রাষ্ট্রপতি হিসাবে সংসদে তাঁর প্রথম ভাষণেই দ্রৌপদী মুর্মু মঙ্গলবার পরপর দুটি মেয়াদে একটি স্থিতিশীল সরকার নির্বাচন করার জন্য দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা প্রজানিয়েছেন। উভয়কক্ষে যৌথ ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, 'আমি সকল দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই কারণ আপনারা লাগাতার দু'বার একটি স্থিতিশীল, নির্ভীক এবং নির্ণায়ক সরকারকে নির্বাচন করেছেন। আমার সরকারের কাছে দেশের মঙ্গলই একমাত্র অগ্রাধিকার। ভয়মুক্তভাবে এই সরকার নীতি, রণনীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বদলের পক্ষে।'
রাষ্ট্রপতি মুর্মুর ভাষণের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। বক্তব্যের শুরুতেই রাষ্ট্পতি বলেন, 'এটি এমন একটি ভারত হওয়া উচিত যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না, মধ্যবিত্ত শ্রেণিও সমৃদ্ধ হবে। এমন একটি ভারত যেখানে সমাজ ও দেশকে পথ দেখানোর জন্য যুব ও মহিলারা সামনে দাঁড়াবেন। এমন একটি ভারত যেখানে যুবসমাজ সময়ের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে থাকবে।'
এরপরই রাষ্ট্রপতি মুর্মুর মুখে শোনা যায় 'আত্মনির্ভর ভারতে'র কথা। বলেন, '২০৪৭ সালের মধ্যে আমাদের এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে হবে যা অতীতের গর্বের সঙ্গে সংযুক্ত। যেখানে আধুনিকতার সমস্ত সোনালি অধ্যায় থাকবে। আমাদের এমন একটি ভারত গড়ে তুলতে হবে যা আত্মনির্ভর এবং মানবিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম।'
অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী দাবি করেছেন, ভারতের বাজেটের দিকে গোটা দুনিয়া তাকিয়ে আছে। সংসদের যৌথ অধিবেশনে ও প্রধানমন্ত্রীর কথায়র রেশ রাষ্ট্রপতি মুর্মুর বক্তব্যে। বলেন, 'এই সরকারের ৯ বছরে ভারতের নাগরিকরা প্রথমবারের জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন দেখেছেন। সবথেকে বড় পরিবর্তন হল আজ ভারতীয়ের আত্মবিশ্বাস একদম শীর্ষে। ভারতকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বজুড়ে পাল্টেছে। আগে যে ভারত নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকত এখন সেই ভারতই বিশ্বকে সমাধান দিচ্ছে। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ মন্ত্রে ভর করে আমরা শুরু করেছিলাম। সময়ের সাথে সাথে এর সঙ্গে সবকা বিকাশ, সব বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াসও যুক্ত হয়েছে। এই মন্ত্রই আজ উন্নত ভারতের প্রেরণা। যেসব দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে সেসব দেশ এখন তীব্র সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। তবে আমার সরকার দেশের ভালর জন্য যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের অবস্থা অনেক ভাল।'
চলতি বছরেই জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হবে। রাষ্ট্রপতির মুখে থাই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এছাড়া তিন তালাকের বিষয়েও ভাষণে উল্লেখ করেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। বলেছেন, 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে এলএসিতে কঠোর জবাব। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল থেকে শুরু করে তিন তালাক বাতিল করা, আমার সরকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি বলেন, 'আমার সরকার তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তুলেছে। এখন যেহেতু মৌলিক সুযোগ-সুবিধা তাঁদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, এই লোকেরা নতুন স্বপ্ন দেখতে সক্ষম হচ্ছেন।'
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'আমার সরকারের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে, দুর্নীতি গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের সবচেয়ে বড় শত্রু। পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য আমার সরকার পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী আইন পাস করেছে।'
'বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও', 'গরিবি হটাও', 'উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা কর্মসূচি', 'বিশ্বের ফার্মাসি' নিয়েও কেন্দ্রের উদ্যোগর প্রশংসা করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেন, 'আমার সরকারের নতুন উদ্যোগের ফলে আমাদের প্রতিরক্ষা রফতানি ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি গর্বিত যে আজ আইএনএস বিক্রান্ত, প্রথম দেশীয় বিমানবাহী রণতরীও আমাদের নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছে।'
এদিকে, রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, সাংসদ রাহুল গান্ধী সহ বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সাংসদ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শ্রীনগর থেকে বিলম্বিত উড়ানের কারণে রাষ্ট্রপতির ভাষণে উপস্থিত হতে পারেননি।