাছে হ্রদের দু'ধারে পিলবক্স, বাঙ্কার ও নির্মাণ তৈরি করেছে।এমনকী সেখানে সেনা মোতায়েন বৃদ্ধির সঙ্গেই সমরাস্ত্রও বৃদ্ধি করেছে চিনা বাহিনী।
দিল্লির দাবি নিয়ন্ত্রণরেখার এপারে, ভারতীয় ভূখণ্ডে ফিঙ্গার ৮ অবস্থিত। চিনাদের মতে, আরও নিয়ন্ত্রণরেখা আরও কয়েক কিমি পশ্চিমে বিস্তৃত। তবে, প্যাংগং নিয়ে ভারত-চিন বিরোধ অনেক দিনের পুরনো। আধিকারিকদের দাবি, ২০১৭ সালের ১৫ আগাস্ট প্যাংগংয়ে দুই দেশের সেনার মধ্যে হাতাহাতির ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। তারপর থেকে দু'বছর অবশ্য এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। উল্লেখ্য, প্যাংগং দিয়েই ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৯ সালে চিনা বাহিনী ১৪২ বার এ দেশের এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছিল। ২০১৮ ও ১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭২ ও ১১২।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন