ভারত-চিন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সর্বলীয় বৈঠকের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় ভিডিও কনফারেন্সের এর মাধ্যমে এই বৈঠক হবে।
সোমবার রাতে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চিনা সেনার মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে ২০ জন সেনা কর্মীর। সংঘর্ষে একাধিক চিনা সেনাও নিহত হয়েছে বলে দাবি ভারতীয় সেনার। তবে এ প্রসঙ্গে এখনও নীরব বেজিং। প্রাথমিক ভাবে এক কর্নেল- সহ তিন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর কথা মঙ্গলবার সকালেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়। রাতে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকাকালীন গুরুতর আহত আরও ১৭ জন সেনা প্রবল ঠান্ডায় মারা গিয়েছেন। গালওয়ানে অফিসার সহ মোট ২০ জন সেনা কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে, দেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনা।
৪৫ বছর পরে ভারত-চিন সীমান্ত সংঘর্ষে সেনা মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত ভারত-চিন সীমান্ত। গালওয়ান, প্যাংগং, নাকুলা সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল দিয়ে চতিনা সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে বলে জানায় সেনা। এমনকী গালওয়ান সহ নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে বেশ কয়েকটি জায়গায় চিনারা সমরাস্ত্র ও সেনা মজুত করে। ফলে ভারতও ওইসব এলাকায় সেনা সংখ্যা বাড়ায়। ফলে যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়।
পরে উত্তেজনা প্রশমণে কূটনীতিক ও সেনা পর্যায়ে আলোচনা এগোতে থাকে। নিয়ন্ত্রণ রেখার বেশ কয়েকটি জায়াগায় দু'দেশই সেনা সরিয়ে নেয়। কিন্তু, সোমবার রাতে বিনা প্রোরচনায় চিনা সেনারা ভারতীয় বাহিনীর উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সোমবার রাতে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান ও শাইওক নদীর মোহনার কাছে যে স্থানে সংঘাত বেঁধেছে তা ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্ট বলে পরিচিত। ভারতীয় সেনার দাবি, চুক্তি অনুসারে নদির পশ্চিমে থাকার কথা ভারতীয় সেনার ও পূর্বে চিনা সেনার। মধ্যবর্তী অংশ বাফার জোন। সোমবার বাফার জোন থেকে চিনা সেনার তাঁবু সরাতে গিয়েছিল ভারতীয় বাহিনীর বিহার রেজিমেন্ট। তখনই অতর্কিতে পাথর ছুড়তে শুরু করে চিনা বাহিনী। তার পর লোহার রড, বাঁশ দিয়ে মারধর শুরু হয়। বেশ কয়েকজন সেনাকে নদিতে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। কয়েকটি দেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হলেও বাকিদের দেহের খোঁজ মেলেনি।
মঙ্গলবার সকালেই ভারতীয় সেনার তরফে বলা হয় নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষে কর্নেল বি সন্তোষ বাবু, হাবিলদার কে পাজানি ও কুন্দন ওঝার মৃত্যু হয়েছে। রাতে আরও ১৭ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত, তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় নিহত ভারতীয় জওয়ানদের মৃত্যু বেদনাদায়ক। তাঁদের বলিদান দেশ কখনও ভুলবে না বলে টুইটে শোকবার্তায় জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
গোটা ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সীমান্তে চিনা আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলো এর আগে একাধিকবার মোদী সরকারকে নিশানা করেছে। এ বিষয়ে এখনও কেন চুপ করে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? কেন লুকানোর চেষ্টা করছেন তিনি? এদিন টুইটে মোদীকে প্রশ্ন করেন রাহুল গান্ধী।
পরে ইন্দো-চিন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর টুইট করে সে কথা ঘোষণা করেন।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন