ইজরায়েলের এনএসও সংস্থার তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যারকে কাজে লাগিয়ে মোদী সরকারের দুই মন্ত্রী, বিরোধী নেতা-নেত্রী, সাংবিধানিক পদে কর্তব্যরত ব্যক্তি, একাধিক সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী সহ প্রায় ৩০০ জন ভারতীয়র মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাদল অধিবেশনের আগে যাকে কেন্দ্র করে ঝড় উঠেছে দেশের রাজনীতিতে। ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ ঘিরে সোমবার সংসদে শাসক-বিরোধী ঝড় উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও যেসব দেশকে পেগাসাস বেচেছিল, তাদের তথ্যভাণ্ডার থেকেই প্রায় ৫০ হাজার ফোন নম্বর ফাঁস হয়ে যায়। তার মধ্যেই এ দেশের ৩০০-র বেশি নম্বর রয়েছে। প্যারিসের অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ‘ফরবিডেন স্টোরিজ’ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই তথ্যভাণ্ডার প্রথমে হাতেপায়। তারপর তারা এই তথ্যভাণ্ডার বিভিন্ন দেশের ১৬টি সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেয়। ভারতে ‘দ্য ওয়্যার’ নামের ওয়েব পোর্টাল এই তথ্যভাণ্ডার হাতে পেয়েছিল। এই ১৬টি সংবাদমাধ্যম মিলে ‘পেগাসাস প্রোজেক্ট’ নামের তদন্ত চালায়। ফোননম্বরগুলোর ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়। তাতেই ৩৭টি ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার থাকার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। যার মধ্যে ১০টি ভারতের।
আড়ি পাতার নির্দেশ কে দিয়েছিল? বিরোধীদের অভিযোগের তির মোদী সরকারের দিকে। ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও আগেই জানিয়েছিল, বিভিন্ন দেশের সরকারকেই শুধু পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাই এই স্পাইওয়্যার কাজে লাগিয়ে ফোনে আড়ি পেতে থাকে। কিন্তু একক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমতি বাধ্যতামূলক। তাহলে কি মোদী সরকারই নিজের মন্ত্রীদের ফোন আড়ি পাতার আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছিল? এই প্রশ্ন তুলছে বিরোধিরা।
যদিও আড়িপাতার অভিযোগ নস্যাৎ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে যে, 'আড়ি পাতা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। আগেও হোয়াটসঅ্যাপ এদেশে পেগাসাস স্পাইওয়্যারকে কাজে লাগিয়েছে বলে অভিযোগ ফঠেছিল। তবে তার সারবক্তব্য ছিল না, সুপ্রিম কোর্টে হোয়াটসঅ্যাপ সহ মামলার সব পক্ষ অভইযোগ খারিজ করেছে। এই সংবাদ প্রতিবেদনটিও ভারতীয় গণতন্ত্র এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করার চেষ্টা এবং সম্পূর্ণটাই অতিরঞ্জিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা বলে মনে হয়।'
এর আগে ২০১৯ সালে ভারতীয় সাংবাদিক, অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মীদের লক্ষ্য করে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছিল ফেসবুক মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সান ফ্রান্সিসকোয় মার্কিন আদালতে দায়ের করা একটি মামলাতে হোয়াটসঅ্যাপ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। জানা যায় যে, প্রায় ১৪০০ ভারতীয়র ফোনে আড়ি পেতেছিল হোয়াটস্যাপ।
পেগাসাস কী?
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, পেগাসাস যদি একবার কারুর ফোনে প্রবেশের পথ করতে পারে, তাহলে ওই ফোন ব্যবহারকারীর অগোচরে সে ফোনটিকে ২৪ ঘণ্টার এক নজরদারির যন্ত্রে পরিণত করবে। ফোনে যত মেসেজ আসুক বা পাঠানো হোক, পেগাসাস তা কপি করে পাঠিয়ে দিতে নির্দিষ্ট জায়গায়। ফোনে থাকা ছবির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই সফটওয়্যার ফোন কল রেকর্ড করতে পারে, এমনকি ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে গোপনে ফোন ব্যবহারকারীর ভিডিও ধারণ করতে পারে। ফোন ব্যবহারকারী হাতের কাছে ফোন রেখে কারও সঙ্গে কথা বললে পেগাসাস সেই ফোনের মাইক্রোফোনকে জাগিয়ে তুলে অজান্তেই সেই আলাপ রেকর্ড করে ফেলতে পারে। ফোন ব্যবহারকারী কোথায় আছেন, কোথায় গিয়েছিলেন, কার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, সবই পেগাসাস চিহ্নিত করার ক্ষমতা রাখে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন