প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার সমাজে জাতপাত এবং আঞ্চলিকতার মূলোৎপাটনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানালেন। তিনি জানান, দশেরা উত্সবটি দেশের প্রতিটি মন্দের ওপর দেশপ্রেমের বিজয়কে চিহ্নিত করছে। নয়াদিল্লির দ্বারকায় দশেরার অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রামমন্দিরের কথা মনে করিয়ে দেন, তিনি বলেন, 'প্রত্যেকের সৌভাগ্য যে তাঁরা শতাব্দী ধরে অপেক্ষার পর এখন অযোধ্যায় একটি বিশাল রাম মন্দির তৈরির সাক্ষী হচ্ছেন। কত শতক পেরনোর পর প্রভু রাম নিজের মন্দিরে আসীন হবেন। কয়েক মাসের মধ্যে এই মন্দিরের কাজ শেষ হবে এবং তার মাধ্যমে জনগণের ধৈর্যের বিজয় নিশ্চিত হবে। আগামী রামনবমীতে অযোধ্যার রামলালার মন্দিরে যে সুর বাজবে তা গোটা বিশ্বে আনন্দ ছড়িয়ে দেবে।'
ভারতের সফল চন্দ্র অভিযান, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন এবং নারী সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের কথাও প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'অনেক শুভ উন্নয়নের মধ্যে এগুলোও ঘটেছে।' প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ১০টি সংকল্প গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, প্রত্যেকে অন্তত একটি দরিদ্র পরিবারকে তার আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে সহায়তা করলে দেশের অনেক অগ্রগতি ঘটবে। তিনি বলেন, 'সবাই উন্নত হলেই দেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।' এর পাশাপাশি, জল সংরক্ষণ, ডিজিটাল লেনদেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্থানীয়স্তরে অগ্রগতি, মানসম্পন্ন কাজের জন্য সোচ্চার হওয়া, অভ্যন্তরীণ পর্যটন, প্রাকৃতিক চাষ, বাজরা চাষ এবং সুস্বাস্থ্যের দিকেও তিনি দেশবাসীকে নজর রাখতে আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর এই সব বক্তব্যের মধ্যে স্বভাবতই আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে বক্তব্য খুঁজে পেয়েছেন অনেকেই। তার মধ্যে আগামী বছরই বহু প্রতীক্ষিত রামলালার মন্দির উদ্বোধন। লোকসভা নির্বাচনের জন্য হিন্দুভোটের কথা মাথায় রেখে যে ব্যাপারে জোরালো ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, বিভাজন রুখতে তিনি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা যেন আঞ্চলিক দলগুলোকে লক্ষ্য করেই। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজ রাবণদহন যেন শুধু কুশপুতুল দাহতেই সীমাবদ্ধ না-থাকে। মা ভারতীকে যে সব শক্তি জাতপাত এবং আঞ্চলিকতার নামে ভাঙতে চাইছে, তাদেরও যেন দহন হয়।'
আরও পড়ুন- ইজরায়েল-হামাস ‘যুদ্ধ’-এ রাষ্ট্রসংঘ কেন চুপচাপ, জন্মলগ্নেই লুকিয়ে রহস্য?
এর আগে গত ২ অক্টোবর, গান্ধীজয়ন্তীর দিনই নিজের মত করে জাতভিত্তিক সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ করেছে বিহারের আঞ্চলিক দলগুলোর জোট সরকার। জাতপাতের নামে ভোট ভাগ হলে হিন্দুত্ববাদীদের ভোট কমে যাবে। যার জেরে সেই সময় মধ্যপ্রদেশ থেকেই সরব হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, 'অতীতেও তাঁরা এদেশকে জাতের নামে ভাগ করেছে। ওঁরা এখনও সেই পাপ করছে। ওঁরা আগেও দুর্নীতি করেছে, এখনও করছে।' আঞ্চলিক দল না-হলেও বিহারে জোট সরকারের অন্যতম শরিক কংগ্রেস। দলের তরফে রাহুল গান্ধী আগেই জানিয়েছেন, 'কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরলে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্তদের সংখ্যা জানতে জাতভিত্তিক সমীক্ষা করবে।' এর পাশাপাশি, বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'য় তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দল রয়েছে। তাদের কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী তোপ দাগলেন বলেই মনে করছেন বিরোধীরা।