নানা ভাষাভাষির দেশ ভারত। রয়েছে একাধিক সরকারি ভাষা। এই বৈচিত্রই দেশের ঐক্যের ভিত্তি বলে মনে করা হয়। কিন্তু, কেন্দ্রের শাসকূল 'এক দেশ-এক ভাষা'র পক্ষে। হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করতে আগেই সোচ্চার ছিল বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি ছিল যে, দেশে এমন একটি সর্বজনীন ভাষার প্রয়োজন যা আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের পরিচিতির ছাপ রেখে যায়। শাহ মনে করেন, হিন্দির ক্ষমতা আছে দেশকে এক সূত্রে ঐক্যবদ্ধ করার। যার জোরাল প্রতিবাদ হয়েছিল। কিন্তু, নিজের দাবি থেকে সরেননি প্রধানমন্ত্রী মোদীর ডেপুটি। উল্টে, বৃহস্পতিবার ফের একবার হিন্দির পক্ষেই ব্যাটিং করলেন শাহ। তাঁর পরামর্শ, 'দেশের বিভিন্ন প্রদেশের ভিন্ন ভাষাভাষির মানুষের ইংরেজিতে নয়, উচিত হিন্দিতে কথা বলা।'
সংসদীয় সরকারি ভাষা কমিটির ৩৭তম বৈঠকে বলেছেন যে, 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, সরকার পরিচালনা হবে সরকারী ভাষাতেই, যা অবশ্যই হিন্দির গুরুত্ব বাড়িয়ে দেবে। এখন সময় এসেছে সরকারি ভাষাকে দেশের ঐক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত করার। যখন বিভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন ভাষাভাষির নাগরিকরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করেন, তখন তা ভারতের ভাষাই হওয়া উচিত।'
কোনও আঞ্চলিক ভাষা নয়, ইংরেজির বিকল্প হিন্দি হওয়া উচিত বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার শব্দ গ্রহণ করে হিন্দিকে আরও নমনীয় করে তোলার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
অমিত শাহ সরকারি ভাষা কমিটির চেয়ারপার্সন এবং বিজেডির বি মাহতাব এই কমিটির ভাইস চেয়ারপার্সন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হিন্দির প্রাথমিক জ্ঞান দেওয়ার এবং হিন্দি শিক্ষার পরীক্ষায় আরও মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অনুসারে, অমিত শাহ কমিটির সদস্যদের জানিয়েছেন যে, মন্ত্রিসভার ৭০ শতাংশ কাজ এখন হিন্দিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে। উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যে ২২ হাজার হিন্দি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এবং ওই অঞ্চলের নয়'টি উপজাতি সম্প্রদায় তাদের উপভাষার লিপিগুলিকে দেবনাগরীতে রূপান্তরিত করেছে।
এই সমস্ত রাজ্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি বাধ্যতামূলক করতে মত দিয়েছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।
শাহ ধারাবাহিকভাবে সরকারি কাজ এবং হিন্দির বৃহত্তর ব্যবহারের জন্য চাপ দিচ্ছেন এবং বলেছেন যে ভারতের সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ মূলত ভাষার কারণেই সুরক্ষিত রয়েছে।
২০১৯ সালে হিন্দি দিবস উপলক্ষে ভাষাণে অনিত শাহ বলেছিলেন যে, 'ভারত নানা ভাষার দেশ, এবং প্রতিটি ভাষারই নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে এমন একটি সর্বজনীন ভাষার প্রয়োজন যা ভারতের পরিচিতি হয়ে উঠবে। আজ যদি এমন একটিও ভাষা থেকে থাকে, যা এক সূত্রে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, তা হলো হিন্দি, যা কিনা ভারতে সবচেয়ে বেশি বলা এবং বোঝা হয়।'
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবির প্রতিবাদকরেছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিআইএমের তরফে শাহর দাবিকে, ভারতীয় বৈচিত্রের মূলে আঘাত বলে জানানো হয়। কংগ্রেস নেতা রাজীব গৌড়া বিজেপিকে ভারতীয় সংবিধানের ২৯ ধারা স্মরণ করিয়েছিলেন, জানিয়েছিলেন সংবিধান দেশের বহু ভাষাকে সম্মান জানিয়েছে। একপর অবশ্য সেভাবে হিন্দির আরোপ নিয়ে শাহকে মাতামাতি করতে দেখা যায়নি। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, হিন্দি অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষার সাথে প্রতিযোগিতা করছে না, কেবল পরিপূরক হওয়ার চেষ্টা করছে।
Read in English