PM Modi addresses nation: আজ ফের জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদির ভাষণের নির্যাস? ৩৭০ ধারা এত দশক ধরে চালু থাকায় জম্মু কাশ্মীরের কোনও উপকার হয়নি, বঞ্চিত থেকেছেন সেখানের মানুষ। গত তিন দশকে প্রাণ গিয়েছে ৪২ হাজার মানুষের। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ৩৭০ ধারার অবলুপ্তিতে জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখের সামগ্রিক উন্নয়ন হবে, দুর্নীতিমুক্ত হবে সেখানের প্রশাসন, নির্মূল হবে পাক মদতে সন্ত্রাসবাদ। কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে হিন্দি-তামিল-তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, সমাজের সর্বস্তরে জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষ উপকৃত হবেন, বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। চল্লিশ মিনিটের ভাষণে ৩৭০ ধারা রদ করার পক্ষে জোর সওয়াল করে প্রধানমন্ত্রীর মূল বক্তব্য, এই পদক্ষেপে দেশের সঙ্গে সার্বিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক একীকরণ ঘটবে জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখের।
সম্প্রতি ৩৭০ ধারা রদ করে জম্মু-কাশ্মীরকে ভাগ করেছে মোদী সরকার। এখন থেকে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত ঘিরে সরগরম গোটা দেশ। এই প্রেক্ষিতেই হতে পারে মোদীর ভাষণ।
মঙ্গলবার ৩৭০ ধারা রদ করার অনুমোদন দেয় সংসদ, এবং পাস হয়ে যায় জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল। এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেন "এক নতুন সকাল, এক উন্নততর আগামী অপেক্ষা করছে"। এদিকে রবিবার থেকে কার্যত অচলাবস্থায় রয়েছে কাশ্মীর। ভারি সংখ্যায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।
প্রসঙ্গত, ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই বিরোধীদের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। কাশ্মীর ইস্যুতে কত কয়েকদিনে উত্তাল হয়েছে সংসদের দুই কক্ষ। ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছে বসপা, আপ, ওয়াইএসআরসিপি, বিডিএফ। কিন্তু জেডেইউ, কংগ্রেস, তৃণমূল, পিডিপি, এমডিএমকের মতো দলগুলো বিরোধিতা জানিয়েছে।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে বড় সিদ্ধান্তের আগে ভূস্বর্গকে কার্যত নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়। মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লার মতো দুই শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। কাশ্মীর নিয়ে মোদী সরকারের এহেন পদক্ষেপের বিরোধিতা জানিয়ে আসরে নেমেছে পাকিস্তানও।
জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষের প্রতি আবেগঘন আবেদন জানিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে চল্লিশ মিনিটের ভাষণ শেষ করলেন প্রধানমন্ত্রী, 'আসুন, আমরা সবাই মিলে নতুন জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখ গড়ে তুলি।'
'ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, জম্মু কাশ্মীর দেশের মাথার মুকুট, আমাদের গর্ব। সেই মুকুটের মর্যাদা সুরক্ষিত রাখতে হবে,' বললেন মোদী। আশ্বাস দিলেন, উপত্যকার অবস্থা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে। পাশাপাশি অকুন্ঠ প্রশংসা করলেন জম্মু কাশ্মীরে মোতায়েন সেনাবাহিনীর, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের। ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, "আপনাদের কাজে আমার নিজের এই বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে, চেষ্টা করলে পরিবর্তন আনা যায়, ভাল করা যায়।"
আসন্ন ঈদ পালনে যাতে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের কোনো অসুবিধে না হয় তার যাবতীয় ব্যবস্থা করবে সরকার, প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর। দেশবাসীকে জানালেন ঈদের শুভেচ্ছা।
"পাশাপাশি ফের শুরু হবে দু-তিন দশক ধরে থেমে থাকা গ্রামীণ উন্নয়নের কাজ। জম্মু কাশ্মীরে স্থাপিত হবে আইআইটি, আইআইএম। কাশ্মীর আরো একবার হয়ে উঠবে দুনিয়ার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পর্যটন কেন্দ্র। ঘুচে যাবে রাজ্যের পরিবারতন্ত্র।"
"অচিরেই নিজেদের বিধানসভা, বিধায়ক, এবং মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিতে পারবেন জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ। যদি অবস্থার উন্নতি হয়, তবে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চিরদিনের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে থাকার কোনো কারণ নেই।
"370 ধারা লাগু থাকাকালীন শিক্ষার অধিকার, পিতার সম্পত্তিতে কন্যা সন্তানের অধিকার, ন্যূনতম মজুরি আইন, এসব কিছুই প্রযোজ্য ছিল না জম্মু ও কাশ্মীরে। এবার থেকে এই অঞ্চলের সব মজদুর দেশের বাকি অংশ যা যা সুবিধা পায়, তাই পাবেন।"
"এর আগে আমরা ভাবতাম, দেশে কিছুই পাল্টাবে না। 370 ধারা সম্পর্কেও একই কথা ভাবতাম। কিন্তু আমরা দেশ হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি," বললেন মোদী। পাশাপাশি তাঁর টুইটার পেজে পোস্ট হলো এই বার্তা, যে 370 ধারার কারণে "তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখে আমাদের ভাইবোনেরা"।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেষ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন 27 মার্চ, যখন লোকসভা নির্বাচনের মুখে মিশন শক্তির অধীনে সফলভাবে একটি অ্যান্টি-স্যাটেলাইট হাতিয়ার মহাকাশে নিক্ষেপ করে ভারত। সেই মিশনের সাফল্য ঘোষনা করতেই দেশবাসীর মুখোমুখি হন মোদী।
বুধবার তাঁর মন্ত্রিসভার সতীর্থদের মোদী সাবধান করে দেন এই মর্মে, যে 370 ধারা বাতিলের বিজেপির দীর্ঘদিনের দাবি মিটে গেলেও, আসল কাজ সবে শুরু হয়েছে। অতএব বিজয়োল্লাস প্রকাশের সময় এখন নয়।