কেটে গেল ১২৫ ঘন্টা তবু খোঁজ মিলল না ভারতীয় বায়ুসেনার এএন-৩২ বিমানের। সোমবার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিট নাগাদ অসমের জোরহাট থেকে অরুণাচল প্রদেশের মেচুকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল বায়ুসেনার এই বিমান। দুপুর ১টার সময় শেষবার যোগাযোগ করা যায় বিমানটির সঙ্গে। এরপরই বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইতিমধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনী একযোগে অরুণাচল প্রদেশের পাহাড় থেকে জঙ্গল চষে ফেলে তল্লাশি চালালেও খোঁজ মেলেনি বিমানটির। তবে এখনও হাল ছাড়েনি সেনাবাহিনী। স্থানীয় পুলিশ, রাজ্য সরকার, স্থানীয় মানুষদের সহায়তায় এখনও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে বায়ুসেনার।
বায়ুসেনার এএন-৩২ বিমানটিতে ৮ জন ক্রু সদস্য ও ৫ জন যাত্রী মিলিয়ে মোট ১৩জন ছিলেন। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ বিমানটির সম্ভাব্য সূত্র পাওয়ার আশায় ভারতীয় বায়ুসেনা তাঁদের হেলিকপ্টার, মালবাহী বিমান, উএভি সেন্সর, নৌবাহিনীর বিমান পি৮১ এর সাহায্যে সরকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর।
আরও পড়ুন অসমের ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ‘বিদেশি’ তকমাপ্রাপ্ত প্রাক্তন সেনাকর্মীর জামিন মঞ্জুর
বিমান অনুসন্ধান এবং উদ্ধার কার্যে জড়িত বায়ুসেনার কর্তাদের মতে, খারাপ আবহাওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ি ভূখন্ডে বিবিধ বাধা অনুসন্ধানের কাজটিকে খুব কঠিন করে তুলছে। বায়ুসেনার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে 'সাবের -৮' ইমারজেন্সি লোকেটার ট্রান্সমিটারস (ইএটিটি) বিকন, যা ক্র্যাশের সংকেত পাঠায়, সেটির ব্যাটারির স্থায়ীত্বকাল ৩৬ ঘন্টা এবং এটি সক্রিয় থাকার কোনও সম্ভাবনাও নেই এখন। এই সমস্ত রকম প্রতিকূলতা অনুসন্ধানটিকে আরও জটিল করে তুলছে। বায়ুসেনার এক আধিকারিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "দুপুর ১টার সময় শেষবার যোগাযোগ করা যায় বিমানটির সঙ্গে। সেই সূত্র ধরে অরুণাচল প্রদেশের প্রায় ১০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে সন্ধানকার্য চালনো হচ্ছে। আলং, পায়ুম এবং মেচুকা এই তিনটি এলাকা জুড়ে একটি ত্রিভুজের আকার নিয়েছে আমাদের সন্ধানক্ষেত্রটি"।
বিমানবাহিনীর আরেক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "বিমানের রুট ছিল জোরহাট থেকে আলং, সেখান থেকে পায়ুম হয়ে মেচুকাতে পৌঁছানোর কথা। নিখোঁজ বিমানটির সঙ্গে শেষ যোগাযোগ করা গেছিল আলংয়ের কিছুটা আগে। তল্লাশি অভিযানের নিয়ম মেনেই গোটা এলাকা জুড়ে সন্ধানকার্য চালানো হচ্ছে।" তাঁর কথায়, " উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাহাড়, জঙ্গল থাকায় আধুনিক বিমানে করে তল্লাশির ক্ষেত্রেও অনেকাংশে সমস্যা দেখা দেয়। দুর্ঘটনার উপর নির্ভর করে কীভাবে কোথায় বিমানের অংশগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে। দুর্গম পাহাড়ের মধ্যে বিস্তীর্ণ জঙ্গল এবং গাছেদের শামিয়ানায় কার্যত কঠিন সমস্যার মুখে পরে তল্লাশি অভিযান"। আধিকারিকদের মতে, এলাকাটিতে গ্রাম এবং জনসংখ্যা খুব কম থাকার কারণে এলাকাটিতে স্থলভাগ দিয়ে গিয়ে তল্লাশি অভিযান চালানো খুবই দুঃসাধ্যের হয়ে পড়েছে। তবু সেনার টহলদারি বাহিনীরা তাঁদের যথসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে"।
তবে নিখোঁজ বিমানের তল্লাশির ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বিমানের ইমারজেন্সি লোকেটার ট্রান্সমিটারস (ইএলটি)-কে। বায়ুসেনার পক্ষ থেকে অবশ্য ইএটি-কে নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। তাঁদের মত, এই ইএলটি সবচেয়ে বেশি ভালো কাজ করে সমতলে, তাছাড়া অরুণাচল প্রদেশের দুর্গম জায়গায় এটির কার্যকারীতাও ব্যাহত হচ্ছে। তাঁরা আরও বলেন, " ইএলটির ব্যাটারির স্থায়ীত্বকাল ৩৬ ঘন্টা থাকলেও তল্লাশি অভিযান শুরুর পর সোমবার রাত ৩টের আগে আমাদের হাতে কেবলমাত্র ৩-৪ ঘন্টা সময় ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল"। উল্লেখ্য, নতুন ইএলটি বিকনটি সিগন্যাল পাঠানো ছাড়াও বিমানটি কোন জায়গায় ক্র্যাশ করেছে সেই বিষয়ে সঠিক লোকেশনও প্রদান করে। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সেই আশাও আর দেখছেন না সেনা আধিকারিকরা।
এরমধ্যে, বায়ুসেনার তরফ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিখোঁজ বিমানের যাত্রীদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে অনুসন্ধান অভিযান পর্ব সম্পর্কে বিশদে জানানো হয়। এমনকী বায়ুসেনার পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এখনই এএন ৩২কে "মিসিং' বলতে নারাজ ভারতীয় বায়ুসেনা। তাঁদের বক্তব্য, যখন কোনও বিমান নিখোঁজ হয় সেখানে দু'ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয়- এক, পাইলটের দিকভ্রম এবং দুই, বিপর্যয়। তবে এক্ষেত্রে দুটির কোনওটিই হয়নি।
Read the full story in English