চোখে ছিল স্বপ্ন আর অদম্য মনের জেদ। এই দুইকে সম্বল করে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের করুন পরিণতি আজ তাকে সেই লক্ষ্য থেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আইএমএ দেরাদুন থেকে পাস আউট, আফগান সেনা আধিকারিক জীবিকা অর্জনের জন্য হিন্দি সিনেমায় আজ ছোটখাট অভিনয় করেই পেট চালাচ্ছেন।
লেফটেন্যান্ট ইদি মোহাম্মদ আমানি আফগান সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন যারা তালেবান আফগানিস্তান দখলের আগে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তালেবান আমলে আর দেশে ফিরতে চান না তিনি। নেই স্থায়ী কোন জীবিকা। পেট চালাতে হিন্দি সিনেমায় সেনা আধিকারিকের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার এমন জীবন কাহিনী চমকে দিয়েছে অসংখ্য মানুষকে।
প্রায় বছর দুয়েকে আগের কথা...। লেফটেন্যান্ট ইদি মোহাম্মদ আমানি ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি (আইএমএ) দেরাদুন থেকে আফগান সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হিসাবে তার ট্রেনিং শেষ করেন। এরপরই তালেবান আফগানিস্তান দখল করে। তার পর থেকে আর দেশে ফিরে যান নি তিনি। এখন হিন্দি সিনেমায় ব্রিটিশ সেনা অফিসারদের চরিত্রে অভিনয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
আফগানিস্তানের তালেবান দখলদারিত্ব আমানি এবং তার মতো কয়েক ডজন তরুণ আফগান সেনা অফিসারের সেনা হওয়ার স্বপ্নকে ভেঙে দিয়েছে যারা আইএমএ দেরাদুন এবং অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমি (ওটিএ), চেন্নাইতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অনেকেই তাদের নিজের দেশে দমনমূলক তালেবান শাসনে ফিরে যেতে ইচ্ছুক নয়।ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আমানি বলেন, পরিচালক রাম মাধবানির শুটিং করা জালিয়ানওয়ালাবাগের একটি আসন্ন সিরিজে একটি ছোট ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি অমৃতসরে শুটিং করছেন। আমানি একজন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করছেন।
আফগানিস্তানের গোলবাহার আল বেরোনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা স্নাতক, আমানি এখন দিল্লিতেই পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেছেন। তার কথায় “আমি এই বছরের জুলাইয়ে অক্ষয় কুমারের একটি ছবিতেও অভিনয় করেছি। তাতেও আমি একজন ব্রিটিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। আমার এক বন্ধু আমাকে এই কাজের সুযোগ করে দিয়েছে”।আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, “আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, আফগান দূতাবাস বন্ধ হয়ে গেছে, আমাদের পরিচয় প্রমাণ করার জন্য আমাদের কাছে কোন ভারতীয় কাগজপত্র নেই যার কারণে প্রতিনয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের”।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য যারা তার সঙ্গে সেই সময় IMA দেরাদুন থেকে পাশ করেছে তারা এখন ক্যাপ্টেন পদাধিকারী। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমার পরিবার এখনও আফগানিস্তানে আছে। আমার বাবা মারা গেছেন। আমার মা, দুই ভাই এবং এক বোন সেখানে থাকেন,”। তার দেশের অবস্থার কারণে এখনই ফিরে যেতে চান না।কর্নেল শাহি বলেন, এরকম অনেক আফগান সেনা কর্মকর্তা মরিয়া হয়ে চাকরি খুঁজছেন। “তারা শুধু প্রশিক্ষিত সেনা কর্মীই নয়, এমন অফিসারও যারা সেনাবাহিনীর গোটা ইউনিটের নেতৃত্ব দিতে পারে,”।