সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি 'বিপ্লবী'। "শান্তি" অর্জনের উপায় হিসাবে "যুদ্ধ"কে সমর্থন করা ললিত ঝাঁ'র ইতিমধ্যেই কলকাতার সংযোগ প্রকাশ্যে। একজন স্বল্পভাষী এবং মৃদুভাষী শিক্ষকের যে সংসদ ভবনে নিরাপত্তা লঙ্ঘন কান্ডের মাস্টারমাইন্ড হতে পারে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারছেন না তাঁর পড়শীরা।
আদতে বিহারের দারভাঙ্গা জেলার বাসিন্দা ললিত। প্রায় দুদশক ধরে কলকাতায় আস্তানা গড়েছেন। ৫ নভেম্বর এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন ' যারা মানুষের অধিকারের কথা বলবে তাদেরই মানুষ প্রকৃত কমিউনিস্ট বলে মনে করবেন'। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ছবি সহ ললিত তার ইনস্টাগ্রামে ১ নভেম্বর আরেকটি পোস্ট করেছেন, এতে লেখা ছিল, “একজন ব্যক্তি একটি ধারণার জন্য মারা যেতে পারে। কিন্তু এই ধারণাটি তার মৃত্যুর পর হাজারো জীবনে অবতীর্ণ হবে।” দুই দিন আগে আপলোড করা তার শেষ পোস্টটি ছিল সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের একটি ভিডিও যেখানে অনুপ্রবেশকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন।
তিনি ৭ ডিসেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর পতাকা দিবস এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীন্দ্রনাথ মুখার্জির (বাঘা যতীন) জন্মদিন পালন করেন।
কলকাতার বড়বাজার এলাকায় যেখানে তিনি ভাড়া থাকতেন সেখানে তিনি প্রতিবেশীদের কাছে একেবারেই সহজ সরল একজন ব্যক্তি হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। ৩৭ বছর বয়সী ললিতের বাগুইআঁটিতেও একটি ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টও ছিল যেখানে তিনি তার বাবা দেবানন্দ ঝা, মা এবং ছোট ভাই সোনু থাকতেন। ললিতের বড় ভাই শম্ভু ঝা, যিনি বিবাহিত, পরিবার থেকে আলাদা থাকেন।
টিউশনি করার পর থেকে স্থানীয় লোকেদের কাছে "মাস্টারজি" নামেই পরিচিত ছিলেন ললিত। আশেপাশের বাসিন্দারা তাকে স্বল্পভাষী হিসেবে চিনতেন যিনি এলাকার সব ধরনের সমাবেশে যোগ দিতেন।
১০ ডিসেম্বর, তিনি তার বাড়িওয়ালা, শেফালি সর্দারকে বলেছিলেন যে তার পরিবার কয়েক মাসের জন্য বিহারের গ্রামে বেড়াতে আসছে তবে তিনি কলকাতায় থাকবেন। সেদিন সন্ধ্যায় তিনি এই বলে বাসস্থান ত্যাগ করেন যে তার দিল্লিতে কিছু জরুরী কাজ আছে এবং কয়েক দিনের মধ্যে ফিরে আসবেন।
শেফালি সর্দার বলেন, “১০ ডিসেম্বর, ললিতের বাবা দেবানন্দ এবং তার পরিবার বিহারে তাদের পৈতৃক গ্রামে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে তারা দুই মাস সেখানে থাকবেন। আমাকে বলা হয়েছিল যে ললিত এখানে থাকবে এবং সে ভাড়া দেবে। ললিত তার বাবা-মাকে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে নামতে গিয়েছিল। কিন্তু একই সন্ধ্যায় তিনি জানান, তিনি তিন-চার দিনের জন্য দিল্লি যাচ্ছেন।
ললিতের প্রতিবেশী মনিকা দে বলেন, “তারা সবাই নিপাট ভদ্রলোক। আমরা ললিতকে কখনো কোনো খারাপ আচরণে লিপ্ত হতে দেখিনি। কিন্তু টিভিতে তার ছবি দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই। পুলিশ এখানে আমাদের বক্তব্য রেকর্ড করতে এসেছে।”
বড়বাজারের ব্যবসায়ী রাজেশ শুক্লা বলেন, “মাস্টারজি কিছু এনজিওর সঙ্গে যুক্ত থাকায় এলাকার সব ধরনের সামাজিক সমাবেশে যোগ দিতেন। গতকাল যখন আমি তাকে প্রথম টিভি চ্যানেলে দেখেছিলাম, আমি অন্তত তিনবার চেক করেছিলাম এই ভেবে কোথাও আমার কোন ভুল হচ্ছে না তো? সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় তার নাম ও মুখ দেখে আমি খুবই মর্মাহত। আমার কাছে তিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।"
অনুজ আগরওয়াল, যিনি ললিতের পাশেই থাকতেন তিনি বলেন, “আমি জানতাম যে তিনি একজন গৃহশিক্ষক ছিলেন। তিনি শিশুদের সব বিষয় পড়াতেন। তিনি একজন মৃদুভাষী ব্যক্তি ছিলেন,”।